একসময় বলা হত, ইংল্যান্ড তাঁর সেকেন্ড হোম। হয়তো এখনও কথা উঠলে তিনি সেকথাই বলবেন। কারনও আছে। ৯৬-এ লর্ডসে টেস্ট অভিষেক। ২০০২-এ টেস্ট সিরিজ জেতার জায়গা থেকে ড্র। সে বছরই ন্যাট ওয়েস্ট ট্রফি জয়। ২০০৭-এ সিরিজ জয়। এমন অনেক কিছু তাঁর ক্রিকেট জীবনে ঘটেছে। তাই ইংল্যান্ড তো তাঁর কাছে খুবই কাছের হবে। সেটাই স্বাভাবিক। ইংল্যান্ডে এবার ভারতীয় ক্রিকেট দল লম্বা সিরিজ খেলতে গিয়েছে। সেই সিরিজের রেজাল্ট কি হতে পারে। সঙ্গে অনেক প্রশ্ন এক চ্যানেলের বিশেষ সাক্ষাৎকারে উঠে এল।
এখন নিশ্চয় বলার দরকার নেই, তিনি কে! তাঁর ক্রিকেট পঞ্জিকা সামনে আনার পরও এ ব্যাপারে ধোঁয়াশা থাকার কথা নয়। তবু কথার শুরুতে বলে রাখা ভাল- তিনি আর কেউ নন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভারতীয় দল নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করতে গিয়ে অনেক কিছু সামনে টেনে আনলেন। লিডসে ২০ জুন প্রথম টেস্টের আগে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন ২০০৭-এর পর সিরিজ জিততে গেলে কি করতে হবে শুভমান গিলদের।
কথায় আছে, জিততে গেলে ভাল খেলতে হবে। এমন কথা সবাই জানেন যে ভাল কিছু করলেই সাফল্য আসে। কিন্তু সেই ভাল কিছুটা কি! ভাল ব্যাটিং! ভাল বোলিং! ভালভাবে দল পরিচালনা করা! নাকি অন্য কিছু। ইংল্যান্ডের মাঠে এই ভাল-র ব্যাখ্যা তিনি দিলেন। জানিয়ে দিলেন, সিরিজে কি কি করতে হবে। কাকে কি দায়িত্ব নিতে হবে। সৌরভের ইশারার দিকে বরং তাকানো যাক। তিনি যা যা বলছেন, সেই কথায় চোখ রাখলে সব কিছু বুঝতে সহজ হবে। তো কি বলছেন সৌরভ….!
ভারতীয় দলে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকবে সিরিজে অন্তত সাতটি সেঞ্চুরি করতে হবে। সবাই মিলে সেই কাজটা করলে ইংল্যান্ড পেরে উঠবে না। ভারতীয় দলে ভাল ব্যাটসম্যান আছে। ওপেনিং থেকে শুরু করে আট নম্বর পর্যন্ত সবাই ব্যাট করতে পারে। তাই আশা করাটা ভুল নয়। ৪০ বা ৫০ রানের ইনিংস খেললে হবে না। চাই বড় ইনিংস। সেঞ্চুরি বা তার থেকেও বড় কিছু। এমনটা এলে গিলদের কিছু চিন্তা করতে হবে না। যশ্বসী আগের টেস্ট সিরিজগুলিতে ভাল খেলেছে। কে এল রাহুলকে নিয়ে বলার দরকার নেই। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে শুরুতে ভাল পারফর্ম করছে। পারথে রাহুলের সঙ্গে যশ্বসীর পার্টনারশিপ ভারতীয় দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। পরে বিরাট এসে সেঞ্চুরি করে। এবং ভারত জেতে। বোলারদের সুবিধা হয়েছিল বোর্ডে বড় রান থাকায়। পরের টেস্টগুলিতে সেটা না হওয়ায় ভারত সিরিজ হেরে যায়। তাই এবারের সিরিজে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। প্রথমে ব্যাট করলে অন্তত ৪০০ থেকে ৪৫০ রান বোর্ডে অবশ্যই চাই। না হলে বুমরারা কি করে লড়াই করবে। বিশ্বাস করি, রাহুলরা সেটা করে দেখাতে পারবে।
দলের কান্ডারি গিল।
তিন নম্বরে মনে হয় সাই সুদর্শন খেলবে। আইপিএলে খুব ভাল খেলেছে। তবে আইপিএল আর টেস্ট ম্যাচ এক নয়। সেখানে উইকেটে পড়ে থেকে নিজেকে সেট করে নিতে হবে। কোন স্ট্রোকে রান আসতে পরে, সেটা বুঝতে হবে। হাতে প্রচুর সময়। উইকেটে একবার সেট হয়ে গেলে রান করা কঠিন হবে না। সাইয়ের টেকনিক ভাল। মনে হয় ও পারবে। তাছাড়া ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলার অভিজ্ঞতা আছে। পরিবেশ নিয়ে ভাবার দরকার হবে না। দরকার শুধু পরিস্থিতি বিচার করে খেলা। সেটা করতে পারলে বড় রান আসবে।
চার নম্বর সম্ভবত শুভমান খেলবে। এই জায়গায় শচীন ও বিরাট খেলত। সেই শূন্যস্থান কে ভরাট করবে! শুভমানকে ওপেনে বা তিন নম্বরে খেলতে দেখা যেত। ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে বড় রান এলেও বিদেশে সেভাবে সফল নয়। এবার শুভমান অধিনায়ক। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার আগে নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাবতে হবে। ওর বড় ইনিংস খেলর ক্ষমতা আছে। তাই ওর কাছ থেকে আশা করা যেতে পারে সিরিজে বড় রান করবে।
পাঁচ নম্বরে কে! ঋষভ পন্থ নাকি করুন নায়ার। নায়ার আটবছর পর জাতীয় দলে এল। ওকে দল নেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচকদের পিছন ফিরে তাকানোর কথাকে আমি বিশ্বাস করি না। নায়ার গত মরশুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক রান করেছে। ইংল্যান্ডে ভারতীয় এ দলের হয়ে ডবলও করেছে। ওকে টেস্টের বাইরে রাখা যাবে না। তবে ঋষভের উপর আমার আস্থা আছে। বিদেশের মাঠে অনেক বড় ইনিংস খেলেছে ঋষভ। সে ইংল্যান্ড হোক বা দক্ষিন আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া হোক, সব জায়গায় রান করেছে। বড় রান করার ক্ষমতা ওর আছে। সিরিজে ওর কাছ থেকে দুটি সেঞ্চুরি আশা করছি। এবং সেটা হলে ভারত সিরিজে ভাল রেজাল্ট করবে।
এবার বোলিংয়ের কথায় আসি। সবার আগে বুমরার কথা বলতে হবে। জানি না পুরো সিরিজ খেলতে পারবে কিনা! না পারলেও ওকে দিয়ে দিনে ১২-১৩ ওভারের বেশি বল করানো ঠিক হবে না। এখন দলের প্রযোজনে ২০ ওভার বল করতে হলে তিনটি টেস্টেও ওকে পাওয়া যাবে না। বুমরা উইকেট নেবে। ওর পাশে থাকবে বাকিরা। সিরাজ আছে। অর্শদীপের উপর আমার ভরসা আছে। বাঁহাতি অর্শদীপ ইংল্যান্ডে সফল হতে পারে। আছে শর্দুল ঠাকুর। প্রসিদ্ধ কৃষ। তবে ও কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এখন দেখতে হবে বুমরার পাশে ওরা নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারে। যদি পারে তা হলে ভারতকে চিন্তায় পড়তে হবে না। মনে রাখতে হবে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ বেশ ভাল। রুট থেকে শুরু করে দলের অনেকের বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা আছে। তবে ইল্য়ান্ডের বোলিং ইউনিট তেমন নয়। তরুন ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গড়া হয়েছে। এই সুযোগ ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাজে লাগাতে হবে। পারলে সিরিজে দারুন কিছু করে দেখাতে পারে গিলরা। তাই বলছিলাম, গোটা সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সাতটি সেঞ্চুরি করতে পারলে ছবি বদলে যাবে। এটাই গিলদের টার্গেট হওয়া উচিত।