ছিলেন না এমবাপে। কোচ হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু করলেন জাবি আলোনসো। খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে পেনাল্টি মিস। সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ক্লাব বিশ্বকাপে অভিযান খুব একটা ভালো হল না। রিয়াল আটকে গেল সৌদি ক্লাব আল হিলালের কাছে। খেলার ফল ১-১। যদিও প্রথম গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন গঞ্জালো গার্সিয়া। বিরতির আগেই সেই গোল শোধ করে দেন আল হিলালের রুবেন নেভেস। পেনাল্টি থেকে নেভেস গোলটি করেছেন।
প্রথমার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ সেভাবে নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি। এমনিতেই নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধ্যায় শুরু হল। তাছাড়া প্র্যাকটিশ করার তেমন সুযোগও পাননি। ফলে শুরুর দিকে আল হিলাল বেশ ভালমতো চ্যালেঞ্জ ছঁুড়ে দিয়েছিল রিয়ালকে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ততই খেলায় ফিরে এসেছে জাবি বাহিনি। অন্যদিকে আল হিলালের দায়িত্ব নিয়ে এই প্রথম রিজার্ভ বেঞ্চে বসলেন সিমোন ইনজাঘি। দুই নতুন কোচের অধীনে খেলা দলের পারফরম্যান্সে দুই কোচই খুশি।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ড রক স্টেডিয়ামে স্রোতের বিপরীতে প্রথম গোল করে চলে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ৩৪ মি্নিটের খেলা চলছিল। এমবাপের জায়গায় সুযোগ পাওয়া স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড গঞ্জালো গার্সিয়া গোলটি করেন। প্রতি আক্রমণে রদ্রিগোর সঙ্গে পাশ খেলে বক্সে ঢুকে নিখঁুত শটে গোল করে যান তিনি। যদিও ম্যাচ শুরুর বঁাশি বাজার পর থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করে এশিয়ার দলটি। একের পর গোলের সুযোগ পেয়েও তাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন সালের আল দাওসারি, মারকোস লিওনার্দোরা। একবার গোল করে ফেলেছিলেন রেনান লোডি। অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল করেন রেফারি। তাছাড়া আল দাওসারি যদি ঠিকমতো গোলে বল রাখতে পারতেন তাহলে তিনিই হয়তো হ্যাটট্রিক করে বসতেন। জ্বরের জন্য এমবাপে খেলেননি। এই মুহূর্তে রিয়ালের প্রধান গোলমেশিন হলেন ফরাসি তারকা। তঁার অনুপস্থিতিতে রিয়াল তেমন শুরুতে কেমন হারিয়ে গিয়েছিল। আল হিলাল গোলটি পায় বিরতির বঁাশি বাজার চার মিনিট আগে। পেনাল্টি থেকে। হিলালের ফরোয়ার্ড মার্কোস লিওনার্দোকে হাতে টেনে ফেলে দেন রিয়াল ডিফেন্ডার রাউল অ্যাসেনসিও। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি। পেনাল্টি থেকে গোলশোধ করে দেন পর্তুগিজ তারকা রুবেন নেভেস।
রিয়ালের ভালভার্দের শট বঁাচাচ্ছেন হিলালের গোলকিপার ইয়াসিন বুনু।
রিয়াল কিন্তু খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় বিরতির পর। প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে আল হিলালের ওপর। দুর্ভাগ্য সেই সময় তারা গোল পায়নি। নাহলে রিয়ালের জেতার কথা। আরও আফসোসের বিষয় হল, শেষ মুহূর্তে রিয়ালের পেনাল্টি নষ্ট। ৮৭ মিনিটে পেনাল্টি পায় রিয়াল। ভালভার্দের শট দারুন ঝঁাপিয়ে বঁাচিয়ে দেন সৌদি ক্লাবের গোলকিপার ইয়াসিন বুনু। রেকর্ড অনুযায়ী রিয়াল এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এশিয়া ক্লাবের কাছে তারা ৯০ মিনিটের মধ্যে আটকে গেল। এর আগে জাপানের ক্লাব কাশিমা অ্যান্টলার্সকে হারিয়ে ছিল ঠিকই, তবে অতিরিক্ত সময়ে গোল দিয়ে। ২০১৬ সালে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ঘটনাটা ঘটে। ড্রয়ের পর রিয়াল কোচ আলোনসো বলেন, “প্রথমার্ধে আমরা তেমন সুবিধে করতে পারিনি ঠিকই, তবে বিরতির পর আমরা দারুন খেলেছি। শুরুতে ভাল না খেলার পেছনে অনেক কারণ ছিল। বিশেষ করে দলের মধ্যে কেমন যেন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল।” ম্যাচে ফিরে আসার ঘটনাকে বড় করে দেখছেন রিয়ালের নবাগত কোচ। “ম্যাচে ফিরে আসার লড়াই দেখে খুব ভাললাগলো। খেলার মধ্যে ছন্দ পরিবর্তন করা সহজ কথা নয়। সেই কঠিন কাজটা ছেলেরা করেছে। হারানো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়ে আমরা বিরতির পর প্রতিপক্ষের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছি। দলের কাছে এটাই হল সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।” তবু আলোনসো মনে করছেন, খেলায় কিছু কিছু বদল আনতে হবে। প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় সেই জায়গা বদল করা যায়নি। আলোনসো বলছিলেন, “সময় দিতে হবে। তাহলে দলের খেলায় যে বদল আনতে চাইছি তা হয়ে যাবে। সেই বদলগুলোতে নিখঁুত আনা চাই। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মাত্র ৯ দিন সময় পেয়েছি। তারমধ্যে অনেকে চলে গিয়েছিল ছুটিতে। মাত্র তিন দিন অনেকে দলের প্র্যাকটিশে থাকতে পেরেছে। এরপর নিশ্চয় ভাল কিছু আশা করা যায় না।”
তবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ম্যাচে রিয়ালের মতো দলকে আটকে দিতে পেরে দারুন খুশি ইনজাঘি। আল হিলালের কোচ খেলার পর বলেন, “দলগত খেলা আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এটাই আসলে চেয়েছিলাম। দলের খেলা দেখে আমি দারুন খুশি। সবচেয়ে বড় কথা রিয়ালের বিপক্ষে একসঙ্গে সকলে ঝঁাপিয়েছে। এই দলকে বিশ্বের সেরা তিনটে দলের মধ্যে রাখব। সত্যি বলতে কী, এই দলকে নিয়ে আমি গর্বিত।”