ফেডারেশন বনাম বাইচুং ভুটিয়ার তরজা এবার উচ্চগ্রামে পৌছে গেল। ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে সরাসরি অর্থ তছরুপের অভিযোগ তুললেন বাইচুং। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ভারতীয় ফুটবলকে ক্রমশ পিছিয়ে দিচ্ছেন কল্যাণ। যা শুধু ভারতীয় ফুটবলের ক্ষতি নয়, ধ্বংসের মুখে দঁাড় করিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগের সুর শোনা গেল বাইচুংয়ের মুখে।
ভারতীয় ফুটবলে বাইচুংয়ের পরিচিতি নিয়ে বলার কিছু নেই। তিনি এখনও তরুণ তুর্কিদের কাছে আইকন। সেই বাইচুং যখন কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন তখন ভাবতে হবে বইকি। প্রতিটি অভিযোগের আঙুল ছিল ফেডারেশন সভাপতির দিকেই। এশিয়া কাপে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়ে আনা, প্রচুর অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে দিলেন তিনি। কল্যাণ যে কোনওদিন ফুটবলার হিসেবে কিছুই ছিলেন না তাও জানিয়ে দেন পাহাড়ি বিছে। “ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিসিআই চুক্তিবদ্ধ হয়। বছরে তারা মোটা টাকা পেয়ে থাকে। আমাদের ফুটবলাররা সেখানে কোনও ম্যাচ খেলতে গেলে ২৫০০-৩০০০ টাকা পায়। অথচ ফেডারেশন কর্তারা সেখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। সেই কার্ড ব্যবহার করে জুতো, গাড়ি সব কেনেন। ঘন ঘন বিমানে যাতাযাতের জন্য বিশাল অর্থ খরচ হয়। কল্যাণ চৌবে নিজে বলেছিলেন অলিভার কানকে নিয়ে এসে গোলকিপার অ্যাকাডেমি গড়বেন। এখন সেই অ্যাকাডেমির অ দেখতে পাচ্ছি না।” সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন বাইচুং।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও যে তঞ্চকতা করছেন কল্যাণ, তাও জানিয়ে দেন তিনি। বাইচুং বলছিলেন, “সরকারকে মিথ্যে বলতে দ্বিধা করছে না। সকলে জানে কল্যাণ প্রশাসনের আসনে বসে কিছুই করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভর করে টিকে আছে। একজন ফুটবলার হয়ে কী করে ফুটবলারদের বিরোধিতা করে তাই বুঝে উঠতে পারছি না। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। প্লেয়ারদের ভোটাধিকার থাকা উচিত বলে বরাবর বলে এসেছি। অথচ আদালতে গিয়ে প্লেয়ারদের ভোটাধিকার বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে ফেডারেশন। কল্যাণ কখনও চায় না প্লেয়াররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। আসলে ফুটবলের উন্নতির দিকে নজর দেওয়া ওর উচিত ছিল। সেই জায়গায় ফুটবলকে কয়েক কদম পিছিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।”
এই মুহূর্তে ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। সামনে এশিয়া কাপের মূলপর্বে ওঠা ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যদিও বাইচুং জানিয়ে দিলেন, তিনি আশাবাদী। তঁার মতে, “২৪টা দলের মধ্যে ভারতের আসা উচিত। অথচ কল্যাণ যখন দায়িত্ব নিয়েছিল তখন জানিয়ে ছিল এশিয়ায় প্রথম ১০-এর মধ্যে ভারতকে নিয়ে আসবে। ভারতীয় ফুটবল ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমাদের রেজাল্ট দেখানো দরকার। সেই ফুটবলার যদি আমরা তুলে আনতে না পারি তাহলে সেটাই হবে আমাদের কাছে বড় ক্ষতি। আসলে তৃণমূল স্তরে আমাদের কোনও লক্ষ্যই নেই। তাই যা হওয়ার হয়েছে।” প্রতিটি রাজ্য সংস্থাকে ২৪ লাখ টাকা দিয়ে থাকে ফেডারেশন। বাইচুং চান সেই অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হোক। কম করে ৫০ লাখ টাকা দিলে তবেই রাজ্য সংস্থাগুলো কিছুটা কাজ করতে পারবে। বাইচুং জানিয়েছেন স্বচ্ছ প্রশাসন তুলে ধরা উচিত ফেডারেশনের। এআইএফএফের উচিত ছিল স্বচ্ছ হওয়া। কার্যকরী কমিটি থেকে বার্ষিক সভা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করা উচিত ছিল। সুপ্রিম কোর্টে মামলা লাইভ হলে কেন এসব মিটিঙ সরাসরি সম্প্রচার হবে না। ২০২৭ সালে এশিয়া কাপ আয়োজনের বিড করেছিল ফেডারেশন। যদি ভারত কোয়ালিফাই করত ভারত হয়তো সেই আয়োজনের দায়িত্ব ভার পেয়ে যেত। এখন তাও হবে বলে মনে হয়না। সৌদিতে গিয়ে কী কথা বলে এলেন কল্যাণ তা জনসমক্ষে তুলে ধরার কথা বলেছেন বাইচুং। তারজন্য তদন্ত হওয়া উচিত বলে দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন কিংবদন্তী ফুটবলার।