ভাগ্যিস সেদিন ভাবনাটি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। না হলে এই দিনটা যে দেখা হত না। দুবছর আগে এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের ফোন পান করুন নায়ার। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়মিত খেলছেন। রানও করছেন। কিন্তু জাতীয় দলে ডাক আসছে না। হয়তো পারফরম্যান্স মনে ধরছে না জাতীয় দলের নির্বাচকদের। কিন্তু হাল না ছেড়ে নায়ার রোজ ছুটছেন ক্রিকেট মাঠে। এমনই দিনে ফোনটি এল। সেই প্রাক্তন ক্রিকেটার ফোনের অপর প্রান্ত থেকে নয়ারকে বললেন, অনেক তো হল। এবার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নাও। এখানে তোমার আর কিছু হবে না। তার থেকে বরং লিজেন্ড ক্রিকেট খেল। অনেক টাকা রোজগার করতে পারবে। আগামির কথা ভেবে চলার চেষ্টা কর।
নায়ার সব শুনলেন। ভেবে দেখবেন বলে ফোন কেটে দেন। কিন্তু অবসর নিয়ে ভাবার সময় পেলেন না। ২০১৭ সালে শেষবার জাতীয় দলের ক্যাপ মাথায় দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করলেও টেস্ট দলে ডাক আসছে না। তাই বলে টাকার জন্য লিজেন্ড ক্রিকেট খেলবে! না, এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন। মন থেকে সাড়া পেলেন আরও একবার চেষ্টা করবেন। দেখা যাক, শেষপর্যন্ত কি হয়।
কথায় আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। সেটাই হল। দুবছর পর জাতীয় দলে ডাক পেলেন নায়ার। শুধু ডাক পাওয়াই নয়, ইংল্যান্ডের মাঠে প্রথম টেস্টে দলে ঢোকার জায়গায় নিজেকে নিয়ে এলেন। এখন কি মনে হচ্ছে নায়ারের! ভাগ্যিস সেদিন ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। না হলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার সুযোগ আসত না। এমন কথা বলেননি। তবে এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে। হয়তো সব থেকে বেশি খুশি হয়েছিলেন জাতীয় দলের প্রথমদিনের প্র্যাকটিস শুরুর আগে কোচ গৌতম গম্ভীরের কথায়। ক্রিকেটারদের সার্কেলের মাঝে দাঁড়িয়ে কোচ বলেছিলেন, নায়ারের জন্য আমরা গর্ব করতে পারি। একজন ক্রিকেটার আটবছর পর আবার জাতীয় দলে ফিরে এল। কামব্যাক করা সহজ কাজ নয়। নিজেকে নিংড়ে দিতে হয়। ও সেটা করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে নির্বাচকদের চোখ খুলে দিয়েছে। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট নয়, এখানে এসে ভারতীয় এ দলের হয়ে ডবল সেঞ্চুরি করে টেস্ট দেলে ঢোকার অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছে। এটা কম নাকি! শুনে নায়ারের চোখ কি জ্বলে উঠেছিল। আনন্দে মন ভরে উঠেছিল! সেটাই যে স্বাভাবিক।
এমন অজানা কথা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। কোনও সাক্ষাৎকারে আগে বলেননি করুন নায়ার। মুখ খুললেন ইংল্যান্ডে পৌঁছে ভারতীয় সিনিয়র দলের হয়ে নেটে ঢোকার পর। ডেইলি মেল-কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অনেক অজানা কাহিনী টেনে আনলেন নায়ার। তবে সেদিন কোন প্রাক্তন ক্রিকেটারের ফোন তিনি পেয়েছিলেন, তা জানাননি।
এটা ঘটনা যে ২০২৪-২০২৫ ঘরোয়া ক্রিকেট মরশুম নায়ারের জীবন বদলে দিয়েছে। রনজি ট্রফি ও বিজয় হাজারে ট্রফির পারফরম্যান্স তাঁর হয়ে কথা বলেছে। মরশুমে মোট ৯টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। রনজি জিতেছেন ব্যাটিং গড় ৫৭ করে। বিজয় হাজারেতে ৩৫৭। ভাবা যায়! এ তো অবিশ্বাস্য। সেটাই করেছেন নায়ার। ভেবেছিলেন কিছুদিন আগে রোহিতদের খেতাব জয়ের অন্যতম সদস্য তিনি হবেন। না, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁর সুযোগ হয় না। না হয়ে ভালই হয়েছে। সেখানে সুযোগ না পেলে, পারফর্ম করতে না পারলে ইংল্যান্ডে জাতীয় দলের হয়ে আসা হত না। অপেক্ষা করার ফল পেলেন। এবার আরও একটি অপেক্ষা। টেস্ট দলে সুযোগ কি তিনি পাবেন! ২০২৩ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে কাউন্টি খেলেছেন। সেখানেও অনেক রান। ব্যাটিং গড় ৫০-এর উপর। তাই আশা করা যায়, ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে নায়ারের সমস্যা হবে না।
সব ঠিক আছে। এখন দেখার পালা লিডসে প্রথম টেস্টে নায়ার খেলার সুযোগ পান কিনা। আর পেলে কেমন ব্যাটিং করেন। সেদিকে তাকিয়ে ক্রিকেট মহলও।