নাম ঘোষণার অপেক্ষায় সকলে যেন প্রহর গুনছিলেন। নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান অসীম রায় সচিব হিসেবে সৃঞ্জয় বোসের নাম ঘোষণা করতেই শুরু হল ফাটানো আতসবাজি। চিত্্কার, হৈ-হুল্লোড়ে ফেটে পড়ল মোহনবাগান ক্লাব ট্েন্ট। নতুন সচিব হিসেবে চলে এলেন সৃঞ্জয় বোস। প্রত্যাবর্তন ঘটল মাঝের কয়েক বছরের পর। সচিব পদে থাকা দেবাশিস দত্ত হয়ে গেলেন মুহূর্তের মধ্যে প্রাক্তন।
৯ তারিখ ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। সেইদিন সৃঞ্জয় বোস সচিব পদে মনোনয়ন জমা দিতেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তঁার সচিব হওয়া। বাকি ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। যেহেতু সেইদিন কেউ আর সচিব পদে মনোনয়ন জমা দেননি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠী যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। জানিয়ে দেওয়া হয়, মোহনবাগান ক্লাবে নির্বাচন হচ্ছে না। তঁারা কেউই চান না শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবে কাদা ছেঁাড়াছুড়ি হোক। তাই সেইদিন ঠিক হয়ে যায় সচিব হচ্ছেন সৃঞ্জয়।
শুক্রবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহার করার শেষ দিন। সেইদিন হকি সচিব পদে একজন সদস্য মনোনয়ন জমা দেওয়া সত্ত্বেও তা প্রত্যাহার করে নেন। ফলে নির্বাচন হওয়ার আর কোনও অবকাশ ছিলনা। বাকি ছিল স্রেফ নতুন কমিটির নাম নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যানের ঘোষণা করা। সেইমতো শনিবার বিকেলে ঘোষণা হতেই মোহনবাগানে সামনে তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি চলে এলো দায়িত্বে। যার প্রধান হয়ে গেলেন সৃঞ্জয় বোস।
সবকিছু ঠিক হল বটে, কিন্তু উভয়গোষ্ঠী কি একতার সুর ক্লাবে আনতে পারবেন? যেহেতু নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই দুই পক্ষ নেমে পড়েছিলেন ভোটযুদ্ধে। একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে কেউ ছাড়েননি। কলকাতা শুধু নয়, পাশাপাশি জেলাগুলোতে উভয়গোষ্ঠীর প্রচার ছিল তুঙ্গে। একে অপরের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করতে কেউ ছাড়েননি। তাহলে সেই গোষ্ঠী রাতারাতি এক হয়ে ক্লাবের শুভদিক সূচিত করবেন তা নিয়ে সন্দেহ জাগে বইকি। যদিও উভয়গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সময় গড়াতে শুরু করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন দেখার সেই সময় কবে নাগাদ আসে।
সচিব সৃঞ্জয় হলেন ঠিকই, তাহলে প্রধান প্রতিপক্ষ দেবাশিস দত্ত ক্লাবের কোন পদে আসবেন? নতুন কমিটি বসছে সোমবার। সেইদিন ঠিক হয়ে যাবে কার্যনির্বাহি কমিটির সদস্যরা দেবাশিসকে কোন পদে নিয়ে আসেন। সভাপতি হচ্ছেন দেবাশিস, এটা মোটামুটি ঠিক হয়ে আছে। বাকি শুধু সিলমোহর পড়া। সোমবার ক্লাবের কার্যনির্বাহি কমিটির সদস্যরা বসে ঘোষণা করে দেবেন দেবাশিসের নাম। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি টুটু বোস ব্রাত্য হয়ে গেলেন? তিনি তো হলেন মোহনবাগানের একটা জীবন্ত কিংবদন্তী। তঁাকে বাদ দেওয়ার অর্থ হল, দুর্গোপুজোয় দুর্গোপ্রতিমা বাদ দিয়ে পুজো করার মতো। সুতরাং তঁাকে তো অবশ্যই ক্লাবের কোনও পদে আনতে হবে। সভাপতি দেবাশিস হলে তঁাকে নাকি ক্লাবের চেয়ারম্যান করার জন্য দাবি উঠতে পারে। এখন দেখার শেষমেশ ব্যাপারটা কোথায় গিয়ে দঁাড়ায়। মোহনবাগানে নব নির্বাচিত কমিটি হল এইরকম———সচিব— সৃঞ্জয় বসু, সহ-সচিব— সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অর্থ সচিব সুরজিত্্ বসু, ফুটবল সচিব স্বপন বন্দে্যাপাধ্যায়, ক্রিকেট সচিব সম্রাট ভৌমিক, কোষাধ্যক্ষ— সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়, হকি সচিব-শ্যামল মিত্র। টেনিস সচিব— সিদ্ধার্থ রায়, যুব ফুটবল সচিব— শিল্টন পাল, অ্যাথলেটিক্স সচিব— পিন্টু বিশ্বাস, মাঠ সচিব— শাশ্বত বসু,
কার্যকরী কমিটির সদস্য:
মুকুল সিনহা, সোহিনী মিত্র চৌবে, সোমেশ্বর বাগুই, কাশীনাথ দাস, দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্ত ঘোষ, দেবজ্যোতি বসু, রঞ্জন বসু, পার্থজিৎ দাস, সঞ্জয় মজুমদার ও অনুপম সাহু।