বাবা গুরুনাথ শর্মা। যাঁরা তাঁকে দেখেননি, তাঁরাও তাঁকে চেনেন। আসলে নামেই তাঁর পরিচিতি। তিনি রোহিত গুরুনাথ শর্মার বাবা। এবার সকলেই চিনতে পারবেন।
সেই গুরুনাথ শর্মা একজন টেস্ট ক্রিকেটের ফ্যান। তাঁর কাছে আধুনিক ক্রিকেটের তেমন মূল্য নেই। ওয়ান ডে বা টি২০ ক্রিকেট পছন্দ নয়। তাঁর জমানায় টেস্ট ক্রিকেট ছিল একমাত্র ক্রিকেট। যা নিয়ে মুম্বইকররা মেতে উঠতেন। তাই টেস্টে ৩০ বা ৪০ রান করলেও বাবা গুরুনাথ ছেলের কাছে জানতে চাইতেন কীভাবে রান এল। কেন বেশি রান করতে পারলেন না। কোন বোলার বল করছিলেন। এমন নানা প্রশ্ন রোহিতের কাছে করতেন। রোহিত বলতে গেলে পুরো ম্যাচ রিপোর্ট বাবাকে বলে দিতেন। আবার ওয়ান ডে ক্রিকেটে বড় রান করেছে জানতে পারলে বলতেন, ভাল খেলেছ। আমি খুশি। ব্য এটুকুই। এমনকি ওয়ান ডে ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রোহিতর ২৬৪ রানের ইনিংসের কথা শুনেও ম্যাচের কথা জানতে চাননি।
এই হলেন গুরুনাথ শর্মা। টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অবসরের কথা শুনিয়েছিলেন রোহিত। এই খবর বাবার কাছে যাওয়ার পর তিনি হতাশ হননি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট থেকে রোহিতের অবসরের কথা শুনে কিছুটা হলেও হতাশ হয়ে পড়েন। কারন তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, এরপর ছেলেকে আর টেস্ট ক্রিকেটে দেখতে পাবেন না। এমন নানা গল্প নিজেই শোনালেন রোহিত শর্মা। মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে এসে বাবা গুরুনাথকে নিয়ে অনেক অজানা কথা সামনে টেনে আনলেন। চেতেশ্বর পুজারার স্ত্রী পূজা সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। বইয়ের নাম- দ্য ডায়েরি অফ এ ক্রিকেটার্স ওয়াইফ। সেখানে এসে বাবা গুরুনাথকে নিয়ে নানা কথা বললেন।
এর আগে নানা সাক্ষাৎকারে রোহিত শুনিয়েছেন নিজের রোল মডেলের কথা। তাঁর জীবনের হিরোর গল্প। সেকথা আবার টেনে আনলেন। বলছিলেন, বাবা ও মা আমার জীবন গড়ে দেওয়ার পিছনে যা করেছেন তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না। সকলের বাবা- মা নিজের সন্তানদের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করেন। আমি বাবা-মাকে দেখেছি। ওঁদের ত্যাগের কথা ভুলতে পারব না। ওঁদের জন্য আজা আমি এই জায়গায় এসে দাঁড়াতে পেরেছি। না হলে আমাকে হয়তো অন্য কিছু করে জীবন চালাতে হত। বাবা এক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। হাতে সময় পেলে লাল বলের ক্রিকেট দেখতে মাঠে ছুটতেন। সেই থেকে লাল বলের প্রতি তাঁর ভালবাসা জন্মায়। আমি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন থেকে আমার লাল বলের খেলার স্কোর জানতে চাইতেন। টেস্টের পাশাপাশি সাদা বলের ক্রিকেটের রান জানতে চাইলেও তাঁর মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখতে পেতাম না। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ২৬৪ রান করে বিশ্বরেকর্ড করার পরও নয়। খুশি হতেন। সব বাবা- মা হন। ছেলের কীর্তিতে তাঁরা গর্ব অনুভব করেন। ব্যস এটুকু। কিন্তু টেস্টে ভাল কিছু করতে পারলে তাঁর মুখের চেহারা বদলে যেত। বোঝা যেতে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। সেই আমি যেদিন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা জানিয়ে দিলাম, সেদিন কিছুটা হলেও হতাশ হয়েছিলেন। এটা শুনে খুশি হয়েছিলেন যে আমি নিজে থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এমন নয় যে দল থেকে বাদ পড়ে অবসরের কথা ঘোষনা করেছি।
কদিন আগে (১৭ মে) ওয়ানখেড়ে স্টেডিয়ামে রোহিতের নামে স্ট্যান্ড হওয়ার দিন মাঠে এসেছিলেন বাবা-মা। তাঁরা দুজনেই এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে আনন্দে চোখ ভিজে গিয়েছিল। এটা তাঁদের কাছে গর্বের ব্যাপার। এসব দেখতে ভাল লাগে। নিজেকে ধন্য মনে হয়। তাঁদের ছেলে কিছু একটা করতে পেরেছে বলে খুশি হয়েছেন। এর থেকে বড় আর কি হতে পারে।