অবিশ্বাস্য, রুদ্ধশ্বাস, লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল রোঁল্যা গারো। কেউ কি ভেবেছিলেন, একটা ম্যাচের শেষ পরিণতি এমন নাটকীয়তায় মোড়কে ঢাকা থাকবে? না, কেউ ভাবেননি। সাতবার গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফি জয়ী ম্যাটস উইল্যান্ডার ১৯৮২ সালে ৪ ঘন্টা ৪৭ মিনিট খেলে দীর্ঘ সময়ের ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন। সেই ম্যাটস উইল্যান্ডার খেলার শেষে অভিভূত হয়ে পড়েন। “মানছি, ফেডেরার, নাদাল বেশ, কয়েকটা ভাল ফাইনাল ম্যাচ খেলেছেন। তঁাদের সেই খেলা দেখে আমরা দারুন খুশিও হয়েছিলাম। কিন্তু রবিবার আলকারাজ-সিনারের যা লড়াই দেখলাম তার ধারে-কাছে কোনও খেলা আসবে না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল ওরা কী মানুষ না মানবযন্ত্র। কী গতিতে খেলা হল। এমনও যে সম্ভব তা ভাবতেই কেমন শিহরণ জাগছে। সত্যি অবিশ্বাস্য। একটা দুর্দান্ত দিন উপভোগ করলাম। আমি সাধারণত বাকরুদ্ধ হইনা। কিন্তু স্বীকার করছি, এই খেলা দেখার পর আমি পুরোপুরি বাকরুদ্ধ।” খেলার শেষে ম্যাচ প্রসঙ্গে নিজস্ব অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে একথা বলেছেন ম্যাটস উইল্যান্ডার।
ফরাসি ওপেনের ফাইনাল ঘিরে উত্তেজনা থাকবে। থাকবে হার না মানা জেদ। কিন্তু রবিবার সেই ম্যাচ শেষ হল ৫ ঘন্টা ২৯ মিনিটের পর। আলকারাজ-সিনার বুঝিয়ে দিলেন, জকোভিচদের জমানা শেষ হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা হল, গ্র্যান্ড স্লামে আলকারাজের প্রত্যাবর্তনের লড়াই জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করা। প্রথম দুটো সেট খুইয়ে বসেছেন। তৃতীয় সেট আলকারাজ জিতলেও চতুর্থ সেটে জেতার দোরগড়ায় পৌছে গিয়েছেন সিনার। সেইখান থেকে যেন ঘুরে দঁাড়াবের শপথ নিলেন আলকারাজ। বিশ্ব টেনিস মহল দেখল কীভাবে তিনটে চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট বঁাচিয়েছেন, পঞ্চম সেটে টাইব্রেকে িজতে ফের ফরাসি ওপেন কীভাবে তুলে নিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ওপেন যুগ শুরু হওয়ার পর চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট বঁাচিয়ে গ্র্যান্ড স্লাম জেতার তালিকায় তিনি হলেন তৃতীয় ব্যক্তি।
ফরাসি ওপেন জেতার পর ঘড়ির পাশে বসে চ্যাম্পিয়ন আলকারাজ।
গত আটটা গ্র্যান্ড স্লামের মধ্যে সাতটা দখল রেখেছেন এই দুজন। যারমধ্যে আলকারাজ জিতেছেন পঁাচটা গ্র্যান্ড স্লাম। শেষবার ২০২৩ সালে ইউএস ওপেন জিতেছিলেন নোভাক জকোভিচ। তারপর থেকে টেনিস মহল এই দুজনকে গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে দেখতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছেন। রবিবার খেলার ফল ছিল এরকম-৪-৬, ৬-৭ (৪-৭), ৬-৪, ৭-৬ (৭-৩), ও ৭-৬ (১০-২)। তাই সিনারকে সম্মান জানিয়ে খেলার পর আলকারাজ বলেন,“সিনারের বিরুদ্ধে প্রতিটি ম্যাচ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে এই প্রথম আমরা মুখোমুখি হলাম তাতো নয়। আশাকরি এই লড়াই আপনারা আগামী দিনেও দেখবেন। আসলে যখন আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে খেলি তখন নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি। একটা কথা মানতেই হবে, যদি আপনি গ্র্যান্ড স্লাম জিততে চান তাহলে সেরাদের হারিয়ে জিততে হবে।” সিনার সম্পর্কে আরও বলেন আলকারাজ, “তুমি সত্যি অসাধারণ মানের একজন খেলোয়াড়। তুমি অনেক দূর যাবে। অনেক গ্র্যান্ড স্লাম জিতবে। তোমার সঙ্গে ইতিহাস গড়তে পেরে সত্যি আমি গর্বিত।” তবে সিনারকে বাহবা না দিয়ে উপায় নেই। ইতালিয়ান খেলোয়াড়টি গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে প্র্যাকটিশে নামতে পারেননি। ডোপিংয়ের কারণে তঁার খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছিল। ২০২৩ সালে বেজিং ওপেনের পর ১২১টা ম্যাচের মধ্যে মাত্র দশটিতে হেরেছিলেন। এই পরাজয়ের পঁাচবার ঘটেছে আলকারাজের বিরুদ্ধে।
তবে সিনার ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্প্যানিয়ার্ড আলকারাজের সঙ্গে নোভাক জকোভিচ বা রাফায়েল নাদালের সঙ্গে তুলনা না করাই ভালো। সিনারের মতে, টেনিস খেলার ধরনটাই এখন পাল্টে গিয়েছে। যেখানে চলে এসেছে শারীরিকের উপর নির্ভর করে খেলতে হয়। “প্রতিটি লড়াইকে আলাদা চোখে দেখার চেষ্টা করি। প্রতিটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আলাদা। নোভাক বা রাফারা যখন খেলতেন তঁারা ভিন্ন স্টাইলে খেলে এসেছেন। এখন ব্যাপারটা দঁাড়িয়ে গিয়েছে শারীরিকের উপর। তাই সেই জমানার সঙ্গে বর্তমানকে তুলনা করতে পারবেন না। তবে আমি একজন ভাগ্যবান। নোভাক ও রাফার বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেয়েছি। এঁদেরকে হারাতে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়েছিল। তাই বলে আলকারাজ বা অন্যান্যদের হারাতে যে আলাদা অনুভূতি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। তবে আজকের লড়াইটা আমার কাছে বিশেষ হয়ে থাকবে। এমন একটা খেলার অংশ হতে পেরে সত্যি আমি খুশি।”