জেতার জন্য বার্সেলোনাকেই কৃতিত্ব দিলেন সিমোনে ইনজাঘি। তঁার ধারণা, বার্সেলোনা যত ভাল খেলেছে ততই তঁার দল ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। সুতরাং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার জন্য পুরো কৃতিত্ব তিনি ইন্টার মিলান দলের ফুটবলারদের পাশাপাশি বার্সেলোনাকেও দিতে চান।
প্রথম লেগে ৩-৩। ফিরতি লেগে ৪-৩ গোলের একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে অতীতে যেসব সেমিফাইনাল ম্যাচ আলোচনায় ছিল তা মুছে দিতে পেরেছে। ইন্টার মিলান-বার্সেলোনা ম্যাচ যেভাবে দুটো সেমিফাইনাল প্রতি মুহূর্তে জমজমাট লড়াই হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। মজার ঘটনা হল, দুটো সেমিফাইনাল ম্যাচেই কিন্তু বরাবর এগিয়ে ছিল মিলান। ব্যতিক্রম শুধু থেকেছে ফিরতি সেমিফাইনাল। যেখানে নির্ধারিত সময়ের দু-মিনিট আগে গোল খেয়ে ৩-২ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ইনজুরি টাইমের তিন মিনিটে গোল দিয়ে ফের ম্যাচে ফিরে আসে মিলান। তাই খেলার শেষে দলের ফুটবলারদের সঙ্গে ইয়ামাল, রাফিনিয়াদের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মিলান কোচ সিমোনে ইনজাঘি। “প্রথমত এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ হওয়ার জন্য আমি বার্সেলোনাকে কৃতিত্ব দিতে চাই। নিঃসন্দেহে একটা শক্তিশালী দল বার্সা। ইন্টার মিলান এত ভাল খেলার পিছনে তাদের কৃতিত্ব তুলে না ধরলে অন্যায় করা হবে। নাহলে আমরা হয়তো ফাইনালে উঠতে পারতাম না।” খেলার শেষে বলেন ইনজাঘি। “তবে মিলানের কোচ হতে পেরে আমি গর্বিত। এই কারণে গর্বিত, তারা প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। নিজেদের উজাড় করে দিতে কেউ কুন্ঠাবোধ করেনি। সবচেয়ে ভাললাগছে, প্রতিটি সমর্থক আমাদের খেলা ভালমতো উপভোগ করতে পেরেছেন। তারজন্য আমার ছেলেদের নিয়ে সত্যিই গর্ব করা যায়।” ইনজাঘি জানিয়ে দিলেন, ফুটবলারদের মনে বিশ্বাস জন্মাানোর জন্য তিনি কোনও ত্রুটি রাখেননি। দলের প্রত্যেককে একটা কথাই বলেছিলেন, বার্সেলোনা বড় দল ঠিকই। নিঃসন্দেহে ভাল খেলছে। তাই বলে অপরাজেয় নয়। ইয়ামালদের হারানো সম্ভব। আসলে দলের প্রতিটি ফুটবলার শুধু এই কথার উপর ভিত্তি করেই যে বাজিমাত করেছেন তাই নয়, নিজেদের বিশ্বাসটাকেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। “প্রতিটি দলের কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। আমাদেরও ছিল। তাই বলে সমস্যা সমাধান হয়না তাতো নয়। তারজন্য প্রয়োজন পড়ে হৃদয়। যদি কেউ মন থেকে চেষ্টা করে সমস্যার সমাধান করবে তাহলে সে পারবে। আমাদের দলে যা ছিল তাদের নিয়ে লড়ে গিয়েছি। আসলে বার্সেলোনাকে নিয়ে আমরা অনেকভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি। সেই চেষ্টা থেকেই আমরা সফল হতে পারলাম। তাছাড়া প্রথম লেগে খেলার পর আমরা বুঝে গিয়েছিলাম, বার্সাকে হারাতে গেলে আমাদের ঠিক কী কী করতে হবে। সেইগুলো করেই বার্সাকে আটকানো গিয়েছে।” বলেন ইনজাঘি।
ইনজাঘি বিশ্বাস করছেন, সবকিছু সম্ভব হয়েছে ছেলেদের পরিশ্রমের কারণে। “একটা কথা না বললে অন্যায় করা হবে, প্রতিটি ছেলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। কেউ এক ইঞ্চি মাটি ছাড়েনি। প্রত্যেকের খেলায় একটা বাড়তি তাগিদ লক্ষ্য করছিলাম। কোনও সন্দেহ নেই, ছেলেরা ফাইনালে খেলার যোগ্য।” প্রথম সেমিফাইনালের শেষে তিনি ইয়ামালের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন। জানিয়ে ছিলেন, ফুটবল বিশ্বে ৫০ বছরের মধ্যে এমন ফুটবলার জন্ম নেয়নি। সেই ইয়ামালকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের শেষে তুলে ধরলেন ঠিকই। পাশাপাশি ইনজাঘির নজর আরও বেশি কেড়ে নিয়েছেন একজন। তিনি আর কেউ নন ফ্রেঙ্কি ডি জং। কথা প্রসঙ্গে ইনজাঘি বলেন, “ইয়ামালকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাই নতুন করে আর ইয়ামালকে নিয়ে আর কিছু বলতে চাইনা। তবে বার্সেলোনার একজন ফুটবলারও আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছে। সেই ছেলেটি কিন্তু ইয়ামাল নয়, ফ্রেঙ্কি ডি জং। ডিফেন্সে কী অসাধারণ খেলে গেল। যেখানে বল গিয়েছে সেখানেই দেখেছি প্রাচীর হয়ে দঁাড়িয়ে পড়েছে ফ্রেঙ্কি। ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি বল রক্ষণ থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই তার খেলা আমাকে মুগ্ধ করে গেল। আমি কখনও দলের ফুটবলারদের ছাড়তে চাইনা। যদি ফ্রেঙ্কির জন্য কাউকে ছাড়তে হয় তাহলে আমাকে তা ভাবতেই হবে।” জানিয়ে দিলেন ইনজাঘি।