ছেলেদের ফুটবল দল আগেই ছিল। গত কয়েকবছর ধরে ছেলেদের দল কলকাতা ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এবার সেই জায়গায় মেয়েদের দল নিয়ে আসতে চলেছে আদিত্য বিড়লা গ্রুপ। তবে অন্যান্য দলের মতো মহিলা ফুটবলার বাছাই করে দলগঠন করছে আদিত্য গ্রুপ তা নয়। বরং গ্রামোন্নয়নের পাশাপাশি নারী শক্তিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে এগোতে চায় ্সুপরিচিত আদিত্য গ্রুপ।
গত কয়েক বছর ধরে রেনবো দল কলকাতা ময়দানে খেলছে। আদিত্য গ্রুপের পরিচালনায় রেনবো দল এই মুহূর্তে কলকাতা লিগে সাড়া জাগানো দল। শুধু পড়াশোনার জগতে নয়, খেলাধূলোর পরিমন্ডলের মধ্যে নিজেদের বড় করে তুলে ধরতে চায় আদিত্য গ্রুপ। তাই ছেলেদের ফুটবল দল গঠনের পাশাপাশি হাত দিয়েছে মেয়েদের দলগঠনেও। তারজন্য আদিত্য গ্রুপ বেছে নিয়েছে এমন একটা অঞ্চল যেখানে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয়। বরং শিক্ষা জগতে অন্ধকারের পাশাপাশি আর্থিক দিক দিয়ে সম্পূর্ন বিধ্বস্ত এইসব অঞ্চলের লোকজন। সেইসব অঞ্চলের জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার সাথে আদিত্য গ্রুপ নজর দিয়েছে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো। সেইজন্য পশ্চিম বর্ধমান ও পুরুলিয়া জেলার জনপ্রিয় শিল্প শহর আসানসোলের লাগোয়া চার-পঁাচটা গ্রামকে বলতে গেলে অধিগ্রহণ করেছে আদিত্য গ্রুপ। অপুষ্টি-অনাহারে পিছিয়ে পড়া সেইসব গ্রামে শিক্ষা বর্হিভূত নানান ধরনের কার্যকলাপ যেমন খাবার, খেলাধূলোও তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চলেছে এই সংস্থা।
মেয়েদের ফুটবল দলের জার্সি উদ্বোধনে রেনবো কোচ দেবজিত ঘোষ-সহ আরও অনেকে।
আগে এই ধরনের গ্রামগুলি থেকে চার-পাঁচজন মেয়েকে দেখা যেত ফুটবল খেলতে। এখন সেই জায়গায় সংখ্যাটা গিয়ে দঁাড়িয়েছে প্রায় ৭০-এর বেশি। সংস্থার লক্ষ্য হল, এইসব মেয়েদের নিয়ে একটা মহিলা ফুটবল দল গড়া। যারা কন্যাশ্রী কাপে যেমন খেলবে। আবার মেয়েদের আই লিগে যাতে খেলা যায় তারজন্য চেষ্টা চালাবে। ইতিমধ্যে ৭০জন মহিলা ফুটবলারকে কোচিং করানোর জন্য তিনজন কোচ নিয়োগ করা হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৮ বছরের মেয়েরা ইতিমধ্যে প্র্যাকটিশও শুরু করেছেন আসানসোলের কাল্লায়। সেখানেই পরিকাঠামো তৈরি করে সেইসব মেয়েদের নিয়ে এসে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া চালু করেছেন কোচরা। তবে এখানেই থেমে থাকতে রাজি নয় আদিত্য গ্রুপ। আরও ঠিক হয়েছি, কিছুদিনের মধ্যে এইসব মেয়েদের নিয়ে আবাসিক ক্যাম্প চালু করা হবে। ছেলেদের মতো সেই ক্যাম্পে মেয়েরা থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেবে। মূল উদ্দেশ্য একটাই, মেয়েরা পেশাদারী রাস্তা খঁুজে নিক। যাতে সামাজিক পঙ্কিল আবর্তের মধ্যে পড়ে না হারিয়ে যায়। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “বুঝতেই পারছেন, পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে মেয়েদের নিয়ে এসে খেলার মাঠে নামানো কতটা কঠিন। আমাদেরও সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে একসময় যেতে হয়েছিল। এইসব গ্রামে আগে ১২-১৩ বছরের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। তারা জীবনের মানে খঁুজে পাওয়ার আগেই ঢুকে পড়ে সংসারের আবর্তে। সেই জায়গা থেকে ৭০জনেরও বেশি মেয়েকে আমাদের প্রোজেক্টে নিয়ে আসতে পেরেছি। তারা যদি একটু দঁাড়িয়ে আর্থিক দিক দিয়ে সয়ম্বর হতে পারে তাহলে আর ভাবতে হবে না। যে উদ্দেশ্যে আমরা এগোচ্ছিলাম তাতে সফল হতে পারব।” ইতিমধ্যে এই অ্যাকাডেমি ঘুরে এসেছেন রেনবোর কোচ তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার দেবজিত ঘোষ। তিনি মহিলা ফুটবলারদের উত্্সাহ দিয়ে এসেছেন। আদিত্য গ্রুপের চেয়ারম্যান অনির্বাণ আদিত্য বলছিলেন, “আমি জীবনে প্রচুর ক্ষমতাশালী নারীদের সান্নিধ্যে এসেছি। তাই এটুকু বুঝেছি, পুরুষদের মতো নারীরাও যদি সমান ক্ষমতা সম্পন্ন না হয় তাহলে সমাজ কখনও এগোতে পারে না। প্রকৃত উন্নয়ন অসম্ভব। সেইজন্য মেয়েদের ফুটবল দলগঠনে নজর দিয়েছি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এগোতে চাই।”