মধুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেল নীরজ চোপড়ার। দোহা ডায়মন্ড লিগে ৯০.২৩ মিটার থ্রো করেও হার স্বীকার করতে হয়েছিল জার্মানির জুলিয়েন ওয়েবারের কাছে। ৯১.০৬ মিটার জ্যাভলিন থ্রো করে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। প্যারিসে ঘটলো ঠিক উল্টো। ৮৮.১৬ মিটার থ্রো করে ভারতের সোনার ছেলে চলে গেলেন শীর্ষে। অন্যদিকে ওয়েবার ৮৭.৮৮ মিটার থ্রো করে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। তৃতীয় হয়েছেন ব্রাজিলের লুইজ মরিসিও দা সিলভা (৮৬.৬২ মি.)। কিন্তু দোহায় যে দুরত্বে বর্শা ছঁুড়তে পেরেছিলেন নীরজ প্যারিসের মাটিতে সেই অব্দি পৌছতে পারেননি। এটাই ভাবাচ্ছে নীরজকে। চিন্তিত নন তিনি। কেন ৯০ মিটারের ঘরে বর্শা ছঁুড়তে সক্ষম হচ্ছেন না তার পথ খঁুজে পেয়েছেন। তাই জানিয়ে দিলেন, কিছু কিছু সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে আবার সেই জায়গায় চলে যেতে পারবেন।
গত দু-বছরের মধ্যে এই প্রথম ডায়মন্ড লিগে শীর্ষ স্থান অর্জন করলেন নীরজ চোপড়া। প্রথম থ্রো-তেই তিনি ৮৮,১৬ মিটার বর্শা ছেঁাড়েন। পরেরবার আরও দুরত্ব কমে যায় (৮৫.১০ মি.)। পরের তিনটে ফাউল করে বসেন। শেষ ও চূড়ান্ত থ্রো-তে তিনি ছেঁাড়েন ৮২.৮৯ মিটার। দোহা ডায়মন্ড লিগে ৯০ মিটারের ঘরে জ্যাভলিন ছেঁাড়া সত্ত্বেও সেই জায়গায় পৌছতে পারছেন না কেন? প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নীরজ জানিয়ে দিলেন, শরীরের মূল পেশিগুলির উপর আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাছাড়া শরীরের শক্তি বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে বর্শা ছেঁাড়ার মুহূর্তে। “যে মুহূর্তে আমি বর্শা ছঁুড়ছি সেই সময় আমার শরীরের নিয়ন্ত্রণ খুব প্রয়োজন। প্র্যাকটিশের সময় এই নিয়ে এখন কাজ চলছে। তবু মানছি, আমাকে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে থ্রো করার সময় শরীরের মূল পেশীগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি খুব প্রয়োজন।” প্যারিসে থ্রো করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একথা বলেন নীরজ চোপড়া।
মূল পেশী ও শক্তি বাড়াবার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন নীরজ।
কোর পেশিগুলোর উপর কেন নজর দিতে চাইছেন তার পেছনে একটা কারণ আছে। শরীরের মূল পেশীগুলি নিচের শরীর থেকে উপরের শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই থ্রো করার দুরত্ব যেমন বাড়ে অন্যদিকে ফাউল হয়না। ধারাবাহিকতা আনার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নীরজ তাই বলছিলেন, “কিছুদিনের মধ্যে আশা করছি, ছন্দ খঁুজে পাব। ধারাবাহিকতাও চলে আসবে। সামনের কয়েকটা প্রতিযোগিতার মধ্যে তা হয়ে যাবে বলে মনে করছি।” থ্রো করার আগে রান-আপে তঁার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যাটা হচ্ছে থ্রো করার মুহূর্তে। “রান আপে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু থ্রো করার সময় ঠিকমতো টাইমিং হচ্ছে না। যখন থ্রো করি তখন বঁা দিকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি। এটা কিন্তু ভাল নয়। পরিবর্তন করতে হবে। বুকের সমান আমাকে সোজা বর্শা নিক্ষেপ করতে হবে। যে উচ্চতায় আমি বর্শা ছঁুড়ছি তারচেয়ে আরও বেশি উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। যাইহোক এসব টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে কাজ করছি।” জানালেন নীরজ।
কিংবদন্তী জ্যাভলিন থ্রোয়ার জান জেলেজনীর অধীনে এখন রয়েছেন সোনার ছেলে। চার দিনের ব্যবধানে ফের তিনি অস্ট্রাভা গোল্ডেন স্পাইক অ্যাথলেটিক্স মিটে নামবেন। ২৪ তারিখে যেহেতু তঁাকে ফের একটা প্রতিযোগিতায় নামতে হবে তাই এই কটা দিন পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে চান। সামনে আবার রয়েছে তঁার নামাঙ্কিত এনসি ক্লাসিক প্রতিযোগিতা। যা বেঙ্গালুরুতে হবে ৫ জুলাই। “২৪ জুন অস্ট্রাভাতে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নামবো। মাঝের এই কটা দিন বিশ্রামে থাকতে চাইছি। সামনে রয়েছে এনসি ক্লাসিক। সত্যি বলতে কী, এই প্রতিযোগিতা নিয়ে দারুন আগ্রহী আমি। দেশের জন্য কিছু করতে পারছি ভেবে খুব উত্তেজনা অনুভব করছি। বিশ্বের কাছে বোঝাতে পারব, ভারতীয়রা খেলাধূলোতেও সমান আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এই ইভেন্ট আরও বড় করে করার ইচ্ছে আছে। টোকিও অলিম্পিকের পর বুঝতে পারছি, জ্যাভলিন থ্রো নিয়ে অনেকে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।” নীরজ আরও যোগ করেন, বছরের শেষ দিকে টোকিওতে হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে যাতে ৯০ মিটারের ঘরে থ্রো করতে পারেন তারজন্য পরিশ্রমে ঘাটতে রাখবেন না।