প্রথম ইনিংসে ৪২। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৭। বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটে সব থেকে সিনিয়র ক্রিকেটার। বয়সে তো বটেই, এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাতেও। সতীর্থকে গাইড করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সব সময় হাত বাড়িয়ে দেন। কখনও অধিনায়ক শুভমান গিলকে, কখনও মেজাজি ঋষভ পন্থকে। এমন একজন ক্রিকেটার আছে বলে ভারতীয় দলকে চাপের মধ্যেও কখনও নুয়ে পড়তে দেখা যায় না।
তিনি কে এলে রাহুল। দলের প্রয়োজনে সবার হাত তুলে দেন। সে ব্যাটসম্যান রাহুল হোন, কিংবা উইকেটরক্ষক রাহুল হোন। সব ব্যাপারেই তিনি সতীর্থদের থেকে এক কদম এগিয়ে। হেডিংলে টেস্টের চতুর্থদিনের শেষে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে এসে তিনি সোজাসুজি বলে দেন যে শেষ দুবছরে জানতাম না আমার ব্যাটিং অর্ডার কোথায়! কখনও ওপেনার, কখনও মিডলঅর্ডার। কখনও পিছিয়ে যাইনি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে ভাল লাগে। তাই করে এসেছি। টিম ম্যান বললে আমি তেমনই। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে ভাল লাগে। মনে করি, এখানে নিজেকে মেলে ধরার ক্ষেত্রে আলাদা চ্যালেঞ্জ আছে। এই লড়াই আমাকে আনন্দ দেয়। তাই কখনও প্রতিবাদ করিনি। কখনও বলিনি কেন আমার জায়গা নিচের দিকে হবে। সে টেস্ট ক্রিকেট হোক বা ওয়ান ডে ক্রিকেট। দলের কথা ভেবে আমি সব জায়গায় খেলতে রাাজি।
টেস্ট ক্রিকেটের শুরু থেকে এই অদল বদল চলছে। মনে আছে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে একবার টেস্টে রাহুলকে ওপেনিং করার কথা বলা হল। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু শুরুতে ছন্দপতন। বোলারের বল ভিতরে আসছে বুঝতে না পেরে ব্যাট তুলে রাখেন। বল ভিতরে এসে রাহুলের উইকেট ভেঙ্গে দেয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দ্বিতীয় ইনিংসে। দুই ইনিংসে ব্যাট তুলে রেখে বোল্ড হওয়া দেখে প্রাক্তন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, কে এল কি ভুলে গিয়েছিল যে ওর হাতে ব্যাট আছে। সেটা ব্যবহার করল না কেন!
এসব শুরুর কথা। তারপর ধীর ধীরে এগিয়ে গিয়েছেন। জায়গা মোটামুটি সিমেন্ট করেছেন। টেস্ট দলে জায়গা পাক হওয়ার পর নিজেকে পালিশ করতে নেটে সময় দিয়েছেন। এ বছরের গোড়ায় অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসার পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যান। সেখানে মিডলঅর্ডারে দাঁড়িয়ে আলাদা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে দেখা যায়। তবে মাথায় ছিল সামনে ইংল্যান্ড সিরিজ। সেখানে ভাল খেলতে হবে। তখনও রোহিত ও বিরাট টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি। মনে হয়েছি, ইংল্যান্ডের মাঠে মিডল্অর্ডারে ব্যাট করবেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে দুই তারকা ক্রিকেটার অবসর নেওয়ায় রাহুল নিশ্চিত হয়ে যান সামনের সিরিজে নিজেকে আলাদাভাবে প্রমান করতে হবে। রোহিত ও বিরাট যে জায়গা ফাঁকা রেখে গিয়েছেন, সেটি তিনি ভরাট করবেন। তাই টেস্টের প্রস্তুতি চলছিল। আইপিএলের মাঝে এ নিয়ে ভেবেছেন। আইপিএল শেষ হওয়ার পর আবার নিজেকে মাজাঘষা করার জন্য নেটে বাড়তি সময় দিয়েছেন। এখন তিনি পরিনত। তাই দরকার পড়ে না কেউ এসে তাঁকে আলাদা করে বুঝিয়ে দিক। নিজেরটা ভাল করে বুঝে প্র্যাকটিসে সময় দেন। ইংল্যান্ডের পরিস্থিতি, পরিবেশ অজানা নয়। ব্রিটিশদের ডেরায় দুটি সেঞ্চুরি আছে। তবু আর একবার নিজেকে দেখে নেওয়ার জন্য তিনি বোর্ডকে জানিয়ে দেন ভারতীয় এ দলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলতে চান। বোর্ড কর্তারা রাহুলের কথা মেনে নিলেন। তিনি গেলেন। সেঞ্চুরি করলেন। বুঝে গেলেন, এবারও কিছু একটা করে
দেখাতে পারবেন।
সোমবার রাহুলকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিক বলছিলেন, আমি দেখেছি ঘরের মাঠে রাহুলের পরিশ্রম। এখন ও অনেক পরিনত। মার্চে মেয়ের বাবা হয়েছে। তাই এই রাহুলকে আলাদা করে কিছু বোঝাবার দরকার পড়ে না। শুধু নেটে নেমে নিজেকে ঘষে মেজে নেওয়া। সেটাই করেছে। সময় দিয়েছে বলে ফলও হাতেনাতে পাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে রাহুলের ৪২ রানের ইনিংসে এক পরিনত ক্রিকেটারের ছাপ ছিল। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সেঞ্চুরি করবে। হয়নি। কিন্তু দেরি হল না। তিনদিনের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছে গেল রাহুল। কোন বল কীভাবে খেলতে হবে তা সবই জানা। তাই গুডলেংথ বল ডিফেন্স করেছে। কারন এখানে বল কিছুটা দেরিতে মুভ করে। আবার একটু শর্ট পেলে স্ট্রোক করেছে। অফস্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরে বল পড়লে ব্যাট তুলে জায়গা করে দিয়েছে। অফস্ট্যাম্প কোথায় এটা জানা একজন বড় ব্যাটসম্যানের উদাহরন। রাহুল সেটি ঠিকভাবে করেছে বলে বড় রান করতে পেরেছে। আশা করি এই সিরিজে আরও অনেক রান করবে। আমাদের কাজ শুধু অপেক্ষা করা।