ভারতীয় ড্রেসিংংরুমে বেশ কিছুদিন ধরে একটা ছবি বারবার সামনে আসছে। খেলার শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরতে সেরা ফিল্ডারের হাতে একটি পদক তুল দেওয়া হয়। বাকিরা হাততালি দিয়ে সেই সেরা ফিল্ডারকে অভিনন্দন জানান। কখনও দলের কোনও সিনিয়র ক্রিকেটারকে নিয়ে এসে সেরা ফিল্ডারের হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়। কখনও দলেরই সিনিয়র ক্রিকেটাররা সেই এক কাজ করেন। তার আগে ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপের একটি ছোট ভাষনও শোনা যায়। প্রশ্ন উঠছে, হেডিংলে টেস্ট শেষ হওয়ার পর সেই এক ছবি কি দেখতে পাওয়া যাবে! সেরা ফিল্ডারের হাতে কি এবারও পদক তুলে দেওয়া হবে!
নিয়ম মেনে তাই যদি হয়, তা হলে এবার কে হতে পারেন সেরা ফিল্ডার! ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যে দলের ম্যাচে এখনও পর্যন্ত ছটি ক্যাচ ফেলে, সেই দলের কাউকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া যায় না। গত পাঁচ বছরে ভারতীয় দল এত বাজে ফিল্ডিং করেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। ফিল্ডিং ঠিকঠাক হলে বুমরার একাই ইংল্যান্ডকে শেষ করে দিতেন। তাঁকে পাঁচ উইকেট নিয়ে ড্রেসিংরুমে পিরতে হত না। শচীন থেকে শুরু করে গাভাসকর, শাস্ত্রীরা বলছেন, ভারতীয় দলকে এত বাজে ফিল্ডিং করতে সাম্প্রতিক অতীতে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। শচীন বলছেন, হেডিংলেতে বুমরার ৯ উইকেট পাওয়া উিচত ছিল। শাস্ত্রী জানাচ্ছেন, বুমরার দাপটে কোনঠাসা ইংল্যান্ড অন্তত ভারতের প্রথম ইনিংস ৪৭১ রানের থেকে ১৫০ রান পিছিয়ে থেকে মাঠ ছাড়ত। কিন্তু কোনটাই হল না। ইংল্যান্ড দুর্বল ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে ভারতের থেকে মাত্র ৬ রানে পিছিয়ে থেকে ইনিংস শেষ করে।
যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই জসপ্রীত বুমরা এ নিয়ে কি বলছেন! তাঁর বোলিংয়ে অন্তত চারটি ক্যাচ পড়েছে। হতাশ করেছেন যশ্বসী জয়সওয়াল। তিনি দুটি ক্যাচ ফেলেছেন। দলের সেরা ফিল্ডার রবীন্দ্র জাদেজার হাত থেকেও ক্যাচ পড়েছে। এগুলি না হলে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনই ইংল্যান্ড চাপে পড়ে যেত। ইংল্যান্ড ইনিংস শেষ হওয়ার পর বুমরাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয় তাঁর বোলিংয়ে এত ক্যাচ পড়ছে দেখে কি হতাশা গ্রাস করে না। বুমরা বলেন, হতাশা আসে। মনে হয়, ইস ক্যাচটি যদি ধরতে পারত। বলতে পারেন ক্ষোভও মনে জন্মায়। তবে তা মিনিট খানেকের বেশি আমার মধ্যে থাকে না। পরের বল করার আগে এটাই ভাবি যে কেউ তো আর ইচ্ছে করে ক্যাচ ফেলেনি। ও চেষ্টা করেছে। হাতে রাখতে পারেনি। তাই এমন হয়েছে। এটা নিয়ে বেশি ভাবতে গেলে পরে নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরা যায় না। তবে অনেকদিন পর এভাবে অনেকগুলি ক্যাচ আমাদের হাত থেকে পড়ল। না হলে আমাদের ফিল্ডাররা অনেক ভাল ফিল্ডিং করে। এর পাশাপাশি বুমরা একটি ভাল খবরও জানিয়ে দিয়েছেন। বলছেন, ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় বল করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। পিঠের অস্ত্রোপচারের পর অনেকদিন মাঠের বাইরে তিনি ছিলেন। ডাক্তাররা বলেছিলেন, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের দিকে নজর রাখতে হবে। তাই হেডিংলেতে তিনি একটা স্পেলে চার থেকে পাঁচ ওভারের বেশি বল করছেন না। বুমরা বলছেন, ঠান্ডার কারনে নিজেকে কখনও কাহিল বলে মনে হচ্ছে না। এখন দেখা যাক, পরের ম্যাচগুলিতে কি হয়। এটাই ভারতীয় ড্রেসিংরুমকে চাঙ্গা করার পক্ষে যথেষ্ট। বুমরা যদি পাঁচটি টেস্ট খেলতে পারেন, তা হলে গোটা সিরিজে ইংল্যান্ড চাপের মধ্যে থাকবে। না হলে মানসিক দিক থেকে অনেক চাঙ্গা হয়ে তারা মাঠে নামবে। ফিল্ডারদের হতাশার দিনেও ভাল খবরের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন বুমরা।
হেডিংলেতে পাঁচ উইকেট নিয়ে বুমরা ধরে বিদেশের মাঠে রেকর্ডও গড়লেন। তবে আর এক প্রাক্তন দীনেশ কার্তিক বলছেন, বুমরার স্ট্রাইক রেট দেখুন। বুঝতে পারবেন নিজেকে কোন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। ওর বোলিং গড় হিংসে করার মতো। দুশো উইকেট নিয়েছে ১৯.৩৩ গড় নিয়ে। ভাবা যায়! ওর পিছনে আছে কিংবদন্তী ম্যালকম মার্শাল। ক্রিকেট বিশ্বে মার্শাল, ম্যাকগ্রা, আক্রমরা আলাদা জায়গায় নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন। বুমরা তাঁদের সঙ্গে এক সারিতে থাকবে। ভারতের সর্বকালের সেরা পেসার বললে কি বুমরার নাম চলে আসবে! আসতে পারে। ওকে বাইরে রেখে দল গড়া সম্ভব নয়।