পার্থ আচার্য
ডুরান্ড কাপে মোহনবাগানের খেলা উচিত বলে জানিয়ে দিলেন, জোস রেমিরেজ ব্যারেটো। মোহনবাগানের ঘরের ছেলে হিসেবে পরিচিত ব্যারেটো মনে করছেন, ডুরান্ড কাপের মতো খেলায় যোগ না দেওয়া মোহনবাগানের পক্ষে মানায় না। তেমন হলে তিনি চাইছেন, ঘরোয়া লিগে যে জুনিয়র দল খেলছে তারাই খেলুক। তবু ডুরান্ড কাপ থেকে মোহনবাগানের সরে যাওয়া ঠিক হবে না। “আমি সবসময় চাইবো মোহনবাগান যেন ডুরান্ড কাপ খেলে। এমনিতেই প্রতিযোগিতা হবে এখানে। তার উপর সভ্য-সমর্থকরা চায় তাদের প্রিয় দল প্রতিটি টুর্নামেন্টে খেলুক। সেখানে ডুরান্ড কাপ থেকে সরে যাওয়ার কোনও মানে হয়না। আইএসএলের অন্যান্য দলগুলোর না খেলা আর মোহনবাগানের সরে দঁাড়ানোর মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্যের জেরে বলতে পারি, মোহনবাগানের খেলা উচিত।” ব্যারেটো মানছেন, ফেডারেশনের বর্তমান ডামাডোলের কারণে মোহনবাগান খেলতে চাইছে না। শুধু মোহনবাগান নয়, বেশ কিছু আইএসএল দল সরে দঁাড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবু ব্যারেটো জানিয়ে দিলেন, “জানি এই সমস্যা সত্যি দলগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। আইএসএল না হলে বা কবে হবে না জানালে ক্লাবগুলো কীভাবে দলগঠনে নজর দেবে। তেমন হলে মোহনবাগান জুনিয়র দলকে নিয়ে খেলুক। যারা ঘরোয়া লিগে খেলছে তাদের নামিয়ে দিক। তাতে যদি ভাল কিছু হয় ঠিক আছে। নাহলেও ক্ষতি নেই। সমর্থকরা অন্তত প্রিয় দলের খেলা দেখতে মাঠে আসবে।”
ছেলে জনকে নিয়ে লাঞ্চে বসেছেন ব্যারেটো।
ব্যারেটো চান ভবিষ্যতে তঁার ছেলে জনও যেন ভারতে খেলেন। এখন ব্যারেটোর ছেলের বয়স ১৬। কথা বলার সময় ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলছিলেন, “পোর্তো আলেগ্রের একটা অ্যাকাডেমিতে খেলছে। এই মুহূর্তে ভারতে খেলতে এসে তেমন সুবিধে করতে পারবে না। বয়স বাড়ার সাথে পরিপূর্ণতা লাভ করুক। তারপর চাইবো ভারতে এসে যেন খেলে। তার উপর মোহনবাগানে খেলতে পারলে নিজেকে গর্বিত বলে মনে করব। তখন আনন্দের শেষ থাকবে না।” আক্রমণ ভাগে বাবার মতো খেলার দিকে ঝঁুকেছেন জন। যদিও এই মুহূর্তে তিনি উইঙ্গারে খেলেন।
একের পর এক ম্যাচ হেরে চলেছে ভারতীয় সিনিয়র দল। শুধু তাই নয়, বর্তমান কোচ মানোলো মার্কেসকে নিয়ে ভারতীয় ফুটবল মহলে সমালোচনার শেষ নেই। ডামাডোল অবস্থা ফেডারেশনের। সব মিলিয়ে ভারতীয় ফুটবল চলে গিয়েছে যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরে। ব্যারেটোকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়ে দেন, প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললে ভারতীয় দল নিজেদের ভালভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হবে না। “প্রচুর ম্যাচ খেলতে হবে জাতীয় দলকে। তাহলেই নিজেদের দুর্বলতা খঁুজে পাবে। তবে নিম্নমানের দলগুলোর সঙ্গে খেললে হবে না। খেলতে হবে ভারতীয় মানের চেয়ে যারা সামান্য হলেও এগিয়ে। তাহলেই আন্তর্জাতিক স্তরে শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে ভারত চ্যালেঞ্জ ছঁুড়ে দিতে সক্ষম হবে।” বর্তমান তিনি ভারতে রয়েছেন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ইয়ং চ্যাম্পসে কোচ হিসেবে। ব্রাজিলে কিছুদিনের জন্য চলে যাচ্ছেন। তার আগে কলকাতায় বসে ব্যারেটো বলছিলেন, “সিনিয়র দল নির্বাচনও সঠিক হচ্ছে বলে মনে হয়না। আইএসএল খেলা ছেলেদের নিয়ে কেবলমাত্র দলগঠন হয়। বলতে পারি আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিসনে খেলা বেশ কিছু ছেলে আছে যারা বেশ ভালো। অথচ তাদের দলেই ডাকা হয়না।”
মোহনবাগানের ঘরের ছেলে মনে করেন না, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বা পার্থ জিন্দালদের ফেডারেশনে বসালে ভারতীয় ফুটবলের চাকা গড়গড়িয়ে চলতে থাকবে। তারজন্য আগে দরকার এইসব শিল্পপতিদের ভারতীয় ফুটবল নিয়ে ভালোবাসা। আবেগ না থাকলে কখনও ফেডারেশন চালানো সম্ভব নয়। একটা দল আর ফেডারেশন পরিচালনার মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। “মানছি, আইএসএল খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা সবচেয়ে সফল মালিক। মোহনবাগানের প্রতি তঁার আবেগও আছে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের বর্তমান ফলাফল তার বড় দৃষ্টান্ত। তবে মানতে হবে, একটা ক্লাব পরিচালনা করা আর ফেডারেশন চালিত করার মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। সেখানে গিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কারা সফল নাও হতে পারেন। প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে একটা ভাল দলগঠন করা যায়। শুধুমাত্র টাকা দিয়ে ভারতীয় ফুটবলকে তুলে আনা যাবে না।” সোজাসাপ্টা উত্তর ব্যারেটোর।