ধীরলয়ে এগিয়ে গেলেন চেয়ারের দিকে। কিছুক্ষণ বসে মাটির উপর রাখলেন তঁার রেকেট ব্যাগ। পরমুহূর্তে গ্যালারিতে বসা দর্শকদের দিকে হাতজোড় করে শূন্যে তুলে ধরলেন তঁার দুটো হাত। তারপর মাটি স্পর্শ করার জন্য ঝঁুকে পড়লেন নিচে। বুকের কাছে হাত দুটো রাখলেন। কিছুক্ষণ পরে হাত নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেলেন ফিলিপ চ্যাট্রিয়ার কোর্ট ছেড়ে। প্যারিস কি তাহলে দেখে ফেললো নোভাক জকোভিচের শেষ ম্যাচ? সার্বিয়ান তারকা কি আর কখনও প্যারিস ওপেনে নামবেন না? যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর হতে পারে হঁ্যা, কিংবা না। তবে সম্ভাবনা হ্যঁার দিকেই। তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন জানিক সিনারের কাছে স্ট্রেট সেটে হেরে।
প্যারিস ওপেনে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ভাবতেই পারেননি এভাবে তঁাকে হার মানতে হবে। ৬-৪, ৭-৫ ও ৭-৬ (৭-৫) সেটে জিতে ফাইনালে পৌছে গেলেন সিনার। আসলে ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জেতার জন্য প্যারিসকে পাখির চোখ করে ফেলেছিলেন জকোভিচ। একের পর এক ম্যাচ জিতে পেয়ে গিয়েছিলেন প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস। অথচ সিনারের কাছে সেমিফাইনালে এমন ভাবে হারকে মোটেই মন থেকে মেনে নিতে পারেননি সার্বিয়ান তারকা। তাই কোর্ট ছাড়ার আগে জকোভিচ বলে গেলেন, “এখানে হয়তো আমি শেষ ম্যাচ খেলে ফেললাম। আমি এখনও জানিনা কী করব। তাই শেষ মুহূর্তে একটু আবেগপূর্ন হয়ে গিয়েছিলাম।” পরমুহূর্তে তঁাকে বলতে শোনা যায়,“যদি সত্যিই আমি শেষ ম্যাচ খেলে ফেলে থাকি তাহলে ফরাসি ওপেনের দর্শকদের কাছে আমি চিরঋণী হয়ে থাকতে চাই। এখানকার দর্শক, পরিবেশের কাছে অনেক কিছু পেয়েছি। সেই হিসেবে বলতে পারি, একটা দুর্দান্ত ম্যাচ খেলে গেলাম।”
সিনার নন, দর্শকরা জকোভিচকে উজাড় করে সমর্থন জানিয়েছে। সিনারকে সামান্য চাপে ফেললেই জকোভিচের হয়ে দর্শকরা চিত্্কার করতে ভুলেননি। যদি ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হতেন তাহলে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের নায়ক হয়ে থাকতেন, যা হয়ে থাকত একটা রেকর্ড। কিন্তু সিনারের দৃঢ় প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার মতো জায়গায় পৌছতে পারেননি সার্বিয়ান তারকা। ভবিষ্যত্্ নিয়ে প্রশ্ন করতেই জকোভিচ জানিয়ে দিলেন, তিনি এখনও কোনও কিছু ঠিক করেননি। “আমি সত্যি কিছু জানিনা। এই বয়সে বারো মাস খেলা চালিয়ে যাওয়া একটা দীর্ঘ সময়। তাই নিজেকে প্রশ্ন করে দেখতে হবে, আমি কি সত্যিই খেলা চালিয়ে যেতে চাই? মন হয়তো বলবে চালিয়ে যাই। কিন্তু ১২ মাস খেলা কি এখন সম্ভব? উত্তর হবে আমি জানি না। এর বেশি এই মুহূর্তে কিছু বলা অসম্ভব।” বলেন জকোভিচ।
কোর্ট ছেড়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে যাচ্ছেন সার্বিয়ান তারকা।
এখন সামনে রয়েছে উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন। ২০২৩ সালে শেষবারের মতো ইউএস ওপেন তথা গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন জকোভিচ। এবার ফ্রান্সের মাটিতে তঁাকে বেশ স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল। কিন্তু সবকিছু যে ঠিকমতো যাচ্ছে না তা অ্যান্ডি মারেকে কোচ থেকে বিদায় দেওয়ার পর বোঝা যাচ্ছিল। ্জেনেভা ওপেনে ১০০তম খেতাব জেতার পর মনে হচ্ছিল আবার তঁাকে পুরোন ফর্মে দেখা যাবে। বিশেষ করে একটা গ্র্যান্ড স্লাম জেতার জন্য তিনি এখন মরিয়া হয়ে আছেন। তঁার কাছে জানতে চাওয়া হয়, উইম্বলডন বা ইউএস ওপেন নিয়ে কিছু ভাবছেন কিনা। প্রশ্নের জবাবে জকোভিচ বলেন, “এইসময় একটা কথা বলতে পারি, বাকি দুটো গ্র্যান্ড স্লামের দিকে আমার নজর আছে। খেলার জন্য আমি পরিকল্পনার মধ্যে মরশুমের বাকি দুটো গ্র্যান্ড স্লামকে ধরে রেখেছি। বাকি টুর্নামেন্টগুলো নিয়ে তেমন ভাবনা আমার বিশেষ নেই।” জকোভিচ যদি উইম্বলডন জেতেন তাহলে আটবার তঁার এই গ্র্যান্ড স্লাম জেতা হবে। পুরুষ বিভাগে ৮বার জিতলে রেকর্ডের সমান অংশীদার হবেন। গত দুটো ফাইনালে আলকারাজের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। উইম্বলডন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জকোভিচ জানালেন, “আমার শৈশবের প্রিয় টুর্নামেন্ট হল উইম্বলডন। সেখানে খেলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমার মন বলছে উইম্বলডনে পরবর্তী গ্র্যান্ড স্লাম জয় আসতে পারে। কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় পূরণ হতে পারে সেই লক্ষ্য।”
২০০৪ সালে পেশাদার টেনিসে নাম লেখানোর পর এখনও অব্দি জকোভিচ জিতেছেন ১৩৭৫টি ম্যাচ। এখনও তঁার যা ফিটনেস ২৩ বছরের তরুণকে হার মানাবে। জকোভিচ বলছেন, ফরাসি ওপেনে মোটেই ছন্দে ছিলেন না। কিন্তু সিনারের কাছে হারলেও তঁার মনে হয়েছে, যথেষ্ট ভাল খেলেছেন। তাই তঁাকে পরবর্তী প্রতিযোগিতাগুলোতে ভাল খেলতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তিনি। সিনারকে প্রভূত প্রশংসা করে জকোভিচ বলেন, “সিনার আমার কাছে একটু কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গিয়েছিল। খুব ভাল খেলেছে সিনার।” জকোভিচকে হারানো যে তঁার কাছে একটা স্বপ্নের মতো তা উল্লেখ করে সিনারও বলেন, “প্রমাণ করে দিচ্ছেন জকোভিচ, তিনি তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে একজন আদর্শ। আমাদের সকলের কাছে তিনি একজন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন, তঁাকে এই সময়ও উচ্চস্তরের টেনিস খেলতে দেখছি।” বলেন সিনার। রবিবার যিনি ফাইনালে মুখোমুখি হবেন কার্লোস আলকারাজের। শনিবার মেয়েদের ফাইনালে মুখোমুখি হবেন কোকো গফ-সাবালেঙ্কা।