বক্তা রবি শাস্ত্রী। তাঁর কোচিং জমানায় ভারতীয় দলে যে জিনিসট দেখা গিয়েছিল, তার অভাব ভীষণভাবে চোখে পড়ছে কোচ গৌতম গম্ভীরের দলে। হারার আগে হেরে যাওয়ার মানসিকতা। কাঁধ ঝুঁকে যাওয়া। এমন দল নিয়ে শুভমান গিল কতটা এগোতে পারবেন! হ্যাঁ, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হেডিংলেতে পাঁচ উইকেটে প্রথম টেস্ট হারের পর ভারতীয় দল নিয়ে বিরাট কিছু কাঁটাছেঁড়া হয়নি। গাভাসকর থেকে শুরু করে অনেক প্রাক্তন গিলদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, ওদের একটু সময় দিতে হবে। একটা নতুন দল নিয়ে ভারত এবারের সফর এসেছে। প্রথম টেস্ট হারলেও খুব যে খারাপ খেলেছে তা বলা যাবে না। পাঁচটি সেঞ্চুরি, দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮৩৬ রান তুলে গিলরা ম্যাচ হেরেছেন। তাই সমালোচনার তীর তাঁদে দিকে ছুটে যায়নি। কিন্তু এটা কতদিন। ম্যাচের রেজাল্টে বদল না এলে এই প্রাক্তনরা ছিঁড়ে খাবে। তখন পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না গম্ভীর। নতুন দলের কথা কেউ শুনতে চাইবেন না।
এই দলে তারকা ক্রিকেটার বলতে একমাত্র জসপ্রীত বুমরা আছেন। তবে তাঁকে কখনও কলার তুলে চলতে দেখা যায় ন। জাদেজাকে আবার তারকার দলে রাখা হয় না। বাকিরা সেই জায়গায় এখনও নিজেদের নিয়ে যেতে পারেননি। তা হলে! গম্ভীর এটাই চেয়েছিলেন। নিজে রাজ করে যাবেন। ড্রেসিংরুমে বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে তারকা ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে মুশকিলেন পড়তে হবে। রোহিত ও বিরাটকে ছেঁটে ফেলার পর তিনি নিজেকে সামনে রেখে দল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছেন। তারই খেসারত দিতে হল প্রথম টেস্টে পাঁচ উইকেটে হেরে।
রবি কী বলছেন! বিরাটের ফ্যান রবি বলছেন, এই দলের মধ্যে আগ্রাসন দেখা গেল না। বিরাট থাকলে যে জিনিস প্রতি ম্যাচে দেখতাম, তা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। বিরাট যে প্রতি ম্যাচে রান করত তা বলছি না। কিন্তু রান না পেলেও দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করত। বোলারদের মধ্যে বাড়তি অক্সিজেন ঢুকিয়ে দিত। সতীর্থদের মানসিক দিক থেকে উদ্ধুদ্ধ করত। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ঘাড়ে উঠে পড়া ট্যাকটিস সতীর্থদের শিখিয়ে দিত। এসবই বিরাট জমানায় দেখা যেত। ওর অধিনায়কত্বের মধ্যে জাভেদ মিঁয়াদাদকে দেখা যেত। জাভেদ শুধু ব্যাট করার সময়ই নয়, ফিল্ডিং করার সময় ব্যাটসম্যানদের নানাভাবে উত্যক্ত করে চাপে ফেলার চেষ্টা করত। তারপর বিরাটের মধ্যে সেটা দেখতে পাই। কিন্তু এখন সে সব কোথায়! অন্তত, হেডিংলেতে সেটার বড় অভাব চোখে পড়ল।
প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস ক্রিকেটারদের প্রথম শিখিয়েছিলেন সৌরভ। তারপর দেখা গিয়েছিল বিরাটের মধ্যে। তাঁর এই ইমেজ পছন্দ করতেন খেলা দেখতে আসা ক্রিকেটপ্রেমীরা। তিনবছর আগে ইংল্যান্ডের মাঠে ভারত একসময় সিরিজে ২-১ এগিয়েছিল। তারপর বার্মিংহামে শেষ টেস্ট খেলা হয়নি। ক্রিকেটাররা দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে আসার পর অনেক কিছুর বদল হয় ভারতীয় দলে। সেবার সিরিজে রাহুল, রোহিতরা সেঞ্চুরি করেছিলেন। বিরাট বড় রান না পেলেও দলকে দারুনভাবে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর শরীরীভাষা গোটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। তাই ইংল্যান্ড ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। অনেকদিন পর বার্মিংহামে শেষ টেস্ট খেলতে যায় ভারত। রোহিত ছিলেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়ে দিয়েছিল, শেষ টেস্টে বিরাটকে অধিনায়ক করা হোক। কিন্তু বোর্ড রাজি হয় না। অধিনায়ক হয়ে যান বুমরা। কিন্তু সেই টেস্টে ভারত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ইনিংসে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনে ইংল্যান্ড।
অনেক সময় দলে অনেক ঘাটতি দেখা যায়। কিন্তু দলকে পজিটিভ মুডে রাখা কঠিন নয়। সেই কাজটা অধিনায়ককে করতে হয়। সিরিজ শুরুর আগে অনেকে বলেছিলেন, বিরাট ও রোহিতের মিশেল অধিনায়ক শুভমানের মধ্যে আছে। কিন্তু কোথায়! তার ছবি একবারও দেখা গেল না। অধিনায়কের কাজ শুধু ব্যাটিং বা বোলিং করা নয়, দলকে চার্জ করার রিমোট হাতে থাকা দরকার। সেটা শুভমানকে করতে হবে। না হলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। ম্যাচে যত ভাল ব্যাটিং বা বোলিং হোক না কেন, একটা সময় দল নুয়ে পড়বে। যেমন নুয়ে পড়ে হেডিংলেতে।