ক্রিকেট জীবনের অন্ধকার দিন এত তাড়তাড়ি আসবে তা কে ভেবেছিলেন। এমন কি পৃথ্বী শ-ও নয়। কিন্তু গত দুবছরে তাঁর পারফরম্যান্স গ্রাফ এতটাই নিচে নেমে আসে যে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। সেই জায়গা থেকে উঠে আসতে নতুন লড়াই শুরু করেছেন। এই লড়াইয়ে পৃথ্বী কি জিততে পারবেন। পারলে তাঁকে আবার ক্রিকেট মাঠে পুরনো ফর্মে দেখা যাবে। নইলে সব শেষ।
এটা পৃথ্বী নিজেও জানেন। তাই বান্দ্রার নতুন বাড়িতে বসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অনেক কথা বলে ফেললেন। যা অনেকে বলতে চান না। এখানেই সৎ বলে মনে হল। কথা বলতে গিয়ে পৃথ্বী বারকয়েক বাবা প্রকাশকে টেনে আনলেন। বললেন, বাবা একটা কথা আমাকে বলেন- আমার বিশ্বাস তুমি আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে পার। তবে এই লড়াই পৃথ্বীর সঙ্গে পৃথ্বীর। এটা অন্য কেউ করে দিতে পারবে না। তোমাকেই লড়তে হবে। পাশের মানুষ পথ দেখিয়ে দিতে পারে। সেই পথ সহজ নয়। কঠিন পথ পার করে নতুন সূর্য তুমি নিজে দেখাতে পার।
বাবার এই কথা মোটিভেশনের কাজ করেছে আজকের পৃথ্বীর জীবনে। তাঁর নিজের উপর বিশ্বাস আছে। পাঁচ বছর আগে যেভাবে নিজেকে ক্রিকেটের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিলেন, এখন সেভাবেই নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন। বলছিলেন, মাস দুয়েক আগে শচীন স্যরের সঙ্গে দেখা হল। মাস্টার্স লিগ খেলার জন্য প্র্যাকটিস করতে এসেছিলেন। আমিও প্র্যাকটিসে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখা হতে বলেন, সঠিক ট্র্যাকে ফিরে আয়। আমার বিশ্বাস তুই আবার আগের মতো খেলতে পারবি। এটা আমাকে এগিয়ে যেতে টনিকের মতো কাজ করেছে। শচীন স্যরের বিশ্বাস আছে মানে তিনি এখনও ভরসা রাখেন আমার মধ্যে ক্রিকেট আছে। আমি সেই চেষ্টা করছি।
তিন বছর আগেও দিন আট ঘন্টা ক্রিকেট মাঠে ব্যস্ত রাখতেন। খেলতেন নিজের মেজাজে। তারও আগে ভারতীয় ক্রিকেটে একটা কথা বলা হত, আগামিদিনে ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা পৃথ্বী। কিন্তু তারপর কি এমন হল যে তিনি হারিয়ে গেলেন ক্রিকেট মাঠ থেকে। জাতীয় দল দূর অস্ত, আইপিএলেও তাঁকে কেউ কিনতে রাজি হলেন না। ৭৫ লাখ টাকা বেস প্রাইজেও অকশন থেকে বিক্রি হননি পৃথ্বী। এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। তিনি এতদিন নিজে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। এবার সব কিছু সামনে টেনে আনলেন। বললেন, এর জন্য আমিই দায়ি। বয়স বেসি নয়। অভিজ্ঞতাও কম। অনেক বন্ধু জুটে গিয়েছিল। কে ভাল বা কে খারাপ তা বুঝতে পারিনি। তাদের সঙ্গে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিতাম। ক্রিকেটকে দূরে ঠেলে এই চলাই কাল হয়ে উঠল। আমি ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগলাম। তখন বুঝতে পারিনি। কিন্তু জীবনের কালো অধ্যায় এভাবে দেখতে হবে তা ভাবিনি। বাবা সবসময় পাশে ছিল। তার আগে হতাশায় ডুবে গিয়েছিলাম দাদা চলে যাওয়ায়। তিনি আমাকে খুব ভালবাসতেন। কিন্তু সেই জায়গা থেকে আমাকে ধাক্কা দেওয়ার একজনকেদরকার ছিল। বাবা সেই কাজটা করল। আর আমি নিজে বুঝতে পারলাম, এভাবে চললে হারিয়ে য়াব। ক্রিকেট মাঠে কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। তারপর একদিন নিজেকে ঠলে তুলতাম। আমার এক বন্ধু আমাকে খুব সাহায্য করেছে। সে ক্রিকেট মাঠের লোক নয়। আমার থেকে সিনিয়র। ও আমাকে বোঝাতে শুরু করল। আআসলে নিজে বুঝতে না পারলে কোনও কিছু ঠিক হয় না। তারপর সেই দিন এল। আমি নিজেকে বদলে ফেলতে উঠে দাঁড়ালাম। আর এখন আমি অন্ধকার দিন থেকে বেরিয়ে এসেছি. মাঠে আগের মতো সময় দিচ্ছি। বন্ধু বলেও তেমন কেউ নেই। ক্রিকেট ছাড়া বাড়িতে বসেই বেশিরভাগ সময় কাটাই। এখন একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাকে আবার ফিরে আসতে হবে। তার জন্য লড়াই শুরু করে দিয়েছি।
তা হলে কি বন্ধুদের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলেন পৃথ্বী! না, তিনি মানেন না। বলেন, এমন তো অনেকের থাকে। আমারই দোষ। আমি ক্রিকেটকে ছেড়ে দিয়ে অন্য দুনিয়ায় হাঁটা শুরু করে দিয়েছিলাম। তাই নিজেকে দোষ ছাড়া অন্য কিছু দেখি না। নিজের উপর বিশ্বাস আছে। আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি আবার ফিরে আসতে পারব।