মোহনবাগান-২ (সাহাল, সুহেল) কেরল ব্লাস্টার্স-১ (্শ্রীকুট্টান)
তরুণ তুর্কিরা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা দেখিয়ে দিল মোহনবাগান। প্রথম একাদশের কেউই বলতে গেলে নেই। প্রথিতযশা বিদেশিরা যে যার বাড়ি চলে গিয়েছেন। কোচ মলিনাও আপাতত রয়েছেন ছুটির আমেজে। অথচ পালতোলা নৌকোর তাতে কোনও সমস্যা নেই। একবার ভাসলে যে তরতরিয়ে এগিয়ে চলে, আবার তা প্রমাণ করে ছাড়লেন সাহাল আব্দুল সামাদ, দীপক টাংরিরা। বুঝিয়ে দিলেন, প্রথম একাদশ নেই তো কী হয়েছে, মোহনবাগান আছে। সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা মাঠে নেমেছে। তাই সহজে হার স্বীকার করে মাঠ ছাড়বে এমন ঘটনা ঘটবে না। কেরল ব্লাস্টার্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে পৌছে গেল সুপার কাপের সেমিফাইনালে। কোন কেরল ব্লাস্টার্স? যারা কিনা প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে এসেছে। লাল-হলুদ শিবিরকে একপ্রকার দঁাড়াতে দেয়নি যারা তারাই কিনা আত্মসমর্পণ করে বসল। প্রথমার্ধে সাহাল আব্দুল সামাদ ও বিরতির ঠিক পরেই সুহেল ভাটের করা গোলে শেষ চারের রাস্তা খঁুজে পেয়ে গেল মোহনবাগান।
যদিও শুরুটা করেছিল কেরল। বল পজিশন থেকে শুরু করে বারবার আক্রমণে উঠে এসে মোহনবাগানের রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করে গিয়েছে। তবে সহজ সুযোগ বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু পায়নি কেরল। অথচ ২২ মিনিটের মাথায় সাহাল আব্দুল সামাদ গোল করে খেলার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিলেন। ডান দিক থেকে উঠে এসে পাশ বাড়িয়ে ছিলেন সালাউদ্দিন। সেই বল যখন সাহাল ধরেন তখন তঁার পাশে কেরলের এক ডিফেন্ডার দঁাড়িয়ে। সাহাল চলতি বল সামনের দিকে নিয়ে এসে ডান পায়ের আলতো পুশে গোল করে চলে যান। ব্যস, এই গোলটাই যেন খেলার গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিল। যে মোহনবাগানের চেয়ে বল পজিশনে এগিয়ে ছিল কেরল সেই নোয়ারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে লাগলেন। কেরল দল আক্রমণ তুলে নিয়ে আসছিল ঠিকই। প্রশ্ন হল, গোল করবেন কে। গোল করার লোক হলেন একজন নোয়া সাদুই। যে নোয়া লাল-হলুদের মশাল একাই নিভিয়ে দিয়েছিলেন। সেই নোয়াকে শনিবার ওড়িশার মাটিতে তেমন খঁুজেই পাওয়া গেল না। বারবার প্রান্ত বদল করেছেন। চেষ্টা করেছেন মোহনবাগানের সীমানায় ঢুকে ত্রাস সৃষ্টি করতে। কিন্তু ওই পর্যন্ত। নোয়া বল ধরলেই ডাবল কভারিংয়ের কব্জায় পড়ে নাভিশ্বাস উঠেছে তঁার। ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। যে দু-একবার নিয়েছেন তা মোহনবাগানের রক্ষণের দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছে নয়তো ধীরাজ সিংয়ের বিশ্বস্ত হাতে জমা পড়েছে। ধীরাজ সিং বেশ কয়েকবার নিশ্চিত পতন রুখে দিয়েছেন। ফলে কেরল তেমন সুবিধে করতে পারেনি। তাছাড়া দ্বিতীয় গোলটা পেয়ে গেল মোহনবাগান বিরতির ঠিক পরেই। ফলে কেরলের মনোবল টোল খেয়ে গেল সেখানেই। আশিক কুরিনিয়ন বঁা দিক থেকে উঠে এসে যে ক্রশ বাড়ান তা থেকে বলের গতিমুখ ঘুরিয়ে দেন সুহেল ভাট। সেই বল জালে জড়িয়ে যেতেই কেরলের যাবতীয় জারিজুরি শেষ হয়ে গেল। যে কোনও কাজে সফল হতে গেলে প্রথমত দরকার পড়ে অদম্য জেদ। তারপর প্রয়োজন হয়, বাড়তি তাগিদ। মোহনবাগান দুটো ক্ষেত্রেই সফল। অদম্য জেদ ছিল বলেই বারবার মোহনবাগানের সীমানায় ঢুকেও তেমন সুবিধে করতে পারেনি। রক্ষণের জালে ধরা পড়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত তাগিদ দেখিয়েছেন আশিক, সাহাল, দীপকরা। তঁারা চলতি মরশুমে ছিলেন অনিয়মিত। তাই তঁাদের প্রয়োজন ছিল প্রমাণ করার। সেই প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই দুরন্ত ফুটবলের দৃষ্টান্ত রেখে গেল মোহনবাগান। কেরলের শ্রীকুট্টান যখন গোল করলেন তখন খেলা বলতে গেলে শেষ হয়ে গিয়েছে।