মঙ্গলবার কি ভারত পারবে হংকংকে হারাতে? কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে দঁাড়িয়েছে ভারতীয় ফুটবল মহলে। একদিকে হংকংকে হারাতে না পারলে এএফসি এশিয়ান কাপে ক্রমশ পিছিয়ে পড়বে ভারত। অন্যদিকে ভারতীয় ফুটবল বিশাল ধাক্কা খেতে বাধ্য। তাই মঙ্গলবার ভারতের কাছে জেতা ছাড়া অন্য কোনও গতি নেই। মুশকিল হল, ভারতের চেয়ে ফিফা ক্রমতালিকায় হংকং হয়তো পিছিয়ে আছে ঠিকই। কিন্তু সার্বিক বিচারে তাদেরকে এগিয়ে না রেখে উপায় নেই। কেন?
এগিয়ে রাখার পেছনে প্রভূত কারণ লুকিয়ে রয়েছে। এক, অ্যাশলে ওয়েস্টউড হংকং দলের কোচ। যিনি কিনা ভারতীয় ফুটবলকে হাতের তালুর মতো চেনেন। দীর্ঘদিন বেঙ্গালুরু এফসি দলের কোচ ছিলেন। ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হংকংকে পাল্টে ফেলতে শুরু করেছেন। যদিও শেষবার দু-দল মুখোমুখি হয়েছিল ২০২২ সালে। কলকাতায় অনুষ্ঠিত সেই খেলায় ভারত ৪-০ গোলে জিতে যায়। বৃষ্টি বিধ্বস্ত মাঠে হংকং সেভাবে দঁাড়াতে পারেনি। তাই বলে হংকংয়ের মাটিতে হংকংকে এভাবে বিধ্বস্ত করে দেবে ভারত তা না ভাবাই ভাল। ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গান তো বলেই দিয়েছেন, সেসব ম্যাচের কথা এখন ভাবলে চলবে না। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবা উচিত। তিনি যে আশঙ্কা করেছেন তার মূলে রয়েছেন অ্যাশলে ওয়েস্টউড। ঝিঙ্গানকে বলতে শোনা যায়, “মঙ্গলবার আমাদের লক্ষ্য থাকবে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া। সেইরকম প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিদেশের মাটিতে এসে সেই দেশের দলকে হারিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ নয়। তারউপর তাদের দলে এমন একজন কোচ আছেন যিনি ভারতীয় ফুটবলকে ভালমতো জানেন।” অ্যাশলে ওয়েস্টউড যে কত বড় কোচ তা অতীতে প্রমাণ করে দিয়েছেন। আফগানিস্তান দলের কোচ থাকাকালীন ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় ভারতকে হারিয়ে ছিলেন। লালিয়ানজুয়ালা ছাংতের মুখেও শোনা গিয়েছে সন্দেশের কথার পুনরাবৃত্তি। তিনিও মনে করছেন, হংকংয়ের বিপক্ষে খেলা মোটেই সহজ হবে না। “হংকংয়ের ডিফেন্স বেশ ভাল। তাছাড়া পাল্টা আক্রমণ করে খুব দ্রুত। তাদের যে কোচ আছেন তিনিও অভিজ্ঞ। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা আছে। তাই হংকংকে হারানো খুবই কঠিন হবে।” রবিবার ২৮তম জন্মদিন পালন করা ছাংতে একথা বলেন। তবু হংকংকে হারাতে গেলে তিনি মনে করছেন, পরিকল্পনা করে যেভাবে তঁারা ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তা যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে ম্যাচটা বের করে নেওয়া যাবে।
হংকং এগিয়ে থাকার মূলে আরও বড় কারণ হল, বিদেশি বংশোদ্ভুত খেলোয়াড়ের সংখ্যা প্রচুর। দলে থাকা চারজন ফরোয়ার্ড জুনিনহো, স্টেফান পেরেইরা, মিডফিল্ডার ফার্নান্দো ও ডিফেন্ডার ডুডু ব্রাজিলে জন্মগ্রহণ করেছেন। সেখানেই বড় হয়েছেন। ব্রাজিল ফুটবল ঘরানার সঙ্গে তঁারা অভ্যস্থ। আবার স্পেনে জন্ম নেওয়া ফরোয়ার্ড মানোলো ব্লেদা ও জাপানে জন্মগ্রহণ করা মিডফিল্ডার সোহগো ইচিকাওয়াও সম্প্রতি হংকংয়ের হয়ে খেলছেন। গোলরক্ষক ইয়াপ হাং ফাই দীর্ঘদিন হংকং দলের হয়ে খেলছেন। দলের বাকিরাও বেশ ভাল। হংকংয়ের বড় ক্লাবে সব খেলে থাকেন।
নব-নির্মিত কাই তাক স্টেডিয়াম। মঙ্গলবার এখানেই ভারত-হংকং ম্যাচ হবে।
মঙ্গলবার ভারতকে জিততে হলে কিছু অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে হবে। ১৯৫১ সাল থেকে দু-দেশ মুখোমুখি হয়েছে ২৫বার। তারমধ্যে ভারত জিতেছে ৯বার। ৮বার জিতেছে হংকং। বাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়েছিল। তবে হংকংয়ের মাটিতে ভারতের জয় রয়েছে মাত্র একবার। তাই ১৯৫৭ সালে। প্রীতি ম্যাচে ভারত জিতেছিল ২-১ গোলে। হংকংয়ের মাটিতে হংকংকে হারানো বেশ কঠিন। তবু ভারতের সামনে না জিতে উপায় নেই। যদি না জেতে তাহলে অনেকটা পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। যেহেতু প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে বসে আছেন সুনীল ছেত্রীরা। মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সামনে দঁাড়িয়ে হংকং। কেন? নব নির্মিত স্টেডিয়াম কাই তাক হংকং-ভারত ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হবে। এই স্টেডিয়ামের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, প্রয়োজনে স্টেডিয়ামের ছাদ ঢেকে ফেলা যায়। অতীতে যেখানে হংকং বিমানবন্দর ছিল সেখানেই গড়ে উঠেছে কাই তাক স্পোর্টস কমপ্লেক্স। সেই কমপ্লেক্সের একটা অংশ হল এই স্টেডিয়াম। তাছাড়া গত ৫৯ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার এএফসি এশিয়ান কাপে অংশ নিচ্ছে। তাই তারা চাইবে ভারতকে হারিয়ে মূলপর্বে খেলার সুযোগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে যতটা এগিয়ে যাওয়া যায়।