লিওনেল মেসিকে বাদ দিয়ে কীভাবে খেলা যায় তার চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন লিওনেল স্কালোনি। বুধবার কলম্বিয়ার সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা। যে খেলা আর্জেন্টিনার কাছে নিয়মরক্ষার। যেহেতু অনেক আগেই বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। তাই অনেকটা নিশ্চিন্তে এখন দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জায়গায় রয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ। সেইজন্য তিনি চাইছেন, মেসিকে বাদ দিয়ে প্রথম একাদশ গড়ে খেলতে। যাতে মেসিহীন দল প্রতিপক্ষের উপর ছাপ ফেলতে পারে। নাহলে মেসির অভাব প্রকট হয়ে উঠবে দলে। তখন মোটেই ভাল জায়গায় থাকবে না নীল-সাদা জার্সিধারীরা।
“দলটাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছি, যেখানে মেসিকে বাদ দিয়ে কিংবা মেসিকে সঙ্গে নিয়ে একইরকম স্টাইলে খেলতে পারে। আগে ব্যাপারটা এমন ছিল না। আমরা বড্ড বেশি মেসি নির্ভর হয়ে পড়েছিলাম। ফলে মেসি না খেললে দলের উপর বিশাল প্রভাব পড়তো। এখন সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছি। তাছাড়া মেসিকে সবসময় পাওয়া যাবে না। এটা ভেবেই দলগঠনের কাজে মন দিতে চাই। সেই লক্ষ্য রেখেই পরবর্তী ম্যাচগুলো খেলার চেষ্টা করব।” কলম্বিয়া ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে একথা বললেন লিওনেল স্কালোনি। কোনও সন্দেহ নেই, ২০০৫ সালে মেসি সিনিয়র দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর থেকে এক এক করে আর্জেন্টিনা ফেডারেশনের ঘরে বহু ট্রফি ক্যাবিনেটে সাজিয়ে দিয়েছেন। ১৯২টা ম্যাচ আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন মেসি। গোল করেছেন ১১২। সর্বশেষ ২০২২ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ দিয়েছেন। দিয়েছেন দুটো কোপা আমেরিকা। তাছাড়া বেজিং অলিম্পিকে ২০০৮ সালে সোনা এনে দেওয়ার প্রধান সাক্ষী ছিলেন তিনি।
মেসি এখন নিয়মিত ফুটবলার নন। ৩৭ বছর বয়সে ফিট থাকলেও মাঝে মাঝে চোট পেয়ে বসছেন। সেইজন্য মার্চে উরুগুয়ের সঙ্গে খেলা ছিল আর্জেন্টিনার। সেই ম্যাচ মেসি খেলতে পারেননি। পারেননি ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলতে। অথচ মেসি না থাকা সত্ত্বেও দুটো ম্যাচ জিতে যায় আর্জেন্টিনা। উরুগুয়েকে হারায় ১-০ আর ৪-১ ব্যবধানে ব্রাজিলকে পরাজিত করে স্কালোনির দল। এই সময়টাতেই বিশ্বকাপ যাওয়ার ভিসা জোগাড় করে ফেলে আর্জেন্টিনা। তবে গত সপ্তাহে চিলির বিপক্ষে তিনি পরিবর্ত হিসেবে খেলতে নামেন। যদিও মেসি মাঠে নামার অনেক আগেই আর্জেন্টিনা গোল পেয়ে গিয়েছিল। সুতরাং প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, মেসিহীন আর্জেন্টিনা সমান ভয়ংকর। “পরিষ্কার করে একটা কথা বলে দেওয়া ভাল, মেসিকে বাদ দিয়ে খেলার মতো জায়গায় দল পৌছে গিয়েছে। মেসি যদি না খেলে তাহলে দল একইরকম সক্রিয়।” কলম্বিয়া চাইবে, মেসিহীন আর্জেন্টিনাকে বেগ দিতে। যেহেতু গ্রুপ লিগ টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে কলম্বিয়া। তারা যদি জিতে যায় তাহলে গ্রুপ লিগে উপরের দিকে উঠে আসতে পারবে। যদি নাও ওঠে তাহলে সপ্তম স্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা। যদি কলম্বিয়া বুধবার জিতে যেতে পারে তাহলে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে তাদের ব্যবধানে বেড়ে যাবে। তখন বিশ্বকাপ যোগ্যতামানের খেলায় অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারবে কলম্বিয়া। তবে শেষবারের সাক্ষাতে কলম্বিয়ার কাছে আর্জেন্টিনা ১-২ গোলে হেরেছিল। তাই কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলার আগে একটা পরোক্ষ মাথাব্যথা হয়ে দঁাড়িয়েছে আর্জেন্টিনার। সেইজন্য চাইবে যেভাবে হোক ম্যাচটা জিতে প্রতিশোধ নিতে। যদিও কলম্বিয়া দলকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন স্কালোনি। তঁার মতে, “কলম্বিয়া নিঃসন্দেহে ভাল দল। ভাল ভাল কয়েকজন ফুটবলার দলে রয়েছেন। তাছাড়া এমন একটা স্টাইলে খেলে যেখানে আপনার পক্ষে ম্যাচ জিতে বেরিয়ে আসার কাজটা অনেক কঠিন।” স্কালোনির ধারণা, কলম্বিয়াকে হারাতে গেলে আর্জেন্টাইনদের একশো শতাংশের বেশি দিতে হবে। “দলের ফুটবলারদের সাথে কলম্বিয়া দলের সুবিধে-অসুবিধে দুটো দিক তুলে ধরেছি। ভাল ম্যাচ হবে। ম্যাচটা আমরা আর্জেন্টাইনদের সামনে খেলব। সুতরাং দর্শকদের কথা মাথায় রেখে আমাদের ভাল খেলতেই হবে। সেইজন্য আমরা চাইব দেশের জনগণকে বেশি করে ফুটবল মাঠে টেনে আনতে।” জানিয়ে দিয়েছেন স্কালোনি।