আত্মকথা নাকি স্মৃতি কথা! কোনটা সঠিক! যেটাই হোক, দ্য ওয়ানঃ ক্রিকেট মাই লাইফ অ্যান্ড মোর, বইটিতে অনেক অজানা কথা তুলে এনেছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান। অকপট এবং আন্তরিকতার সঙ্গে লেখা বইয়ে ক্রিকেট মাঠের ভিতরে ও বাইরের অনেক অজানা কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। অবিস্মরণীয় স্মৃতিকথায় শিখর নিজের জীবন, ক্রিকেট, সম্পর্ক, এমন নানা ঘটনা সামনে এনেছেন। কেউ কি জানতেন শিখর প্রথমে একজন উইকেটকিপার হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। দিল্লির প্রতিযোগিতমূলক ক্রিকেট পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিখর পরে একজন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন। তিনি ভারতের হয়ে ৩৪টি টেস্টে ২৩১৫ রান করেছেন। ১৬৭টি ওয়ান ডে ম্যাচে রান করেছেন ৬৭৯৩। টি২০ ক্রিকেটে ৬৮টি ম্যাচে রান ১৭৫৯।
তারপর যখন বুঝে গিয়েছেন এরপর এগিয়ে গেলে ভুল হবে। তখন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। সেই তিনি প্রথম ধোনিকে দেখার পর কি বলেছিলেন! সেটা এতদিনে কেউ জানতেন না। শিখর বইয়ে সেকথা টেনে এনেছেন।
তাঁর লেখা বইয়ের কথা শোনা যাক- যখন ভারতীয় দলে ঢোকা চেষ্টা করছিলাম, তখন মিডিয়ার এমন দাপট ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়া তখন কোথায়! ফলে ক্রিকেটারদের উপর নজরদারি বেশি ছিল না। তখন বলতে গেলে টিভি, সংবাদপত্র, কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের লোকেদের ছাড়া কাউকে দেখা যেত না। মোটামুটিভাবে বলতে গেলে আজকের মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিড় সেদিন ছিল না। আজকের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন ক্রিকেটারকে রাতারাতি হিরো থেকে জিরোতে নামিয়ে আনে। সেই সময় এতটা কঠিন ছিল না মিডিয়া। তাই গল্প তৈরি করতে বেশি সময় লাগত।
ভারতীয় ড্রেসিংরুমে তাঁর প্রবেশর কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখছেন, ২০১০ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া ভারতে আসে। তবে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ ছিল না। একটি সংক্ষিপ্ত সফর বলা যেতে পারে। তখনই আমি ভারতীয় সিনিয়র দলে খেলার জন্য ডাক পাই। মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের ঘটনা মজার। আমি তাকে বলেছিলাম, তোমাকে আমি বলিউডের হিরো বানতে চাই। লম্বা চুল, হাল্কা হাসির কারনে তাকে একজন চলচ্চিত্র নায়কের মতো দেখাচ্ছিল। আমরা অনুপ্রেরণা নিয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ অস্পষ্টভাবে বলে উঠি আমি ভারতের হয়ে খেলতে চাই। আর তোমাকে বলিউডের নায়ক বানাতে চাই। সে মাথা ঘুরিয়ে আমাকে একবার দেখে হেসে ফেলল।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি ওয়ান ডে সিরিজে সুযোগ পেলেন শিখর। কিন্তু কপাল মন্দ। তিনটির মধ্যে দুটি বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গেল। তাই কোচি মারগাঁওয়ে খেলা হল না। শিখর লিখছেন, কোচি ম্যাচের আগে আমি মানসিক দিক থেকে প্রচন্ড চাপের মধ্যে পড়ে যাই। সারা রাত ঘুম হল না। সকালে উঠে দেখি প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমার আশায় কেউ যেন জল ঢেলে দিল। সেদিন আর কিছু করার ছিল না। তারপর বিশাখাপত্তনমে দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচের আগের রাতে নিজেকে চাঙ্গা করতে একটা ঘুমের ওষুধ খাই। মনে হয়েছিল কোচিতে রাতে ঘুম হয়নি। এখানে ভাল করে ঘুমোতের পারলে অবেক চাঙ্গা হয়ে মাঠে নামতে পারব। ভারত টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠাল। ওরা ২৮৯ রান করল। জবাব দিতে মুরলি বিজয়কে সঙ্গে নিয়ে আমি মাঠে নামলাম। কিন্তু প্রথম ওভারে ম্যাকের দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে গেলাম। মুখে হাসি নিয়ে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে আসি। কিন্তু মনের ভিতর কি হচ্ছিল, সেটা শুধু আমিই জানি। এতক্ষণ ভেবে এসেছিলাম, কভার দিয়ে দারুন একটা শট খেললাম। দলের হয়ে বিশাল রান করছি, কোথায় কি। বাস্তব বড় কঠিন। সেদিন বাস্তবকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে খুব কঠিন ছিল।