ইতিমধ্যে অনেক রেকর্ড ভেঙ্গেছেন। আইপিএলে ইতিহাস গড়ার দিন (শনিবার রাতে জয়পুরে) প্রমান করলেন, সামনে আরও রেকর্ড তাঁরį পিছনে ছুটবে। তিনিই হয়ে উঠবেন ভারতীয় ক্রিকেটের মেগাস্টার। বলা যায় বৈভবও।
বয়স ১৪ বছর ২৩ দিন। রবিবার নানা আলোচনার সঙ্গে একটি দিন বাড়ল। জয়পুরের স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা ক্রিকেট প্রেমীরা দেখলেন, শচীন তেন্ডুলকরের মতো আরও একজন লিটল মাস্টারকে পেতে চলেছে টিম ইন্ডিয়া। এখন অপেক্ষা করার পালা। সেই সুরে সুর মিলিয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগ বলছিলেন, আগে ওর সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। শনিবার রাতে দেখলাম। কোথা থেকে কোথায় উঠে এল। এবার ঠিকভাবে লালন করতে হবে। তা হলে বৈভব সুর্যবংশী অনেক দূরে যাবে। বলতে অসুবিধা নেই ১৪-তে এমন হলে ২৮ বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
শেহবাগ শুধু নয়, বৈভবের ইনিংস দেখে আপ্লুত লখনউ সুপার জায়ান্টাসের অন্যম কর্তা সঞ্জীব গোয়েঙ্কা স্বয়ং। খেলার শেষে তিনি বৈভবকে কাছে ডেকে নিলেন। আদর করে গাল টিপে দিলেন। বৈভব যে ম্যাচ নিয়ে তাঁর চিন্তা কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কোথাকার ম্যাচ কোথায় গিয়ে শেষ হল। এটা ঘটনা যে বৈভব উইকেটে থাকলে রাজস্থানের ম্যাচ জিততে ২০ ওভার ব্যাট করতে হত না। তার আগেই জয়পুরে রাজস্থান পতাকা উড়িয়ে দিতে পারত।
এসব কথা বলে এখনই কি মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া হল। কেউ কি মনে করছেন যে বাড়বাড়ি হয়ে গেল! শচীন তেন্ডুলকর মুম্বইয়ের হয়ে রনজি খেলতে নেমে অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন। পরের কথা সকলেই জানেন। বিহারের বৈভব সূর্যবংশী মাত্র পাঁচটি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচের খেলেছেন। বিরাট কিছু রান নেই। সব্বোর্চ ৪১। কিন্তু জুনিয়র স্তরে জাতীয় দলের মাঠে নেমে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটিয়েছেন। প্রমান করেছেন তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়। পাকিস্তানের মাটিতে ১৬ বছরের তরুন যেদিন আবদুল কাদিরকে চার ছক্কা মেরে বুঝিয়েছিলেন, তিনি পায়ের তলার জমি পাকা করে এসেছেন। হঠাৎ করে এলাম, চলে গেলাম, এমনটা নয়। ভবিষ্যত সেটাই দেখিয়েছিল। বৈভবকে নিয়ে এখনই সেকথা বলার সময় আসেনি। কিন্তু বোঝা গিয়েছে, ট্যালেন্ট বা স্কিল কখনও হাওয়ায় উড়ে যায় না। বৈভব এসেছেন পায়ের নিচের জমি শক্ত করে। সহজে হারিয়ে যাওয়ার জন্য নয়।
আইপিএলে সর্বকনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে তিনি দারুন কিছু করেননি। তবু যা করেছেন, তা দেখে সবাই স্তম্ভিত। সবাই বৈভবের মানসিক শক্তির প্রশংসা করলেন। না হলে নিজের ইনিংসের প্রথম বলে যা করলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শার্দুল ঠাকুরের বল কভারে উপর দিয়ে বাউন্ডারি বাইরে ফেললেন। পরের ওভারে আভেশ খানকে একইভাবে লং অফের উপর দিয়ে গ্যালারিতে। বয়স কম। শরীরের আড় ভাঙ্গেনি বলে অনেকে নাক কুচকোবেন। কিন্তু সংক্ষিপ্ত ইনিংসে তিনটি ওভার বাউন্ডারি প্রমান করে দিল, বৈভব লম্বা রেসের ঘোড়া। বেশি সময় উইকটে থাকেননি। কিন্তু যতটা সময় ছিলেন, ততক্ষণ লখনউয়ের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। মার্করামের বল সামনে খেলতে গিয়ে ফস্কান। ঋষভ বল ধরে স্টাম্পড করে যেভাবে লাফালাফি করতে লাগলেন, মনে হল ম্যাচ বুঝি তাঁরা জিতে গিয়েছেন। ৮.৪ ওভারে ৮৫। এখানে প্রথম ধাক্কা খেয়ে রাজস্থান উঠে দাঁড়াতে পারল না। হেরে গেল দুরানে। বৈভব উইকেটে থাকলে রাজস্থান হয়তো জিতত। সেটা পড়ে ফলে আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। ভুল হয়ে গেল, এটা ভাবতেই চোখ ভিজে গেল। তাঁর কান্না দেখে অনেকের চোখ ভিজেছে। আর প্রাক্তন ক্রিকেটার রোহন গাভাসকর বলছিলেন, এদিনের কথা হয়তো কোনদিন ভুলবে না বৈভব। এই চোখের জল একদিন মুখে হাসি ফোটাবে। সেদিন ওর পিছনে ক্রিকেট ফ্যানরা ছুটবে। মনে হয় না সেদিন আর বেশি দেরি আছে।
আইপিএলে রাজস্থান দলের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়। এটাই বৈভবের এগিয়ে চলার পথ সহজ করে দেবে। কারন রোহিতদের হেড কোচ হওয়ার আগে জুনিয়রদের নিয়ে কাজ করতেন রাহুল। সবই তাঁকে স্যর বলে ডাকতেন। স্যরের ভালবাসায় দলের অনেকে নিজেদের তৈরি করে নিয়েছিলেন। সেই রাহুলের ইচ্ছায় বৈভব এখন আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসে। তাঁর সঙ্গে লম্বা চুক্তি দলের। এখানে থেকে নিজেকে মেজে ঘষে নিতে পারবে বৈভব।
আরও একটা ব্যাপার আছে। প্রথম শ্রেমীর ক্রিকেটে বিহারের হয়ে মাঠে নামলে লাভ হবে না। তারা নিতের দিকে খেলে। ভাল বোলারের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ কোথায়। এখন বিহার ছেড়ে অন্য কোনও রাজ্যে বৈভবকে নাম লেখাতে হবে। হয়তো বা রাজস্থানেই হতে পারে। লড়াই তখন সেয়ানে সেয়ানে হবে। এটাই বৈভবকে বড় আসবে খেলার জন্য তৈরি করে দেবে। রাহুল আছেন। তিনি নিশ্চয় সৎ পরামর্শ দেবেন। সেই পরামর্শ শুনে চললে বৈভব রাস্তা দেখতে পাবেন। দেখার বিযয়, বৈভবের গাড়ি কোন গিয়ারে চলে।