ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই প্রবল সমালোচনার সামনে পড়লেন জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো। যেহেতু এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করার প্রধান ব্যাক্তিটি হলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট। আসলে বায়ার্ন মিউনিখ ১০-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের ক্লাব অকল্যান্ড সিটিকে। পরিবর্ত হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেছেন জামাল মুসিয়ালা। তাতেই বেঁধেছে গন্ডগোল। ফুটবল সমালোচকরা মনে করছেন, ক্লাব বিশ্বকাপে এমন সব দলকে অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে যারা এই প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্য নয়। যেমন অকল্যান্ড সিটি।
ক্লাব বিশ্বকাপে ১০-০ গোলে জিতে জার্মানির ক্লাবটি অনন্য রেকর্ড গড়ল। রেকর্ড হয়েছে দুটি। এক, সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। দুই, একটা ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল করা। এর আগে ক্লাব বিশ্বকাপে ৬ গোলের বেশি ব্যবধানে কোনও দল জিততে পারেনি। এই রেকর্ড ছিল সৌদির আল হিলালের দখলে। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লাব আল জাজিরার বিপক্ষে তারা ৬-১ ব্যবধানে জিতেছিল। ক্লাব বিশ্বকাপে ১০ গোল দিয়ে রেকর্ড গড়েছে ঠিকই তবে জার্মানির ক্লাবটি এরচেয়েও বড় ব্যবধানে জেতার অভ্যাস রয়েছে। ১৯৭১ সালে ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে বুন্দেশলিগা ম্যাচে ১১-১ ব্যবধানে জিতেছিল বায়ার্ন। তাছাড়া ২০২১ সালে তারা আঞ্চলিক লিগ দল ব্রেমার এসভিকে হারিয়ে ছিল ১২-০ গোলে।
দশ গোলে জেতা ম্যাচ কেমন হতে পারে মনে মনে একবার কল্পনা করে নিন। সারাক্ষণ অকল্যান্ড সিটির গোল সীমানায় বল ঘোরাফেরা করেছে। অকল্যান্ড মাত্র বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে দুটো শট নিয়েছিল। যারমধ্যে লক্ষ্য ছিল একটায়। ফলে ম্যাচটা কখনও জমে ওঠেনি। বিরতির আগেই ৬-০ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানরা। বদলি হিসেবে নেমে বায়ার্নের জামাল মুসিয়ালা হ্যাটট্রিক করেছেন। বাকি দুটি করে গোল দেন কিংসলে কোম্যান, মিশেল ওলিসে ও টমাস মুলার। সাচা বোয়ে করেছেন একটা গোল। কতটা একপেশে খেলা হয়েছে শুধু গোল সংখ্যা দেখে নাও উপলব্দি করতে পারেন। তবে বল পজিশন থেকে শুরু করে গোল লক্ষ্য করে শট নেওয়া, এসব পরিসংখ্যান হিসেবে ধরলে ম্যাচে কোনও দল প্রাধান্য রেখে খেলেছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। বায়ার্নের বল দখল ছিল ৭২ শতাংশ, গোল লক্ষ্য করে শট নেয় ৩৩টি। তারমধ্যে লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল ১৭টি। যারমধ্যে গোল হয়েছে ১০। অন্যদিকে অকল্যান্ড মাত্র বায়ার্নের গোল লক্ষ্য করে শট নিতে পেরেছিল দু-বার। কোনও লক্ষ্য ভেদ করতে পারেনি তারা। শুধু তাই নয়, বল পজিশন ছিল পুরো ম্যাচে মাত্র ২৮ শতাংশ। কর্ণার পেয়েছে মাত্র দুটি।
সমালোচনার মূলে একটাই কারণ, এইসব দল কি ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্য? এইসব দল খেললেই তো যাবতীয় প্রতিযোগিতার আকর্ষণ নষ্ট হতে বাধ্য। বিশ্বের কোনও ক্লাব ক্রমতালিকায় কত নম্বরে রয়েছে তা নির্ধারিত করে অপ্টার পাওয়ার রেঙ্কিং। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেখানে বিশ্বের ৬ নম্বরে রয়েছে বায়ার্ন, সেখানে অকল্যান্ড দলটি রয়েছে ৫০৭৪তম স্থানে। শুধু তাই নয়, ইংলিশ ন্যাশনাল লিগের দল ইয়র্ক সিটির চেয়ে প্রায় ২৫০০ স্থান নিচে। সেখানেই ব্যাপারটা থেমে নেই। বায়ার্নে যেখানে কিংবদন্তীরা খেলছেন সেখানে অকল্যান্ড দলে কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন বিমার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তাছাড়া দলে নাপিত রয়েছে, ঠান্ডা পানীয়র বিক্রেতা, গাড়ির খুচরো বিক্রেতা, এইসব ছেলেদের ধরে এনে খেলতে চলে এসেছে অকল্যান্ড সিটি। তাছাড়া দলের লেফট ব্যাক ২২ বছরের নাথান লোবো হোটেলের ঘরে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়েছে। তাই সমালোচনা উঠেছে তুঙ্গে।
গোল করে উচ্ছ্বাসে মাতলেন টমাস মুলার। করে ফেললেন ২৫০তম গোল।
অকল্যান্ড দলের অন্তর্বতীকালীন কোচ ইভান ভিসেলিচ ম্যাচের পর বুঝিয়ে দিয়েছেন, পেশাদার দলের সঙ্গে যদি অপেশাদার দল মুখোমুখি হয় তাহলে তার প্রভাব খেলায় পড়তে বাধ্য। “বিশ্বের সেরা দলের বিরুদ্ধে আমরা খেললাম। এমনটা হওয়ারই ছিল। বাস্তবকে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে ফুটবলাররা এই পরিবেশে খেলতে পেরে তারা গর্বিত। তাদের কাছে এটা একটা স্বপ্নের মতো। আমরা জানতাম ম্যাচের পরিণতি কী হতে পারে। তাই এই পরাজয় নিয়ে কিছুই বলার নেই আমাদের।” উল্টোদিকে বায়ার্ন কোচ ভিনসেন্ট কম্পানি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে তঁারা উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে নারাজ। “আমরা খেলাটাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলাম। এও ঠিক এই রেজাল্ট হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বিনয়ী মনোভাব নিয়ে প্রতিযোগিতায় চলতে হবে। তবে এই ম্যাচ খেলে আমাদের ভালোই হল। পরবর্তী ম্যাচগুলো কঠিন প্রতিপক্ষদের পাব। তার আগে আমরা কোথায় দঁাড়িয়ে আছি তার একটা আভাস পেয়ে গেলাম।” বুন্দেশলিগা চ্যাম্পিয়ন দলের পরবর্তী খেলা শুক্রবার। প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্স। যাদের নিয়ে ভাবতেই হবে। “দুই মহাদেশের দুই ঐতিহ্যবাহী দল মুখোমুখি হবে শুক্রবার। বায়ার্নের কোচ হিসেবে যদি না থাকতাম তাহলেও এই খেলা দেখতে মাঠে আমাকে যেতেই হতো। এই খেলা অন্যমাত্রার হবে।” বলেন কম্পানি।