“মোহনবাগান নির্বাচনে প্রমাণ করব, ম্যায় টাইগার হুঁ।” শনিবার বালিগঞ্জে নিজের বাড়িতে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে একথা হুঙ্কারের সুরে জানিয়ে দিলেন স্বয়ং টুটু বোস। মোহনবাগান সভাপতি পদে কিছুদিন আগে নৈতিক কারণে পদত্যাগ করেছেন তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে টুটু বসু চ্যালেঞ্জের সুরে জানিয়ে দিলেন, “হঁ্যা, আমি মোহনবাগান সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছি ছেলে সৃঞ্জয়ের হয়ে নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেব বলে। ক্লাব সংবিধানকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে নিয়েছি। টুটু বসু মোহনবাগানে কী এবার সেটা প্রমাণ করে দেব। বুঝিয়ে দেব, মোহনবাগান জনতা আমাকে কতটা ভালোবাসে। আমি প্রতিটি সদস্যকে একটা কথাই বলব, আপনারা সৃঞ্জয়কে ভোট দিলে বুঝব আমাকেই ভোট দিলেন।” মূলত অভিযোগের তীর যে বর্তমান ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্তের দিকে তাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। “দেবাশিস হল ভয়ংকর লোভী। ও সবসময় নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। একদিন ওকে হাত ধরে ক্লাবে নিয়ে এসেছিলাম। আসলে তার বাবা আমার খুব পরিচিত ছিলেন। ছেলের মোহনবাগান প্রতি আবেগ দেখে একদিন আমাকে বলেছিলেন, তাকে যেন মোহনবাগান করার সুযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে একের পর এক বিশ্রি ঘটনা ঘটিয়ে গিয়েছে। আমার বন্ধু প্রয়াত সচিব অঞ্জন মিত্র-র সঙ্গে আমার বিরোধ লাগিয়ে দিয়েছে। এখন এসেছে বোস পরিবারের মধ্যে ফাটল ধরাতে। আমি বেঁচে থাকতে তা পারবে না। যদি কোনওদিন দেখেন সে সফল হয়েছে তাহলে আপনারা আমাকে বিষ এনে দেবেন। আমি তা খেয়ে নেব।” জানিয়ে দিলেন টুটু বোস।
প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, টুটু বসুর ছোট ছেলে ও বড় ছেলের মধ্যে মোহনবাগানকে ঘিরে সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। সম্প্রতি টুটু বসুর ছোট ছেলে জানিয়ে ছিলেন, টুটু বোস ও দেবাশিস দত্ত মিলে ক্লাব ভালোই চালাচ্ছেন। নতুন করে কাউকে ক্লাবে আসার আর প্রয়োজন নেই। আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন. তঁার দাদা সৃঞ্জয় বোস যে সচিব পদে দঁাড়াতে চাইছেন তার আর কোনও প্রয়োজন নেই। প্রতু্যত্তরে সৃঞ্জয় জানিয়ে ছিলেন, “ভাই কোনওদিন মোহনবাগান সেইভাবে করেনি। তাই ভাই কী বললো না বললো তা নিয়ে ভাবছি না।” শনিবার সাংবাদিকদের সামনে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন টুটু বোস, “বাবা, দাদা যেখানে আছে সেখানে ছোট ছেলে আমার আলাদা জায়গায় গিয়ে মোহনবাগান করবে তা কখনও হয়না। ও আমাদের সঙ্গেই আছে। থাকবেও। তাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। ভুল বুঝতে পেরেছে আমার ছোট ছেলে। তাই ওকে নিয়ে বোস পরিবারে ফাটল ধরাতে পারবে না দেবাশিস।”
বর্তমান ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্ত প্রায়শই এখন বলেন,“শুধু ফুটবল নয়, হকি, অ্যাথলেটিক্স, সবেতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহনবাগান।” টুটু বসু চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, “কোথায় মোহনবাগান সফল হয়েছে আমাকে আপনারা বোঝান। সফল তো হয়েছে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। পয়লা বৈশাখের দিন ট্রফি সাজিয়ে যে রাখা হয়েছিল তাতো ফুটবলের ট্রফি। আপামর জনগণ জানেন, এই ট্রফি আসলে কার হাত ধরে এসেছে। তাহলে কৃতিত্ব কার নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন।” পরমুহূর্তে তিনি বলেন, “আচ্ছা বলুন, এই সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে মোহনবাগানে নিয়ে এসেছিল কে? জোর দিয়ে বলছি, আমি নিয়ে এসেছি। মোহনবাগানের প্রতি তার আবেগ রয়েছে। তাই তাকে নিয়ে এসেছিলাম। জানতাম অন্যান্যদের মতো পালিয়ে যাবে না। আজ প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, সঠিক মানুষের হাতে আমি ফুটবলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছি।”
সেই সঙ্গে সদ্য পদত্যাগকারী সভাপতির দাবি, মোহনবাগানে কোটি কোটি টাকা তিনি বছরের পর বছর ঢেলে গিয়েছেন। অথচ ইদানীং শুনতে পাচ্ছেন, যে টাকা তিনি ক্লাবকে দিয়েছেন তার বিনিময়ে নতুন সব সদস্য করে নিয়েছেন। তার মানে, ধরা যাক, এক কোটি টাকা যদি ক্লাবকে দিয়ে থাকেন তাহলে নতুন সদস্য করতে গিয়ে আর নতুন কোন অর্থ ক্লাব অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি। তাছাড়া তঁার কোম্পানির লোগো ব্যবহার করেছে ক্লাব। যাকে সোজা কথায় স্পনসর বলে। তার জবাবে টুটু বোস জানান, “আমি জানিনা, কেন এসব বলা হচ্ছে। দেখুন আমি যে টাকা দিয়েছি তার কোনও প্রমাণ আমার হাতে নেই। কিন্তু ফেডারেশন যেবার ক্লাবকে সাসপেন্ড করল (আই লিগের ডার্বি ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে খেলার মাঝপথে দল তুলে নিয়েছিল মোহনবাগান। ফলে দু কোটি টাকা জরিমানা হয়।) তারজন্য দু-কোটি টাকা ফেডারেশনকে জরিমানা বাবদ দিতে হয়েছিল। সেই টাকা আমি দিয়েছিলাম। এবছর আমার অডিট ফার্ম বললো এই টাকা যেহেতু ফেরত পাব না তাই টাকা যেন মোহনবাগানকে দান হিসেবে দেখিয়ে দিই। আমি তাই করেছি।”পরমুহূর্তে তিনি সাংবাদিকদের আহ্বান জানান, “আপনাদের করজোড়ে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আসুন। স্বচক্ষে দেখে যান, দু কোটি টাকা ক্লাবের জন্য ফেডারেশনকে দিয়েছি কিনা। তার প্রমাণ আমার হাতে আছে। আর কী দিয়েছি তা মোহনবাগান জনতা জানে। প্রতিটি সদস্য জানেন, আমার ক্লাবের প্রতি অবদান কী। তাই নতুন করে আর কিছু বলতে চাই না।” বুঝিয়ে দিলেন, মোহনবাগান নির্বাচনের দামামা জোর বেজে গিয়েছে। এবার শুধু তারিখ ঘোষণা যা বাকি। সেই তারিখ ঘোষণা হলেই বোঝা যাবে বসু পরিবার বনাম দেবাশিস দত্তের লড়াই কোথায় গিয়ে দঁাড়ায়।