সিএসকে: ৫ উইকেটে ১৭৬ (২০ ওভার)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ১ উইকেটে ১৭৭ (১৫.৪ ওভার)
গ্রুপ লিগে এখনও ছটি ম্যাচ বাকি চেন্নাই সুপার কিংসের। ৮ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দশ দলের টুর্নামেন্টে তারা একেবারে তলানিতে। এই জায়গা থেকে প্লে অফ খেলার স্বপ্ন দেখা বাতুল ছাড়া আর কিছু নয়। তবু সিএসকে চাইছে পরের ম্যাচগুলিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভদ্রস্থ জায়গায় গিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে ৯ উইকেটে হেরে পুরস্কার মঞ্চে এসে ধোনি বলছিলেন, আমাদের প্রথম টার্গেট নিজেদের জায়গা একটু ভদ্রস্থ করা। দ্বিতীয় ও শেষ লক্ষ্য পরের আইপিএল নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করা। অকশনে আমরা কীভাবে যাব। কাদের দলে নেব। দল কীভাবে সাজাব। সেই সব নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে।
ধোনির কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছে, এবারের আইপিএল নিয়ে তাঁরা খুব একটা ভাবনার জায়গায় নেই। না হলে ৬টি ম্যাচ বাকি থাকতে কেন সামনের মরশুম নিয়ে কথা তুলবেন। তা হলে কি পরের আইপিএলেও ধোনি সিএসকের হয়ে মাঠে নামবেন! অ্ধিনায়ক ধোনি যে নতুন দল গড়ার কথাই যে শুনিয়ে গেলেন। একই সঙ্গে বুঝিয়ে গেলেন, এবারের দল মোটেই ভাল হয়নি। কেন হয়নি! এর ব্যাখ্যা ধোনিকেই দিতে হবে। কারন সিএসকে চলে ধোনির কথায়। তাঁর ইশারায়। সেই দলের দিতে তাকালে একটা জিনিস পরিস্কার যে অকশনে সিএসকে মোটেও দল গুছিয়ে নিতে পারেনি। খলিল আমেদ, পাতিরানাদের নিয়ে এখন আর মেগা মঞ্চে স্বপ্ন দেখা যায় না। তাঁরা একটা বা দুটি ম্যাচে কিছু একটা করে দেখাতে পারেন। ধারাবাহিকতা না থাকায় তাঁরা কখনই লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারেন না। পেসারদের পাশে স্পিনারদের দিকে নজর রাখলে একই ছবি দেখা যাচ্ছে। সাড়ে দশ কোটি টাকায় কেন অশ্বিনকে নেওয়া হল। সেই জাদেজা, অশ্বিনদের নিয়ে ছুটতে চেয়েছেন ধোনি। এই ফরম্যাটে তাঁরা অচল আধুলি। সত্যি, নিজেদের পুরনো জায়গায় নিয়ে যেতে হলে দলকে ঢেলে সাজাতে হবে। ঋতুরাজ চোটের কারনে দলের বাইরে চলে গিয়েছেন। ধোনি দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও কিছু করতে পারছেন না। করবেন কীভাবে! এমন দল নিয়ে ছোটা মুশকিল। তার উপর তিনি নিজেও আগে জায়গায় নেই। তাই চেন্নাই খোঁড়াচ্ছে।
অবাক লাগে এই দলটিই কিন্তু প্রথম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল। তা হলে প্রবাদ ভুল হয়ে গেল। দিনের শুরু থেকে বিকেলের ছবি এঁকে ফেলা যায়। ধোনিদের নিয়ে সেট পারা যাচ্ছে না। আট ম্যাচের মধ্যে ছটিতে হার। এই দল অতীতের ছবিকে ভুল প্রমান করছে।
অন্যদিকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দিকে তাকানো যাক। তাদের অবস্থা সিএসকের থেকেও খারাপ ছিল। মুম্বই অবশ্য এভাবেই শুরু করে। তারপর টপ গিয়ারে গাড়ি ছোটাতে শুরু করে। এবারও তাই হচ্ছে। জয়ের হ্যাটট্রিক করে মুম্বই অন্য দলগুলিকে প্রায় ধরে ফেলার জায়গায় চলে গিয়েছে। ৮ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট। বাকি ছয় ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট পেলে প্লে অফ খেলার কথা তারা ভাবতে পারে। এবং এট সফল হয়েছে টিম গেমের উদহারনকে সামনে এনে। আর রবিবারের রাতের ম্যাচে ওয়াংখেড়েতে রোহিত জ্বলে উঠলেন। ওভার প্রতি প্রায় ৯ রানে গেলে ম্যাচ জতে যাবে। সেখানে ২৬ বল বাকি থাকতে মুম্বই জিতে গেল ৯ উইকেটে। এমন জয়ে বোনাস পয়েন্ট থাকা উচিত। এ যেন সিএসকে-কে হোয়াইটওয়াশ করে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়া। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে রোহিতের দুর্দান্ত কামব্যাকে। তিনি সূর্যকে সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জেতালেন। ম্যাচের সেরা হয়ে সূর্য বলছিলেন, রোহিতের কথা শুনে ব্যাটিং করে লাভ হয়েছে। রোহিত লিজেন্ড। প্রচুর অভিজ্ঞতা। ইনিংসের মাঝে আমাকে বলল, নিজের খেলার বাইরে আসার দরকার নেই। নিজের খেলা খেলতে পারলে ম্যাচ বের করা সহজ হবে। আমি সেই চেষ্টা করেছি। তাই ৩০ বলে ৬৮ রান (৬টি বাউন্ডরি ও ৫টি ওভার বাউন্ডরি) করে রোহিতের পাশে সূর্যও নজরে পড়লেন।
এবার রোহিতের কথায় আসা যাক। এখন তিনি অধিনায়ক নন। তাই ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে নামেন। ওয়াংখেড়েতেও তাই হল। আগের সাত ম্যাচে দারুন শুরু করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। রবিবার সেটা হল না। পুরো ইনিংসকে নিজের মতো করে সাজালেন। ম্যাচ শেষ করে বাইরে এলেন। তাঁর ৪৫ বলে ৭৬ রানের (৪টি বাউন্ডারি ও ৬টি ওভার বাউন্ডারি) ইনিংসকে অন্য মাত্রায় নিয়ে ম্যচের সেরা হলেন। তিনি যেদিন খেলেন, সেদিন অন্য কারোর ব্যাটিং দেখতে ভাল লাগে না। আর ওয়াংখেড়ে মানে নিজের মাঠ। শৈশব, কৈশোর, সব কিছু এখানেই কেটেছে। সেখানে নিজের সেরাটা বের করে আনতে ভুল হয়নি। আসলে রোহিত সঠিক সময় নিজেকে ফিরে পেলেন। এবার হয়তো নীতা আম্বানির মুখের হাসি আরও চওড়া হয়ে উঠবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ সিএসকে ৫ উইকেটে ১৭৬ ( জাদেজা ৫৩ অপরাজিত, শিভম দুবে ৫০, ধোনি ৪, বুমরা ২৫ রানে ২)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১ উইকেটে ১৭৭ ( রোহিত ৭৬ অপরাজিত , সূর্যকুমার ৬৮ অপরাজিত)