মানোলো মার্কেজ সম্পূর্ন টেকনিক্যাল কমিটিকে এড়িয়ে চলতেন। গোয়া এফসি-র কোচকে জাতীয় দলের দায়িত্বে একার সিদ্ধান্তে নিয়ে এসেছিলেন কল্যাণ চৌবে। এমন নানান অভিযোগের আঙুল ফুটবল ফেডারেশনের দিকে তুললেন বাইচুং ভুটিয়া।
হংকংকে ১৯৯৩ সালে ভারত হারিয়ে ছিল ৪-০ গোলে। অথচ এবার এএফসি এশিয়ান কাপের খেলায় সেই হংকংয়ের কাছে কিনা ১-০ গোলে হেরে বসল ভারত। অথচ ভারতের চেয়ে ফিফা ক্রমতালিকায় হংকং ২৬তম স্থানে পিছিয়ে রয়েছে। এখন এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতকে যোগ্যতা অর্জন করতে হলে সামনের চারটে ম্যাচে জিততেই হবে। যা এককথায় অসম্ভব। যেহেতু গত দুটো ম্যাচে ভারত মোটেই সুবিধে করতে পারেনি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সঙ্গে গোলশূন্য অবস্থায় খেলা শেষ করেছিল। তারপর হংকংয়ের কাছে হেরে বসেছে। তাহলে সেই দল সামনের চারটে ম্যাচ জিতে যাবে, এমন দিবাস্বপ্ন না দেখাই ভাল।
জাতীয় কোচ মানোলো মার্কেজের চাকরি যাচ্ছে, মোটামুটি নিশ্চিত। ২৯ জুন কার্যনির্বাহি কমিটির সভায় নির্ধারিত হবে মানোলোর ভবিষ্যত। স্বয়ং মানোলো জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর দায়িত্বে থাকতে রাজি নন। সুতরাং তঁাকে অপসারণ করা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। প্রশ্ন হল, ইগর স্টিমাচকে সরিয়ে যখন মানোলোকে নিয়ে আসা হল তখন কি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল? নাকি ফেডারেশন সভাপতি সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় গোয়া এফসি কোচের হাতে দায়িত্ব সঁপে দেন? গত বছরের জুনে ইগর স্টিমাচকে জাতীয় দলের কোচ থেকে অপসারিত করা হয়েছিল। তারপর নিয়ে আসা হয় মানোলো মার্কেজকে। ৮টা ম্যাচ তঁার অধীনে খেলেছে ভারতীয় দল। অবাক হতে হয়, একটা মাত্র ম্যাচ জিতেছিল ভারত। তাও আবার কিনা মালদ্বীপের সঙ্গে। সেটা ছিল ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। সুতরাং প্রতিযোগিতা মূলক সাতটা ম্যাচ তঁার অধীনে জিততে পারেনি ভারত।
কল্যাণ চৌবের নানান কার্যপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বাইচুং ভু’টিয়া।
হংকং ম্যাচ হারার জন্য পোস্টমর্টেম করতে বসে প্রাক্তন ফুটবলার তথা ভারতীয় ফুটবলের আইকন বাইচুং ভুটিয়া মনে করছেন, দলের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম বিভাজন তৈরি হয়েছে। যে বিভাজনের মধ্যে রয়ে গিয়েছেন যারা খেলছেন আর যারা খেলছেন না, তাদের মধ্যে। বাইচুং ভুটিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, খেলা দেখে তঁার মনে হয়েছে, সমন্বয়ের বড় অভাব। “যদি একটু তলিয়ে দেখা হয় তাহলে বুঝবেন, পুরো দলের মধ্যে সেই একতা ছিল না। মাঠের মধ্যে ও বাইরে একটা বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেই জায়গায় দঁাড়িয়ে একটা দল কখনও ভাল পারফর্ম করতে পারবে না।” জানিয়ে দিলেন বাইচুং। দলের খুব খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য বাইচুং ভুটিয়া ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে আসামীর কাঠগড়ায় তুলতে চান। ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তী মনে করেন, কল্যাণ চৌবের সময় এসেছে সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার। তিনি এও মনে করেন, মানোলো শীঘ্রই পদত্যাগ করতে চলেছেন। তাছাড়া টেকনিক্যাল কমিটিকে কোনওদিন মানোলো গুরুত্ব দিতে চাননি। “ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে টেকনিক্যাল কমিটিকে পাশ কাটিয়ে মানোলোকে নিয়োগ করেছিলেন। কাউকে জানতে চাওয়ার চেষ্টা করেননি। তাই যা হওয়ার হয়েছে।” বলেন বাইচুং। এভাবে কোচ নির্বাচন যে করা যায়না তা তুলে ধরে বাইচুং বলছিলেন, “কার্যনির্বাহি কমিটির সভায় আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। জানিয়ে ছিলাম, এভাবে ফেডারেশন সভাপতি সরাসরি কোচ নিয়োগ করতে পারেন না। সম্পূর্ন বেআইনি। কোচ নিয়োগ করার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সবার মতামত নেওয়া হোক। অথচ আমার কথা সেদিন কর্ণপাত করার প্রয়োজন মনে করেননি ফেডারেশন সভাপতি।” মানোলোকে কোচ হিসেবে ধর্তব্যের মধ্যে রাখতে চাইছেন না বাইচুং, তা নয়। বরং মানোলোকে কোচ হিসেবে উচ্চস্তরে রাখছেন বাইচুং। তাহলে কোথায় পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হলেন মানোলো? বাইচুং-এর উত্তর খুব সহজ, “মানোলো কোচ হিসেবে খুব খারাপ বলতে আমি রাজি নই। তবে তঁার উচিত ছিল টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসে কথা বলা। যদি কথা বলতেন তাহলে দেখা যেত কমিটির লোকজন নানান পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই পরামর্শ হয়তো দল পরিচালনার ক্ষেত্রে দারুন সাহায্য করতে পারত। অথচ তিনি টেকনিক্যাল কমিটিকে সেভাবে পাত্তাই দেননি। সম্পূর্ন এড়িয়ে গিয়েছেন।”
বাইচুং মনে করছেন, একটা সংস্থার মাথা যদি ঠিক না থাকে তাহলে কখনও কোনও কিছু ঠিক হতে পারে না। সেই কারণে তিনি টেনে আনলেন কল্যাণ চৌবেকে। ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে তঁার অভিযোগ হল, “বর্তমান ফেডারেশন সভাপতির অধীনে তিনজন সচিবের পরিবর্তন হয়েছে। একটা সংস্থার মাথা যদি টলমল করে তার প্রতিফলন সব ক্ষেত্রে ঘটতে বাধ্য।” তাছাড়া হংকং ম্যাচের জন্য পুরস্কার অর্থ ঘোষণা করা উচিত হয়নি বলে মনে করছেন বাইচুং। তঁার মনে হয়েছে, এতে হিতে বিপরীত হয়েছে দলের মধ্যে। “জাতীয় দল জিতলে কেন আমরা ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার মূল্যের কথা ঘোষণা করব? কোনও মানে ছিল না।” বলেন বাইচুং। অতীতে দেখা গিয়েছে, ২০০৬ সালে জাপান ম্যাচের আগে এক লাখ টাকা পুরস্কার মূল্য ঘোষণা করা হয়। এমন কী ম্যাচটা ড্র হলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল ফেডারেশনের তরফে। দেখা গেল কোনওটাই ঘটেনি। জাপানের কাছে ভারত হেরেছিল ৬-০ গোলে। প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য মনে করছেন, পুরস্কার মূল্যের অর্থ ঘোষণা না করে বরং সেই টাকায় আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজন করুক ফেডারেশন। তাহলে ভারতের ছেলেরা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্বাদ পাবে। কিন্তু এসব কথা কে শোনে।