এবারের আইপিএলে বিস্ময় বালক বৈভব সূর্যবংশী। ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে নেমে দারুন কিছু করে ফেলেছেন তা বলা যাবে না। কিন্তু যা করেছেন, সেটাই বা কম কিসের। দুটি ম্যাচে ওপেন করতে নেমে খেলেছেন ৩২ বল। করেছেন ৫০ রান। এর মধ্যে আছে পাঁচটি ওভার বাউন্ডারি। এই ফরম্যাটে মেজাজটই আসল। সেটাই ধরে রাখতে চাইছেন ১৪ বছরের বৈভব। পাওয়ার প্লে-তে বোলারদের ঘাড়ে উঠে পড়ার লড়াইয়ে বৈভব জিতেছেন। বড় রান না এলেও চমক দিয়েচেন। তাই ভারতীয় ক্রিকেটে এখন নতুন আলোচনা তাঁকে ঘিরে।
এসবই ঠিক আছে। কিন্তু তাঁর মেজাজ ঠিক রাখতে বলছেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। সবাই বলছেন, বৈভব ভাগ্যবান। রাহুলের মতো একজন মানুষকে শুরু থেকে পাশে পেয়েছেন। ঠিক মতো নিজেকে ধরে রাখলে রাহুল তাঁর জীবন বদলে দেবেন। কোটি টাকায় অকশন থেকে কিনেছে রাজস্থান রয়্যালস। সঞ্জু স্যামসন চোট পাওয়ার পর রাহুলের চোখে বিস্ময় বালক প্রথম দলে এসেছে। সে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে হলেও অসুবিধা কোথায়! অনেকে যা পান না, বৈভব সেটা পেয়ে গিয়েছেন। এখন নিজেকে ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দুটি ম্যাচ শুধু নয়, রাজস্থান রয়্যালসের প্র্যাকটিসে নামার দিন থেকে রাহুল তাঁকে আগলে রেখেছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। এই লেভেলে ভাল ক্রিকেট খেলতে হলে কী করতে হবে। মাঠের বাইরে বসে দুটি ম্যাচ দেখেছেন। তো কী বলছেন রাহুল!
ম্যাচের পর তাঁকে নিয়ে বসেছিলেন রাহুল। বলেছেন, সব বল ছক্কা মারা যায়। এই মানসিকতাকে সরিয়ে খেলতে হবে। সে পাওয়ার প্লে-তে হোক, বা মিডলওভারে হোক। নিজেকে ধরে রাখতে হবে। বোলাররা সব সময় মারার সুযোগ দেবে না। লুজ বলের অপেক্ষায় থাকতে হবে। পেলে বড় স্ট্রোক নিতে হবে। না হলে উইকেটে পড়ে থাকতে হবে। উইকেটে গেলাম। মারলাম। আউট হয়ে ফিরে এলাম। এভাবে খেললে চলবে না। আরও বড় রান চাই। নিজেকে এই প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করাতে হলে খেলার স্টাইল বদলাতে হবে। না হলে হারিয়ে যাবে।
বয়স কম। মন দিয়ে কোচের কথা শুনেছেন বৈভব। এবার মাঠে নেমে নিজেকে কীভাবে প্রয়োগ করেন, সেটাই দেখার। রাহুলের মতো একভাবে কথা বলেছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। দুটি ম্যাচ দেখে তিনিও অবাক। বলছেন, প্রথম ম্যাচে বৈভব যেভাবে শার্দুল ঠাকুরের বল কভার দিয়ে মাঠের বাইরে ফেলে দেয় তা দেখে আমার মতো অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছে। তারপরও ওর ব্যাট থেকে এমন সব শট দেখা গিয়েছে তা চমকে দেওয়ার মতো। কিন্তু এভাবে খেললে হবে না। সবে এই লেভেলে ক্রিকেট খেলছে। অন্যরা সেভাবে বৈভবকে দেখে নি। সামনে যত এগোবে, তত খেলা কটিন হয়ে পড়বে। ওকে নিয়ে হোমওয়ার্ক করবে প্রতিপক্ষ দলগুলি। তখন মারার বল খুব বেশি দেবে না। আটকে গেলে বৈভব কী করে সেটাই দেখার। ওকে নানাভাবে বোলাররা আউট করতে চাইবে। বয়স কম বলে বোলারদের আক্রমনের মেজাজ হাল্কা হবে, তা ভেবে নিলে ভুল হবে। তাই এই সব ম্যাচের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও ভাল ককরে পালিশ করে নিতে হবে। অনেকে সুযোগ পায় না। বৈভব পেয়েছে। তাই এবার ওর কাছ থেকে আরও ভাল খেলার আশা করা যেতেই পারে।
আর এক প্রাক্তন বীরেন্দ্র শেহবাগ বলছেন, একবছর আইপিএল খেলে ফেললাম, এমন মানসিকতা নিয়ে এগোতে গেলে হারিয়ে যাবে বৈভব। ওকে লম্বা যেতে হবে। বয়স কম। কতজন ক্রিকটার এই বয়সে এমন পর্য়ায়ে খেলেছে। বিরাট কোহলি ১৯ বছর বয়সে প্রথমবার আইপিএল খেলেছে। তারপর ১৮ বছর হয়ে গেল। এখনও খেলে চলেছে। নিজেকে আরও ভালভাবে পালিশ করে রানের পিছনে ছুটে চলেছে। বৈভবকে সেভাবে এগোতে হবে। মাথায় রাখতে আরও ২০ বছর আমি এই লেভেলে ক্রিকেট খেলব। সেটা করতে পারলে শুধু আইপিএল নয়, আরও ভাল জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারবে বৈভব।