বৈভব সূর্যবংশীর কথা প্রথম শুনিয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষণ। তিনি রাজস্থান রয়্যালসের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ক বলেছিলেন, আইপিএলে রাজস্থান দলের দায়িত্ব নিয়েছ। একটা জুনিয়র ছেলেকে
দলে নাও। ও তোমাকে ভাল সার্ভিস দেবে।
লক্ষণের কাছ থেকে বায়োডাটা নিয়ে রাহুল কথা বলেন রাজস্থান রয়্যালসের কর্তাদের সঙ্গে। তারপর বৈভব সূর্যবংশীর ডাক পড়ে ট্রায়ালে। সেখানে তাঁকে দেখে রাহুলের পছন্দ হয়। অকশনে বাজি লাগিয়ে তুলে নেওয়া হয় বৈভবকে। শুধুমাত্র রাহুলের মুখ চেয়ে রাজস্থান কর্তরা টকার থলির দিকে না তাকিয়ে দিল্লির সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন। শেষে বাজি জিতে রাহুলের হাতে বৈভবকে তুলে দেন।
সেই শুরু। প্রথম দুটি ম্যাচে দরুন কিছু করতে না পারলেও গুজরাটের বিরুদ্ধে তঁর ১০১ রানের ইনিংস রাহুলকে তৃপ্তি দেয়। তাই বৈভবের সেঞ্চুরি আসার পর নিজেকে খোলস ছেড়ে বের করে দুহাত আকাশে তুলে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এখানে লক্ষণের কৃতিত্ব কোথায়! আছে। তিনি বৈভবের উপর বাজি না লাগালে রাহুলকে বলবেন কেন! এনসিএতে হেড কোচ লক্ষণ। তিনি জুনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করেন। একসময় এই কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন রাহুল স্বয়ং। তিনি রোহিতদের দায়িত্ব নেওয়ার পর লক্ষণ সেই জায়গায় আসেন। এভাবে সব কিছু চলছিল। একবছর আগে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার জন্য দেশের ডিস্ট্রিক ক্রিকেটারদের জাকা হয়। সেই দলে ছিলেন ১৩ বছরের বৈভবও। তাঁকে রাখা হয়েছিল ভারতীয় বি দলে। একটি ম্যাচে ৩৬ রান করে রান আউট হন বৈভব। আউট হয়ে ফিরে এসে ড্রেসিংরুমের এক কোনায় বসে কাঁদছিলেন বৈভব। শুরুতে কারোর নজর পড়েনি। পরে লক্ষণ ড্রেসিংরুমে ঢুকে দেখেন বৈভব কাঁদছেন। তাঁকে কাছে ডেকে লক্ষণ বলেন, এখানে তুমি কত রান করছ তা দেখার জন্য ডাকা হয়নি। তোমার স্কিল ও ট্যালেন্ট কেমন সেটাই আমরা যাচাই করতে চাই। তাই ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। নিজেকে সামলাও। পরের ম্যাচে এই ভুল যেন না হয়।
লক্ষণের কথা শুনে নিজেকে সমলে নেন বৈভব। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলে এসে দারুন ব্যাট করেন বৈভব। ৫৮ বলে তাঁর সেঞ্চুরির কথা লক্ষণ নিজেও ভোলেননি। বুঝতে পারেন, এর মধ্যে স্পার্ক আছে। এ লম্বা রেসের ঘোড়া। নিজের পছন্দ হওয়ায় একদিন রাহুলকে ডেকে আলাদা করে কথা বলেন। আইপিএলে রাজস্থান দলে সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমান করতে পারব বলে বিশ্বাস জন্মায় লক্ষণের। তাই নিজের মতামত জানান। আর লক্ষণ বলছেন বলে রাহুল আপত্তি করেননি। একসঙ্গে দুজনে দীর্ঘদিন খেলেছেন। ভরসা ছিল বলে রাজস্থান রয়্যালসের কর্তাদের তিনি বলেন, ট্রায়ালে বৈভবকে ডকা হোক। সেখানে তিনি বৈভবকে দেখতে চেয়েছিলেন। দেখলেন। ভারতীয় ক্রিকেটের কোহিনুরকে চিনতে ভুল করেননি রাহুল। আসলে জহুরি জহর চেনে, কথাটি তো ভুল তো পারে না। লক্ষণের পর রাহুলের নজরে পড়ে যান বৈভব। এরপর অকশন। দলের সঙ্গে তিনমাস প্র্যাকটিস। তারপর আইপিএলে নেমে পড়া। তিন নম্বর ম্যাচে সেঞ্চুরি। রাহুলের আনন্দের বর্হিপ্রকাশ। এ তো তাঁরই জয়। তবে মনে রাখতে হবে রাহুলের সেই আনন্দে ভাগ বসিয়ে দিয়েছেন ভিভিএস লক্ষণও। তিনি রাহুলকে না বললে এত তাড়াতাড়ি কি বৈভব পাদপ্রদীপের আলোয় ভেসে উঠতে পারতেন।