রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করার পর ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল তঁাকে। এমনই দাবি জানিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। খেলার চাপ ও চোট-আঘাতের জন্য নিজেকে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে সরিয়ে নিয়েছেন বলে স্কাই স্পোর্টসকে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন ভারতীয় স্পিডস্টার।
দুটো টেস্ট ম্যাচে তিনি ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যথারীতি ভারতীয় দল থেকে যখন রোহিত শর্মা অবসর নিলেন তখন স্বভাবতই সকলের নজর ছিল যশপ্রীত বুমরার দিকেই। তঁার হাতেই দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি উঠেছিল খুব বেশি করে। কেন তিনি ৫ টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিলেন না তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তঁার কথাবার্তায় উঠে এসেছে, চোট-আঘাত প্রসঙ্গ। সেই কারণেই নিজেকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি।
যশপ্রীত বুমরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তঁার নেতৃত্ব না দেওয়ার পেছনে কোনও অভিনব ঘটনা নেই। যা করেছেন তা সকলের সঙ্গে কথা বলেই এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। “এই ঘটনার পেছনে অভিনব কোন গল্প নেই। কেউ বলতে পারবেন না, আমাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বা বরখাস্ত করা হয়েছে। এমন কোনও চাঞ্চল্যকর খবর নিশ্চয় বেরোয়নি। আইপিএল চলাকালীন আমি পঁাচ টেস্ট ম্যাচের সিরিজ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কথা বলি। জানতে চাই, আমার উপর কতটা কাজের চাপ থাকবে। যঁারা আমার চিকিত্্সার সঙ্গে যুক্ত তঁাদের সঙ্গে তারপর কথা বলি। কথা হয় সার্জেনের সঙ্গে। তিনি আমাকে বুঝিয়ে দেন, পিঠের ক্ষেত্রে আমি কতটা চাপ নিতে পারি। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, ফিটনেসের উপর আমাকে আগে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। অযথা ঝঁুকি নিয়ে কোনও লাভ হবে না। তাই বোর্ডের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলি। জানিয়ে দিই, আমাকে নেতৃত্ব দিতে বলবেন না। অধিনায়কের ভূমিকায় থাকতে চাইনা। যেহেতু সিরিজের পঁাচ টেস্টে আমি খেলতে পারব না।” বলেন বুমরা।
উচ্চাকাঙ্খা থাকলেও চোট-আঘাত বুমরাকে পিছু হঠতে বাধ্য করল।
একজন অধিনায়কের আগে দরকার, প্রতিটি ম্যাচে অংশ নেওয়া। কিন্তু সেই অধিনায়ক যদি আগে থেকে জেনে যান সব ম্যাচ তঁার পক্ষে খেলা অসম্ভব। তখন নিজেকে সরিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন যশপ্রীত। তাই ইংল্যান্ড সিরিজে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিতে চাননি। “বোর্ড আমাকে নেতৃত্বকারী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। তবু না বলতে বাধ্য হই। কারণ দলের কাছে এটা কখনও ভাল হতে পারে না। পঁাচ টেস্ট সিরিজের মধ্যে যদি কেউ তিনটে ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেয়, বাকি দুটো দেয় আর একজন, দলের কাছে তা কখনও ন্যায্য হতে পারে না। আমার কাছে দল আগে। দেখুন আগে আমি একজন খেলোয়াড়। নিশ্চয় অধিনায়ক হিসেবে দলে আমি আসিনি। আমার কাছে অধিনায়কত্ব হল একটা পদ মাত্র। মানছি, দলে সবসময় একজন নেতার প্রয়োজন। সেই নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার ইচ্ছেও ছিল। তবে আমার কাছে সতর্ক থাকা আগে প্রয়োজন। ভবিষ্যতের কথা না ভেবে যদি লাফিয়ে পড়ি তাহলে আমাকে হয়তো খেলা থেকে সরে যেতে হতে পারে। সেই দিকটা আমি কখনও চাইনি।”
যশপ্রীত বুমরার কাছে আগে একজন খেলোয়াড়, তারপর থাকবে নেতৃত্ব। কখনও নেতা সেজে খেলাকে জলাঞ্জলি দিতে রাজি নন। “অধিনায়কত্ব বলতে অনেক কিছু বোঝায়। আমি এরজন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। মাঝে মাঝে বড় কিছু ভাবনা মাথায় রেখে এগোতে চাইলে ছোট দিকগুলোকে সরিয়ে দিতে হয়। আমার কাছে ক্রিকেট খেলা আগে, পরে অধিনায়কত্ব। ক্রিকেট খেলাকে আমি বেশি ভালোবাসি। তাই অধিনায়ত্ব নয়, আমার কাছে ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় দলে বেশি অবদান রাখাটাই মুখ্য। উচ্চাকাঙ্খা আমার নেই তা একদম বলব না। কিন্তু বোর্ডকে বাধ্য হয়ে ফোন করে জানিয়ে ছিলাম, আমার পক্ষে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া কোনওমতে সম্ভব নয়।” যশপ্রীত বুমরা বলেন।