কন্যাশ্রী কাপে তোলপাড়ে ফেলে দিল শ্রীভূমি ফুটবল ক্লাব। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই পর্যুদস্ত করল বালি গ্রামাঞ্চল ক্রীড়া সমিতিকে। শ্রীভূমির হয়ে একাই ছয়টি গোল করেন রিম্পা হালদার। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারে খেলা রিম্পা এমনিতেই কলকাতা ময়দানে পরিচিত নাম। গত কয়েকবছর ধরে মেয়েদের ফুটবলে নজর কেড়ে নিয়েছেন। সেই রিম্পা শুরু থেকেই গোল দিয়ে শ্রীভূমিকে পৌছে দিলেন নিশ্চিত জয়ের দোরগড়ায়। প্রথম গোলটি রিম্পা করেন তিন মিনিটের মাথায়। সেই শুরু। তারপর থেকে এক এক করে গোল করে চলে শ্রীভূমি। যদিও প্রথমার্ধে দু-গোলের বেশি করতে পারেনি কোচ সুজাতা করের মেয়েরা। মৌসুমি মুর্মু প্রথমার্ধে একটা গোল করেন। দ্বিতীয়ার্ধে মিনিট দশেকের মধ্যে ফের পরপর দুটো গোল করে শ্রীভূমিকে অনেকটা এগিয়ে দেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল ছেড়ে দে মা কেঁদে বঁাচি অবস্থা বালি গ্রামাঞ্চলের। নদীয়ার মেয়েটিকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলাচ্ছেন সুজাতা। উইথড্রল ফরোয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে দারুন সফল তিনি। “মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে কাছ থেকে দেখছি। খুব গরিব পরিবারের মেয়ে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার থেকে উঠে এসেছে বলেই হয়তো নাছোড়বান্দা মনোভাব তার মধ্যে স্পষ্ট। কাউকে ছেড়ে দেয়না। আসলে মেয়েটি পরিশ্রমী ফুটবলার হিসেবে পরিচিত বলতে পারেন। খেলতে হবে, গোল করতে হবে, এই মনোভাব নিয়ে সবসময় খেলার চেষ্টা করে।” বলছিলেন সুজাতা। আইডব্লুএলে খেলে শ্রীভূমি। কিন্তু মেয়েদের আই লিগে খেলা ফুটবলার বর্তমান দলে নেই। তাই সুজাতা বলছিলেন, “বলতে পারেন সম্পূর্ন নতুন দল। অনেকে এদের মধ্যে হয়তো কলকাতা লিগে আগে খেলেনি। তবে যাইহোক না কেন, আমরা নতুনদের খেলিয়ে সর্বসমক্ষে তুলে আনতে চাই।” বললেন শ্রীভূমির কোচ।
কন্যাশ্রী কাপের অপর খেলায় দীপ্তি সংঘ ফুটবল ক্লাব ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে চঁাদনি স্পোর্টিং ক্লাবকে। দীপ্তির পক্ষে গোল দুটি করেন বেবি লালচঁাদমি ও মনীশা ডি। প্রথমার্ধের ১৯ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন বেবি। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করে যান মনীশা। গতবার বি গ্রুপ থেকে রানার্স হয়ে এবার উঠে এসেছে দীপ্তি। লক্ষ্য কী জানতে চাইলে দলের কর্ণধার সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “প্রথম ম্যাচ যে কোনও টুর্নামেন্টে কঠিন হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবু মেয়েরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। আসলে প্রথম ম্যাচে দলটাকে গোছানোর প্রয়োজন হয়। আমরা সেই জায়গায় অনেকটা সফল বলতে পারেন।” দীপ্তি সংঘ মহিলা ফুটবলারদের নিয়ে একটা আবাসিক শিবিরের ব্যবস্থা করেছে। বেলেঘাটায় এক জায়গায় ফুটবলারদের রাখায় দলের মধ্যে বোঝাপড়া বেশ ভালোই। তেমনই দাবি সুদেষ্ণার। আর্থিক সমস্যা আছে। তবু চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না দলের কর্মকর্তারা। “প্রথমার্ধে আমরা গোল করলেও সেভাবে খেলতে পারিনি। বিরতির পর দলটা সত্যি ভাল খেলেছে। আসলে প্রচুর সুযোগ পেয়েও তাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। নাহলে আমাদের ৭-৮ গোল করা উচিত ছিল।”লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সুদেষ্ণা জানিয়ে দিলেন, “আমরা সবসময় চেষ্টা করি তরুন প্রতিভাকে তুলে ধরা। দেখুন আমরা ইস্টবেঙ্গল বা শ্রীভূমি যেভাবে টাকা খরচ করে দল গড়ে সেভাবে আমরা পারিনা। চেষ্টা থাকে নতুন নতুন মেয়েদের তুলে ধরা। যাতে প্রত্যেকে ভাল খেলে বড় দলে যোগ দিতে পারে। সঙ্গীতা বাসফোরের মতো মেয়েরা আমাদের দলে একসময় খেলে গিয়েছে। এই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।” আসলে আইএফএ-র একসময় অন্যতম কর্খধার ছিলেন প্রয়াত দেবু মুখোপাধ্যায়। তঁার মেয়ে হলেন সুদেষ্ণা। তাই মেয়ে চাইছেন বাবার নাম যেন বাংলার ফুটবল মহলে হারিয়ে না যায়। সেইজন্য মেয়েদের দলকে উঁচুতে তুলে ধরাই হল তঁার একমাত্র লক্ষ্য।