শয়ে শয়ে মানুষের ভিড়। ছেয়ে গিয়েছে সংবাদ মাধ্যম। প্রতিযোগিতাহীন মোহনবাগানে এমন দৃশ্য কখনও দেখা যায়নি। এমন ঘটনা কি ময়দান কখনও দেখেছে? মনে হয়না। নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে যাওয়ার পর দু-পক্ষই নেমে পড়েছিল একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে। সেই যুযুধান দুই গোষ্ঠী সোমবার বসে পড়ল এক টেবিলে। আপাতত মোহনবাগান নির্বাচনে পড়ল যবনিকা। দুই শিবিরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, তঁারা এবার ক্লাবের স্বার্থে এক হয়ে গেলেন। সমঝোতা হয়ে গেল দুই শিবিরে।
গত কয়েকদিন আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, মোহনবাগান নির্বাচন হচ্ছে না। মিলে যাবে মোহনবাগানের দুই শিবির। হলও ঠিক তাই। তবে দুই শিবিরের মিলে যাওয়ার পেছনে নাকি থেকে গেলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু-পক্ষের প্রধান সৃঞ্জয় বোস ও দেবাশিস দত্তকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী নাকি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাদা ছেঁাড়াছুড়ির কোনও প্রয়োজন নেই। তোমরা নিজেরা বসে কমিটি গঠন কর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সবকিছু যে হয়েছে তা অবশ্য বলছেন না দেবাশিস-সৃঞ্জয়। কিন্তু ময়দানে এটাই আপাতত রটনা।
যাইহোক সাংবাদিক সম্মেলনে দুই শিবিরের প্রধান সৃঞ্জয়-দেবাশিস বসে জানিয়ে দিলেন, নির্বাচনী ইস্তাহারে যা তঁারা জানিয়ে ছিলেন, তার সবই পূরণ করা হবে। সেই সঙ্গে এও জানিয়ে দেওয়া হল, সদস্যদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেই বেশি নজর দেবেন তঁারা। দুই গোষ্ঠীর মিলে যাওয়া প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে সৃঞ্জয় বলেন, “মোহনবাগানের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ক্লাবের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছিল তাতে আমরা সকলেই মর্মাহত ছিলাম। তাই আমরা ঠিক করি এভাবে না চলাই ভালো। তখন আমরা উভয়পক্ষ আলোচনায় বসি। ঠিক করি নির্বাচনের দিকে এগোন ঠিক হবে না।” সোমবার ২০জনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা রয়েছেন। তারমানে এক হয়ে গেলেও বিভাজনের রেখা স্পষ্ট। যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া সৌমিক বোস (সভাপতি টুটু বোসের ছোট পুত্র) একটা মূল্যবান কথা বলে গেলেন। কি কথা? ‘দুজনে সদ্য হাত মিলিয়েছেন। এবার দেখবেন দুজনে মালাও পরে নেবেন।’ দেখা গেল ঠিক তাই। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল গোলাপের মালা নিয়ে এসে দুজনকে একসঙ্গে পরিয়ে দিলেন। আগামী দিনে হয়তো আরও মালা দুজনে পরবেন। কিন্তু সেই মালায় কঁাটা থাকবে কিনা কে জানে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে কি তাহলে মিলে গেল দুই গোষ্ঠী? প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, “রাজনৈতেক কারণের কোনও ব্যাপারই নেই। যারা এসব বলছেন তাঁরা ভাল বলতে পারবেন। সকলের উদ্যোগে এই জায়গায় আমরা আসতে পেরেছি। তবে এই মিলে যাওয়ার পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে। আমাদের এখানে রাজনৈতিক অরাজনৈতিক কারণ নয়। সকলে আমরা মোহনবাগানি।”
মনোনয়ন পত্র জমা দিচ্ছেন সৃঞ্জয় বোস। সঙ্গে রয়েছেন দেবাশিস দত্।
সোমবার ছিল নমিনেশন দাখিল করার শেষ দিন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সৃঞ্জয় বোস আসেন সচিব পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে। বর্তমান সচিব তথা প্রধান বিরোধী দেবাশিস দত্তকে সঙ্গে নিয়েই মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন সৃঞ্জয় বোস। অদ্ভুত ব্যাপার দেবাশিস দত্ত কোনও মনোনয়ন জমা দেননি। ময়দানের খবর, সচিব পদে সৃঞ্জয় বোস এলেও সভাপতি করা হবে দেবাশিসকে। মোহনবাগানের সংবিধানে সভাপতি পদ নির্বাচন হয়না। নতুন কমিটি এসে নতুন সভাপতি মনোনীত করেন। সেই সূত্রে দেবাশিস হচ্ছেন নতুন সভাপতি। সাংবাদিক সম্মেলনে দেবাশিস দত্তকে সভাপতি করা হবে কিনা জানতে চাইলে সৃঞ্জয় বোস বলেন, “হতেই পারেন। যাকেই করা হোক না কেন, কার্যনির্বাহি কমিটির সদস্যরা বসে নতুন সভাপতি ঠিক করবেন।” তবে নতুন কমিটিতে দুই প্রাক্তন ফুটবলারকে আনা হয়েছে। একজন হলেন হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরজন শিল্টন পাল। আসলে দুই গোষ্ঠী সমসংখ্যক প্রার্থী দিয়েছেন। মিলিজুলি কমিটি হল ঠিকই। নির্বাচন এড়ানো গেল ভালকথা। এতে ক্লাবের কতটা ভালো হল, রয়ে গেল সেটাই প্রশ্ন।