বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি….! আরও অনেকের নাম তালিকায় উঠে আসবে। ইডেনে খেলা থাকলে এই সব ক্রিকেটারের নাম লেখা জার্সি গায়ে সমর্থকরা ভিড় জমান। এই ছবি অনেকদিন আগে থেকে চোখে পড়েছে। কিন্তু এবার পরিচিত ছবির বড়ই অভাব। না হলে দুহাজার টাকার টিকিট কেন বারশো টাকায় বিক্রি হবে! এ কোন আইপিএল! তা হলে কি ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গিয়েছে! সেকথাই বা বলি কী করে। চাহিদা আছে। তবে গ্যাটের পয়স খরচ না করে যদি ইডেনে ঢোকা যায়, তার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।
রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটেয় রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে কেকেআর। প্লে অফে যেতে হলে একদলের টার্গেট দুই পয়েন্ট। আর একদলের সামনে কোনও কিছু নেই। কারন রাজস্থান আগেই আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছে। হারানোর কিছু নেই বলে অনেক সময় এই দলগুলি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এটাই ভয় কেকেআরের। ইডেন জয় করতে না পারলে তারাও রাজস্থানের মতো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে। দিল্লি জয় দলে বাড়তি অক্সিজেন দিলেও টেনশন কাজ করছে। যদি না হয়, এই ভয় রাহানেদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে এই ম্যাচে কেকেআরের থেকেও রাজস্থানের দিকে সকলের নজর। কেন তা আলাদা করে বলার নেই। ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী এখন ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় বালক। চারটি ম্যাচ মাত্র খেলেছেন। তারই মধ্যে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন। কেকেআরের জয়ের পাশাপাশি বাংলা তাকিয়ে বৈভবের দিকে। তাঁদের চাহিদা বৈভবের কাছ থেকে একটা ভাল ইনিংস দেখা। কেকেআর জিতুক। আর বৈভব যেন মন ভরিয়ে দিতে পরে। বৈভব পারবেন ইডেন জয় করতে! পারবেন তিনি ইডেনের নায়ক হতে!
তাঁকে নিয়ে অজানা কিছু নেই। তাঁরই জন্য বিহারের সমস্তিপুর ভারতীয় ক্রিকেট মানচিত্রে ঢুকে পড়েছে। ৩৪. ১৬, ১০১ এবং ০ করে বৈভব শনিবারের বারবেলায় ইডেনে পা ফেললেন। আট বছর আগে এই ইডেনেই খেলা দেখতে আসা ছেলেটিকে দেখতে এবার মানুষ আসবে টিকিট কেটে। এটা ভাবতে কেমন লাগে! না, বৈভবকে মিডিয়ার থেকে আড়াল করে রেখেছেন রাজস্থান রয়্যালসের কর্তারা। তাঁরা চাইছেন না সাত তাড়াতাড়ি মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর মাথা ঘুরে যাক। মিডিয়া তাঁকে নিয়ে লিখবে। এটা তাদের পেশা। তাই আলাদা অনুরোধে লাভ নেই। কোচ রাহুলও চাইছেন না এসব কথা বলে মিডিয়াকে আটকাতে। তার থেকে বৈভবকে যতটা আড়াল করা যায়, ততই ভাল।
ইডেনে এসে চারদিক ঘুরে দেখলেন বৈভব। যা দিয়ে মাঠের বাইশ গজে শাসন করেন, সেই ব্যাট হাতে নেটে ঢুকলেন। নকিং করলেন। নেটে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে বেরিয়ে এলেন। ঢুকলেন পাশের নেটে। সেখানে থ্রোয়ারদের ছোঁড়া বলে খেললেন। সেই মেজাজ। সেই অ্যাকশন। সব কিছুর রিপ্লে দেখা গেল বৈভবেব কাছ থেকে। একজন ১৪ বছরের ছেলের ব্যাটের সুইং এত ভাল হয় কি করে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে নিজেকে পরীক্ষায় বসিয়েছেন। সেখানে লেটার মার্কস পেয়ে পাশও করেছেন। যিনি কামিনসদের সামলে এসেছেন, তাঁর সামনে রানা বা অরোররা কি বড় বাধা হয়ে দাঁড়তে পারবেন!
এই প্রশ্ন উঠছে। ইডেনের উইকেটে বল ছুটবে না। মন্থর উইকেটে স্ট্রোক খেলা কঠিন। আর বৈভব স্ট্রোক করে খেলতে ভালবাসেন। শুরুটা দেখে খেললে ভাল করবেন। এখানেই বৈভব ভুল করে ফেলেন। তিনি সব বল মাঠের বাইরে ফেলতে চান। টি২০ ফরম্যাট বলে মেরে উড়িয়ে দেব, এই মানসিকতা নিয়ে খেললে অনেক ক্ষেত্রেই বিপদকে ডেকে আনা হয়। বৈভবের বয়স কম। বুদ্ধিতে শান পড়লে মানসিক শক্তি বাড়বে। তখন এই সব ভুল হবে না। এখন দেখার অপেক্ষা ইডেনে বৈভব কি করেন। বাইশ গজের জমি যে তাঁর অপেক্ষায়।
কেকেআর দুটি ঘটনাকে ভয় পাচ্ছে। এক বৃষ্টিতে ম্যাচ ধুয়ে গেলে সব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর পিচ। এবার আইপিএলে অদ্ভুত এক জিনিস দেখা যাচ্ছে। হোম গ্রাউন্ডে কেউ ভাল রেজাল্ট করতে পারছে না। কেকেআরও তাই। দিল্লি ম্যাচের দলটিকে নিয়েই তারা মাঠে নামতে পারে। আগে ব্যাট করলে বোর্ডে দুশো রান তুলতে হবে। না হলে সুবিধা পাওয়া যাবে না। দিল্লির বিরুদ্ধে দুশো পার করে ম্যাচ জিতেছিল কেকেআর। ইডেনে আবার একটা দুশো রানের ইনিংস খেলতে হবে। তা হলে হয়তো কেকেআর ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়তে পারে। আরও একটা কাজ করতে হবে। আগে বলা হত শেহবাগকে তাড়াতাড়ি আউট কর। তা হলে ম্যাচ অর্ধেক তোমার পকেটে। বৈভব আর যাই হোক শেহবাগ নন। কিন্তু অনেকটা সেই মেজাজে খেলেন। তাই বৈভব উইকেটে থেকে গেলে অনেক কিছু হতে পারে। ম্যাচ জিততে হলে সেটা করতে দিলে চলবে না। কেকেআর কি শুনতে পাচ্ছে!