আট ম্যাচের ছটিতে হার। পয়েন্ট চার। দশ দলের টুর্নামেন্টে লিগ টেবিলে একেবারে শেষে ধোনিরা। এমন অবস্থা দেখে সিএসকে ফ্যানরাও হতাশ। কোনও কিছুতেই তো খামতি ছিল না। তা হলে এমন কেন হল!
রবিবার রাতে ম্যাচ শেষে পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ধোনি বলছিলেন, কোনও কিছু ঠিকভাবে হল না। ভাল ক্রিকেট না খেললে এমনটাই হওয়ার কথা। বাকি ম্যাচগুলি দেখব। দেখা যাক কতদূর যেতে পারি। তারপর সামনের মরশুম নিয়ে ভাবব। তার আগে দেখে নিতে হবে কোথায় ভুল হচ্ছে। সেই বুঝে আগামি অকশনে দল গড়ার কথা ভাবতে হবে।
একথা শোনার পর মনে হচ্ছিল, তা হলে কি ধোনি এখনই সামনের মরশুমের কথা ভাবা শুরু করে দিয়েছেন। না হলে এখনই আগামি মরশুম নিয়ে বলছেন কেন! আসলে দল গড়ার ক্ষেত্রে ভুল ভাবনা নিয়ে এগোলে এমনই তো হওয়ার কথা। সেটা আগে ধোনিরা বোর্ডে দেখে নিন। তারপর না হয় অন্য পথে হাঁটবেন।
ধোনিদের ভুলটা ঠিক কোথায়! দলের দিকে তাকালে অনেক ভুল চোখে পড়বে। এক বেসরকারি চ্যানেলে কয়েকজন প্রাক্তন ক্রিকেটার আইপিএলের প্রিভিউ করতে বসে সিএসকে নিয়ে আশার বানী শোনতে পারেননি। গত মরশুমে মুম্বই ইন্ডিয়ন্স হতাশ করলেও কেউ কেউ তাদের নিয়ে বাজি লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ধোনির দল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেউ নাম্বার দেননি।
কারন কি! কারন আছে। সিএসকের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে মিডলঅর্ডারে ভাল ব্যটসম্যান নেই। ক্রিকেটার রিলিজ করার আগে তাঁরা এ নিয়ে কি ভেবেছিলেন! অজিঙ্কে রাহানে গত মরশুমে দেড় কোটি টাকায় খেলেছিলেন। দুবছর সিএসকেতে খেলা ক্রিকেটারকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। তিনি দারুন পারফরম্যান্স করেছেন একথা বলা যাবে না। আবার পুরোপুরি হতাশও করেননি। তিন নম্বরে নেমে কখনও ভরসা দিয়েছেন। কখনও ব্যর্থ হয়েছেন। সেই রাহানেকে ছেড়ে দেওয়ার কারন কি ছিল। ক্রিকেট কর্তারা বলেননি। রাহানের বদলে ভাল কোনও ক্রিকেটারকে দলে নিলে কথা ছিল। তাঁরা রাহানের বদলে সাড়ে চার কোটি টাকায় আনলেন রাহুল ত্রিপাঠিকে। ভাবা যায়! তিন কোটি টাকা বেশি দিয়ে যাঁকে আনা হল তিনি এই ফরম্যাটে কত রান করেছেন। তাঁকে শুরুতে অনেক ম্যাচে খেলতে দেখা গেল। কখনও তিন নম্ববে, কখনও ওপেনে রাহুলকে পাঠিয়ে সিএসকে দেখে নিতে চাইল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না। যখন দেখল কিছু হচ্ছে না, তখন বাইরে বসিয়ে দিল। এখন প্রশ্ন, রাহুলকে সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে দলে নেওয়ার ব্যাপারে কার ভোট সেদিন ছিল।
আরও আছে। বিজয় শঙ্কর একসময় জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। বাংলাদেশের মাটিতে এক সিরিজে হতাশ পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে জায়গ পাননি। যে ফাইনালে দীনেশ কার্তিক সৌম্য সরকারের শেষ বলে ছয় মেরে দলকে জিতিয়েছিলেন, সেই ম্যাচে উল্টোদিকের উইকেটে ছিলেন বিজয়। একার দায়িত্বে দলকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁর কথা সবাই ভুলেই গিয়েছিলেন। তিনি কিনা সিএসকে দলে আছেন। শুধু থাকা নয়, চার নম্বরে তাঁকে নামানো হল। যেখানে ব্যাটসম্যানের কাজ দলকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া, সেখানে বিজয় কি করেছেন। এক ম্যাচে ৬৯ রান করেছিলেন। ব্যস বলার মতো এটুকুই। তারপর তাঁকেও বাইরে বসানো হল।
এই ত্রিপাঠি, বিজয় শঙ্করদের মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে সিএসকে কি আইপিএল জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল! ধোনির মতো ধুরন্ধর ক্রিকেট মস্তিষ্ক এমন ভুল করলেন কী করে। সিএসকে মানে ধোনি। তিনি শেষ কথা বলবেন। তো দল বাছাইয়ের সময় তিনি কি অঙ্ক কষেননি। কী করে তাঁরা সাড়ে দশ কোটি টাকায় অশ্বিনকে সই করিয়েছিলেন। তিনি আইপিএল ছাড়া এই ফরম্যাটে কোথাও খেলেন না। রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে রিলিজ করে দিয়েছিল। সিএসকে দলে নিল। তাঁর বদলে চাহালকে নিলে ভাল করতেন। আইপিএলে সব থেকে বেশি উইকেট চাহালের পকেটে। তাঁর দিকে ফিরেও তাকায়নি সিএসকে। তা হলে কী করে এই দল ভাল পারফর্ম করবে। তার উপর ঋতুরাজ চোট পেয়ে বাইরে চলে যাওয়ায় তারা মুশকিলে পড়ে। যাদের শিবিরে খলিলদের মতো পেসার, তারা কখনই ম্যাচ জয়ের কথা ভাবতে পারেন না। দিল্লি খলিলকে রিলিজ করে। তাঁকে নিয়ে সিএসকে কি স্বপ্ন দেখল! বোলাররা ম্যাচ জেতায়, এই থিওরি ধোনি নিজেও একসময় বলতেন। এখন কি সেই তথ্য বিশ্বাস করেন না।
প্রথম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারাবার পর সকলে ভেবেছিলেন, শুরুতে ছন্দ পেয়ে গিয়েছেন ধোনিরা। তারপর! ব্যর্থতা সেখান থেকে শুরু হয়ে গেল। এবার এটাই দেখার লিগ টেবিলে কত নম্বরে শেষ করে সিএসকে। তারা এভাবে মার খাবে এমনটা ক্রিকেট ফ্যানরা কি ভেবেছিলেন! এর দায় কে নেবেন! ভুলে ভরা দল গড়ে বলা যায় সবাইকে তাঁরা ফাঁকিতে ফেললেন।