নাথিং ইজ ইমপসিবল, অনেকদিন আগে বিজ্ঞাপনে অনিল কুম্বলের কথাটি আবার যেন নতুন করে সামনে আসছে।
আরও আছে। ইদানীং অনুপম খেরের এক প্রোগ্রামের শিরোনামের কথা কী করে ভুলি! দুনিয়া মে সব কুছ হোতা হ্যায়…।
এই সব কথা মেনে নিলে কেকেআরের অন্দরমহলের ছবি কেন মানা যবে না! আইপিএলের গ্রুপ লিগে কেকেআরের বাকি ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে কেন জয় আসবে না। হাতের কাছে অনেক উদাহরন আছে। ২০১৪ সালে এবারের মতো শুরু করেও কেকেআর ট্রফি জিতেছিল। ২০২১ এর আইপিএলে এমনই অ্যাকশন রিপ্লে দেখার পর কেকেআর ফাইনাল খেলেছিল। সেবার অবশ্য ট্রফি হাতে ওঠে নি। অতীতে এমন কিছু ঘটাতে পারলে এবার রাহানেরা কেন কিছু করে দেখাতে পারবে না।
পারতে পারে। সোজা সাপটা বললে বলতে হয়, পারতেই হবে। না হলে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা হারিয়ে যাবেন। কে আর বলবে চ্যাম্পরা যাচ্ছে। ক্রিকেটাররা সবই জানেন। তাঁরা যে চেষ্টা করছেন না তা নয়। চেষ্টায় খামতি নেই। কিন্তু হচ্ছে না। এমন অনেক সময় হয়। আসলে ব্যাটিং ক্লিক করছে না বলে কেকেআর ডুবছে। ভেসে যাওয়া দলকে টেনে তুলতে ব্যাটসম্যানদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। না হলে সব শেষ। শনিবার ইডেনে রাহানেরা হেরে গেলে ধরে নিতে হবে এবারের মতো সব শেষ। তখন কেউ বিশ্বাস করবেন না যে বাকি পাঁচ ম্যাচে পাঁচটি জিতলে প্লে অফ খেলা সম্ভব। তবে এখনই অতদূর ভাবার দরকার নেই। একটা করে ম্যাচ ধরে এগোতে পারলে কাজ সুবিধা হবে।
প্রশ্ন উঠছে, কেকেআর কি শুধু ব্যাটসম্যায়নদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হারছে! সেটাই বা বলি কী করে। সাদা চোখে পরিকল্পনার অভাব দেখা যাচ্ছে। কাকে কখন ব্যাট করতে পাঠাবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে পজিটিভ ভাবনা নেই। না হলে গুজরাট ম্যাচে রাসেলকে কেন ডাগআউটে বসিয়ে দেরিতে নামানো হবে! তিনি কি ওভার প্রতি ১৫-২০ রান দরকার হলে মাঠে নেমে হাওয়ায় ব্যাট ঘোরাবেন! সেদিন রাসেলকে চার নম্বরে নামানোই যেত। তাঁর মতো ক্রিকেটারকে যত বেশি বল দেওয়া যাবে, ততই লাভ। এটা কেন বুঝতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। পাঞ্জাব ম্যাচে আশা করা যায় এমন ভুল হবে না। পজিটিভ ক্রিকেট খেলতে গেলে যা যা করার দরকার তাই করবে।
কদিন আগে মুল্লানপুরে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে বোলাররা দারুন পারফরম্যান্স করেছিলেন। ১১১ রানে পাঞ্জাবকে আটকে দেওয়ার পর নিজেরা কী করে ৯৫ রানে শেষ। এখানেই প্রশ্ন উঠে আসে। সেদিনও ম্যানেজমেন্ট অঙ্কে ভুল করেছিল। শোনা যাচ্ছে, ইডেনে বদলার ম্যাচে কেকেআরে নাকি বেশ কিছু বদল হবে। সেই বদলের উপর ভরসা রেখে কেকেআর জয়ের কথা ভাবছে। তো সেই বদল কী হতে পারে।
প্রথমে নাম উঠে আসছে রাসেলের! এমন ম্যাচে কী করে এটা সম্ভব! রাসেল রান পাচ্ছেন না। তাই তাঁকে বাইরে রাখ। বদলে পাওয়েলকে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। ডু অর ডাই পরিস্থিতিতে রাসেলকে বাইরে রেখে দল জয়ের কথা ভাববে। রাসেল রান পাচ্ছেন না। তো কে রান করছেন। এই তালিকায় অনেকের নাম উঠে আসবে। আইয়ার, রিঙ্কু, রামনদীপ, কারোর ব্যাট রান নেই। বদলের কথা ভাবা হলে এঁরা কেন দলে থাকবেন। রাসেলকে রেখে অন্যভাবে দল সাজানো যেতে পারে। ডিকক আগেই বাইরে গিয়েছেন। গুরবাজ গুজরাট ম্যাচে রান পাননি। তা হলে এই ম্যাচে বেঙ্গালুরুর সিসোডিয়াকে আনা যেতে পারে। প্র্যাকটিসে ম্যাচে তিনি ভাল ব্যাটিং করেছিলেন। তিনি এলে রাসেলের সঙ্গে পাওয়েলকেও নামানো যেতে পারে। আর কে আসবেন! ডাগআউটে কপিল দেবের মতো এমন কোন ক্রিকেটার তো বসে নেই। যিনি এসে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংও করে দিতে পারবেন। মনে রাখতে হবে পাঞ্জাব প্রথমে ব্যাট করে দুশো করে দিলে কেকেআর চাপে পড়ে যাবে। বৈভব খারাপ বল করছেন না। রানা সেভাবে চাপে ফেলতে পারছেন নাা। সব থেকে অবাক করার ব্যাপার এটাই যে নারাইনকে বল হাতে ভয়ঙ্কর হতে দেখা যাচ্ছে না। ব্যাটিংয়েও বড় রানই বা কোথায়! দলের একজন ব্যাটসম্যানকে শেষপর্যন্ত উইকেটে থাকতে হবে। সেই কাজটা করতে পারেন রাহানে। তিনি খারাপ খেলছেন না। তা হলে শেষ পর্যন্ত না থেকে কেন আউট হয়ে যাচ্ছেন। টিম মিটিংয়ে নিশ্চয় এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিরাট যা পারছেন, রাহানে সেই কাজটা করে দিলেই তো হয়। তা হলে সমস্যায় পড়তে হয় না। বেশি বদলে না গিয়ে পরিকল্পনা ঠিক রেখে এগোতে পারলে জয় আসবে।
রাহানেদের উল্টোদিকে আছেন শ্রেয়স আইয়ার। গত মরশুমে যে ড্রেসিংরুমে তিনি ছিলেন, কলকাতায় এসে তার ঠিক উল্টোদিকের ঘরে বসছেন। উইকেট নিয়ে তাঁদের ভাবনার কিছু নেই। শ্রেয়স জানেন, এখানে উইকেট কেমন হবে। এই ম্যাচে বাড়তি খিদে নিয়ে শ্রেয়স মাঠে নামবেন। আগের ম্যাচে রান পাননি। তাই শুধু জয়ই লক্ষ্য নয়, সঙ্গে বড় ইনিংসও খেলতে চাইবেন শ্রেয়স। পাঞ্জাব আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলে। পাওয়ার প্লেতে আটকে দিতে পারলে ওরা চাপ পড়বে। সঙ্গে দুটি উইকেটও চাই। না হলে কাজ কঠিন হবে। মাথায় রাখতে হবে পাঞ্জাব দলে চাহাল আছেন। আগের ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে যিনি কেকেআর ইনিংস ভেঙ্গেছিলেন। তেমন যেন ইডেনে না হয়। কেকেআরের হার মানে ইডেন ফাঁকা। সেটা নিশ্চয় রাহানেরা চাইবেন না।