কালো হরিণের উচ্ছ্বাস আমরা দেখেছি। সবুজ ক্যানভাসে ছবি আঁকা দেখেছি। দেখেছি তাঁর ফুটবলে বিদ্যুতের ঝলক। আর তাঁর ৫৬তম জন্মদিনে আমরা দেখলাম তাঁর বিনয়, তাঁর কৃতজ্ঞতাবোধ, তাঁর সরল অভিব্যক্তি। শুক্রবার ৫৬-এয় পা দিলেন আইএম বিজয়ন। ভারতীয় ফুটবলে কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া ফুটবল মাঠের শিল্পী বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য উজাড় করে দিলেন তাঁর কৃতজ্ঞতা। জানালেন অজস্র ধন্যবাদ। বিজয়নের কথায়, বাংলা, বাংলার মানুষই তাঁকে বিজয়ন করেছে। তাই অনেক ধন্যবাদ। কথাগুলো বলার সময় বিজয়ন সেই একই রকম উচ্ছল, আবেগপ্রবণ।
কেরলের ত্রিচূড় থেকে কলকাতায় এসে হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় ফুটবলের এক মহীরুহ। তাঁর ফুটবল শিল্পে মোহিত হয়েছিলেন, উদ্বেলিত হয়েছিলেন বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা। সবুজ মেরুন, লালহলুদ দুটি জার্সিতেই ফুটিয়েছেন ফুল। ভারতীয় দল, আন্তর্জাতিক ফুটবল – বর্ণময় এক জার্নি। ভারতীয় ফুটবলে আইএম বিজয়ন এক মহাকাব্যিক অধ্যায়।
১৯৬৯-এর ২৫ এপ্রিল ত্রিচূড়ে জন্ম। দ্রারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা। পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহা্য্য করতে ত্রিচূড় কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে সোডা বোতল বিক্রি করেছেন।সঙ্গে চালিয়েছেন পড়াশোনা ও ফুটবল। ১৭ বছর বয়সে যোগ দেন কেরল পুলিশের ফুটবল টিমে। তারপর বদলে গেল জীবন। বদলে দিলেন ছবি। শুরু হল সোনালি এক কেরিয়ার। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, জেসিটি, এফসি কোচি – তাঁর যৌবনের উপবন। কলকাতায় প্রথম ক্লাব মোহনবাগান আর কেরিয়ারের শেষ ক্লাব ইস্টবেঙ্গল। জাতীয় দলে অভিষেক ১৯৯২ সালে। ভারতীয় ফুটবলে বাইচুংয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ঐতিহাসিক এক অধ্যায়। ২০০০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। ১০২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে করেছেন ৯৭টি গোল। ২০০৩-এর অর্জুন, এ বছরের পদ্মশ্রী – তাঁকে তো বটেই, গর্বিত করেছে আমাদেরও।
জন্মদিনে বাংলার জন্য যেমন তাঁর কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ, বাংলারও তেমনি অজস্র ভালবাসা, শুভেচ্ছা। বিজয়ন মানে একটা আবেগ। বিজয়নের ফুটবল মানে একটা সুখানুভূতি। আর কিংবদন্তির জন্মদিন মানে মাথা ঝুঁকিয়ে শুভেচ্ছা, অভিনন্দনে ভাসিয়ে এ কথা বলার দিন – হ্যাপি বার্থ ডে বিজয়ন, হ্যাপি বার্থ ডে।