আরসিবি: ৯ উইকেটে ১৯০ (২০ ওভার)
পাঞ্জাব কিংস: ৭ উইকেটে ১৮৪ (২০ ওভার)
ইয়ে সালা কাপ নাম দু ।
কথাটির অর্থ-এবার কাপ আমাদের। হ্যাঁ, সেটাই হল। অপেক্ষার অবসান ১৮ বছরের মাথায়। ১৮ নম্বর জার্সির মালিকের বিরাট কোহলির হাতে উঠল ১৮ তম আইপিএল। এটাই তো স্বপ্ন ছিল। ২০০৮, আইপিএলের প্রথম বর্য থেকে সেই স্বপ্ন সামনে এসেছে। আবার হারিয়ে গিয়েছে। ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৬ আইপিএল ফাইনালে উঠে বিরাটরা একবারও বাজি জিততে পারেননি। অবশেষে অধরা স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিল।
১৯০ রান হাতে নিয়ে শুরুতে চাপের মধ্যে থাকলেও পাঞ্জাব ইনিংসের শেষ চার ওভার বাকি থাকতে বোঝা গিয়েছিল, আরসিবিকে কেউ আটকাতে পারবে না। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ৯০ হাজার দর্শকের মধ্যে ৮৫ হাজার ছিলেন আরসিবির। তাঁরা শুরু থেকে চেঁচিয়ে গিয়েছেন। খেলা শেষের দুই ওভার আগে জয় যখন নিশ্চিত, তখন বাউন্ডারি লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে বিরাট সামনে কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাঁর ঠিক পিছনে গ্যালারিতে বসা প্রাক্তন আরসিবি ক্রিকেটার এ বি ডিভিলিয়ার্সকে ইশারায় দেখাচ্ছিলেন, তাঁর দুচোখ জলে ভরে যাচ্ছে।
আচ্ছা চোখের জলের কোনও রং হয় কি! যদি হত, তাহলে বিরাটের চোখ দিয়ে বয়ে আসা অশ্রু গোটা স্টেডিয়ামে রামধনুর মতো ছড়িয়ে পড়ত। আর তাতেই হারিয়ে যেতেন আরসিবি সমর্থকরা। আরসিবির আর এক প্রাক্তন ক্রিস গেইল ও ডিভিলিয়ার্সকে দুপাশে নিয়ে বিরাট বলছিলেন, এই ম্যাচ যদি হেরে যেতাম, তা হলে কি যে হত তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই ছবি আমি কল্পনাও করতে পারছি না।
এই ভিড়ের মধ্যে আর একজনের কথা বলাই হয়নি। তিনি অনুষ্কা শর্মা। গ্যালারিতে টেনশন নিয়ে সারাক্ষন বসে ছিলেন। খেলা শেষে গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসে বিরাটকে জড়িয়ে ধরলেন। অনুষ্কা বেঙ্গালুরুর মেয়ে। আরসিবি সমর্থক। তার থেকেও বড় কথা বিরাট যেহেতু আরসিবির হয়ে খেলছেন, তখন তিনি তো আরসিবিকে সমর্থন করবেন। বিরাট বলছিলেন, ২০১৪ থেকে অনুষ্কা নিয়মিত মাঠে সে আমাদের সাপোর্ট করে এসেছে। শুধু আইপিএল নয়, যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটে নিজেকে নিংড়ে দিতে হলে এমন একজন মানুষকে পাশে দরকার। সে আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভরসা দেবে। আমি বাকিটা সামলে দেব, এই কথাটি যে কোনও ক্রিকেটারকে মোটিভেট করবে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
শুধু বিরাট নিয়ে কথা বয়ে যাচ্ছে। সেটাই স্বাভাবিক। যিনি ১৮ বছর অপেক্ষার পর সফল হলেন, তাঁকে নিয়ে তো কথা চলতে থাকবে। বিরাট আবার বলতে শুরু করেন যে জানি না বুধবার বেঙ্গালুরু গিয়ে আমরা কোথায় দাঁড়াব। গোটা শহর হয়তো অপেক্ষা করবে আমাদের জন্য। ওদের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। আর বলতে হবে আমার দলের ক্রিকেটারদের কথা। ড্রেসিংরুমে দলের সকলের মধ্যে আমি আলাদা খিদে দেখতে পেয়েছি। জয়ের জন্য সবাই ঝাঁপাতে তৈরি ছিল। তাই টানা ১৭টি ম্যাচ আমরা বের করে আনতে পেরেছি। হেরেছিও। ঘরের মাঠে তিনটি ম্যাচ কীভাবে হেরেছিলাম, তার উত্তর আমার কাছে নেই। যাক সবশেষে আমাদের হাতে ট্রফি এসেছে, এটাই তা বড় প্রাপ্তি।
এবার খেলায় ফিরে যাই। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আরসিবি ক্রিকেটাররা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। সল্ট, বিরাট, কেউ নন। এক সময় ১৫ ওভারে দলের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৩২। সেই জায়গা থেকে আরসিবি ১৯০ করল লিভিংস্টোন ও জিতেশের দাপুটে ব্যাটিংয়ে। রানটা ২২০ হলে চিন্তা থাকত না। কিন্তু ৩০ রান কম থাকায় কেউই নিশ্চিন্তে ছিলেন না।
তবু আরসিবি জিতল। জিতল বোলারদের দাপটে। সবার আগে বলতে হবে বাঁহাতি স্পিনার ক্রুণাল পান্ডিয়ার কথা। তিনি ৪ ওভারে ১৭রান দিয়ে ২টি উইকেট পান। ২৪ বলের মধ্যে ১২ বলে তিনি কোন রান দেননি। এখানেই ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল পাঞ্জাব। সঙ্গে অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার রান না পাওয়ায় আরসিবির জয় সহজ হয়ে যায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ আরসিবি- ৯ উইকেটে ১৯০ ( সল্ট ১৬, বিরাট ৪৩, ময়াঙ্ক ২৪, পাতিধার ২৬, লিভিংস্টোন ২৫, জিতেশ ২৪, অর্শদীপ ৪০ রানে ৩ উইকেট)
পাঞ্জাব কিংস- ৭ উইকেটে ১৮৪ ( ইনলিশ ৩৯, আইয়ার ১, শশাঙ্ক ৬১ অপরাজিত, ক্রুণাল ১৭ রানে ২)
ম্যাচের সেরা- ক্রুণাল পান্ডিয়া।