- রাজস্থান রয়্যালসের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের চোখে ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী কেমন ক্রিকেটার!
উত্তর আসবে একজন ভয়ডরহীন ক্রিকেটার। যে শুরু থেকে স্ট্রোক খেলতে ভালবাসে। যত বড় বোলারই হোক ন কেন, তার সামনে দাঁড়াতে ভয় পায় না। বরং তার বল মাঠের বাইরে ফেলে দিতে পছন্দ করে।
এই বয়সে রাহুল নিজেও এমন ক্রিকেট খেলতেন না। কিন্তু বৈভবের মধ্যে অসম্ভব ট্যালেন্ট দেখতে পেয়েছেন। যাকে ঠিকভাবে লালন করতে পারলে একদিন অনেক বড় ক্রিকেটার হতে পারবেন বৈভব। এর জন্য কোনও কৃতিত্ব রাহুল নিজে নিতে চান না। বলেন, প্রথমে ওর বাড়ির লোকেদের কৃতিত্ব দিতে হবে। শুনেছি ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠ বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। তারপর যাদের হাত ঘুরে উপরে উঠে এসেছে. তাদের কথাও বলতে হবে। ওর সব থেকে বেশি পাওয়া এনসিএ-তে এসে বিক্রম রাঠোর, সাইরাজ বাহুতুলেদের হাতে পড়া। ওদের কথা শুনে এগিয়ে এসেছে বলে বৈভব আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপর আমি হাতে পাই। তাই ওকে সামনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমি একা কৃতিত্ব দাবি করতে পারিনা। আমি পথ বাতলে দিয়েছি। সেই পথ ধরে ও ছুটেছে। মাঠে নেমে খেলতে হয়েছে বৈভবকে। সেখানে ও পুরো একা। কেউ টেনে নিয়ে যায়নি। তাই বাইশ গজের পুরো কৃতিত্ব ওর নিজের। সর্বভারতীয় এক স্পোর্টস চ্যানেলে কথা বলতে গিয়ে রাজস্থান রয়্যালসের কোচ রাহুল দ্রাবিড় একথা জানান। সঙ্গে বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে আরও অনেক কথা বলেন।
রাজস্থান ট্রায়ালে এক ওভার ব্যাট করে পাশ মার্ক পেয়ে গিয়েছিলেন বৈভব। তারপর তাঁকে নিয়ে এগিয়ে চলর রাস্তা দেখা শুরু রাজস্থানের। দলের ম্যানেজারকে বলে দেওয় হয়েছিল, বৈভবের বাড়ির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ভাবনা চিন্তা জানাতে। এবং পারলে অকশন থেকে তুলে নেওয়া হবে। সেভাবে সব কিছু এগোল। এবং সত্যি অকশন থেকে বৈভবকে পেয়েও গেল রাজস্থান। তারপর তাঁকে নিয়ে মাজা ঘষা। তিন মাস নাগপুরে হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে থেকে নিজেকে অনেক পালিশ করে নেন বৈভব। আইপিএল শুরু হওয়ার পর মাঠের বাইরে বসে থাকতে ভল লাগত না বৈভবের। কবে মাঠে নামতে পারবেন। এটাই মাথার ভিতর ঘুরত। অবশেষে সুযোগ এল। সঞ্জু স্যামসন চোট পাওয়ায় কোচ তাঁকে প্রথম একদশে নামিয়ে দিলেন। প্রথম দুই ম্যাচে বড় রান করতে না পারলেও আলোচনায় চলে এসেছিলেন। তারপর তৃতীয় ম্যাচে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্ব ক্রিকেটকে অবাক করে দেন। সেদিন জয়পুরের মাঠে বৈভবের সেঞ্চুরি দেখে কোচ রাহুল চরিত্র বিরেধী কাজ করে বসেন। পায়ের চোটের কারনে দুমাস হুইল চেয়ারে বসে ঘুরছেন। স্ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটছেন। কিন্তু বৈভব তাঁকে দাঁড় করিয়ে দেন। চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে ব্যালান্স হারিয়ে ফেলেছিলেন রাহুল। কোনওমতে নিজেকে ধরে দাঁড়িয়ে যা বলছিলেন তা হল-ইয়েস, ইয়েস…!
আকাশে ভেসে যাওয়র মতো অবস্থা থেকে আবার যেন মাটিতে নেমে এলেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে খেললেন মাত্র দুটি বল। কোনও রান না করে আউট হয়ে গেলেন। হতাশায় কেঁদে ফেলেন বৈভব। কিন্তু রাহুল তাঁকে সামলে নেন। ক্রিকেট এটাই। কখনও উপরে উঠবে। কখনও আবার নেমে আসবে। এটা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। রাহুল বলছেন, আমি চাই এভাবেই খেলুক বৈভব। অন্তত আরও দুবছর আমি ওকে এভাবেই দেখতে চাই। খেলতে খেলতে নিজেকে শুধরে নিতে পারবে। তখন বুঝবে কোন বল মারা উচিত, কোন বল শুধু ডিফেন্স করতে হবে. এখনই সব কিছু মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে মুশকিলে পড়বে। ওর সঙ্গে যশ্বসী আছে। এখন যশ্বসী সিনিয়র হয়ে গিয়েছে। একদিন ও বৈভবের মতো ছিল। বুঝে গিয়েছে এই সময়টা কীভাবে নিজেকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। এদের সবাইকে পাশে পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। সঙ্গে নিজেকে ডিসিপ্লিনের মধ্যে রাখতে হবে। তাহলে বৈভব নিজেকে আরও ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।