“অনেকে বিদ্রুপ করত। করত কটাক্ষ। কিন্তু আমার বাবা-মা, দাদা, সকলে সবসময় আমাকে খেলার জন্য সমর্থন করেছেন। তাই কে কী বললো না বললো তা নিয়ে কখনও ভাবিনি।” বক্তা রিম্পা হালদার। নামটা অনেকের কাছে অজানা। কিন্তু কলকাতা ফুটবল লিগ তথা কন্যাশ্রী কাপে খেলতে নেমেই করে ফেলেছেন ডাবল হ্যাটট্রিক। তার মানে একটা ম্যাচে ছয়-ছয়টা গোল। সোমবার শ্রীভূমি ফুটবল ক্লাব কন্যাশ্রী কাপে বালি গ্রামাঞ্চল ক্রীড়া সমিতিকে ৮-১ গোলে হারিয়েছেে। সেই ম্যাচে নদীয়ার হাসপুকুড়িয়া গ্রামের মেয়েটি দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে ফিফার স্লোগান ‘গো ফর গোলের’ লক্ষ্যে পৌছে যেতে হয়। তাই বলে রিম্পা কলকাতা ময়দানে খুব একটা অপিরিচিত তা মোটেই নয়। এক সময় ইস্টবেঙ্গলেও খেলেছেন। এবারও তঁার লাল-হলুদে খেলার জন্য অফার ছিল। কিন্তু শ্রীভূমির কোচ সুজাতা করের প্রতি এতটাই বদান্যতা যে কোনওদিন তঁাকে ছেড়ে যাবেন এমন সাহস তঁার মধ্যে নেই। আসলে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন সুজাতার প্রতি। তাই তো রিম্পা বলে ফেললেন, “এবারও ইস্টবেঙ্গল আমাকে খেলার জন্য বলেছিল। কিন্তু শ্রীভূমিতে একটা সেট টিম হয়ে গিয়েছে। তাই এখান থেকে চলে যাওয়ার কোনও মানে হয়না। তাছাড়া সুজাতা ম্যাডাম আছেন। হতে পারেন আমার ফুটবল জীবনের প্রথম কোচ অভীক বিশ্বাস। কিন্তু সুজাতা ম্যাডাম আমাকে দেখিয়েছেন কীভাবে খেললে গোল করা যায়। কীভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ভাঙতে হয়। তাই তিনি আমার ফুটবল জীবনে অনেক বড় স্থান নিয়ে আছেন। সেইজন্য তঁাকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমার ছিল না।”
নদীয়ার হাসপুকুড়িয়া গ্রামের মেয়েটি প্রথমে অ্যথলেটিক্স করতেন। কিন্তু অভীক বিশ্বাস তঁাকে অ্যাথলেটিক্স থেকে নিয়ে আসেন ফুটবলে। বুঝিয়ে ছিলেন, দৌড়নো নয়, ফুটবলই হল তঁার খেলোয়াড় জীবনে আসল জায়গা। তাই ফুটবলকে বেছে নেন। কিন্তু বাবা-মা, দাদা-দিদি ও রিম্পা মিলিয়ে পঁাচজনের সংসার। দিদির অবশ্য বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নদী। সেই নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে হালদার পরিবারের। তাছাড়া দাদা এখন কাজ করে কিছুটা সংসারকে সাহায্য করেন। কথায় বলে, ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কীরে’। তাই তো আর্থিক কষ্ট, না খেতে পাওয়া মেয়েটি কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। বরং ফুটবলকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছেন। আজ তার ফল হাতেনাতে পেতে পেলেন। জাতীয় ক্যাপে ডাক পেয়েছেন। ১ মে থেকে জাতীয় ক্যাম্প শুরু হবে। সেখানে গিয়ে রিম্পার প্রথম কাজ হবে, জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করা। রিম্পা বলছিলেন,“সাফ কাপ সিনিয়র দলের হয়ে খেলা হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া মায়ানমারে গিয়েছিলাম একটা প্র্যাকটিশ ম্যাচ খেলতে। মালদ্বীপ এসেছিল প্র্যাকটিশ ম্যাচ খেলতে ভারতে। তাদের সঙ্গে খেলে একটা গোল করেছিলাম। তাই এএফসি যোগ্যতামানের খেলায় যাতে ভারতের জার্সি পরে নিয়মিত খেলতে পারি তারজন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখবো না। যেভাবে হোক আমাকে খেলতে হবে। সেখানে গোল করতেই হবে, সেটাও আমার লক্ষ্য থাকবে।”
খেলছেন, বাংলা অনার্স নিয়ে পড়াশুনো করছেন। অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির হয়ে খেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। তবু মনের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা নেই। কোথাও যেন মনের অজান্তে ডুকরে ডুকরে ওঠে। একা থাকলে ভাবতে বসেন, মা-বাবারা আদৌ দু-বেলা পেট ভর্তি করে খাচ্ছেন তো। নাকি আধপেটা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সেইজন্য রিম্পা বলছিলেন, “বিশ্বাস করুন আমার কাছে একটা চাকরি খুব জরুরী। বাবা-মা, দাদার খুব কষ্টে দিন কাটে। ঠিকমতো খেতে না পেলে যা হয়। তাই চাকরি একটা পেতেই হবে। তারজন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছি না। চাকরি না পেলে পুরো সংসারটা ভেসে যাবে। ক্লাব খেলে যা পাই তা সংসার খরচের জন্য পাঠিয়ে দিই। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে।” কথাগুলো শেষ করার আগেই গলার স্বর যেন বুজে এলো। মনের মধ্যে ফুটবল খেলার স্বপ্ন থাকলেও বাস্তবটা এত কঠিন যে কী করবেন তাই তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। তাই তো হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, একটা চাকরির আশায়।

ইংল্যান্ড সিরিজে কে এল রাহুলকে অধিনায়ক করা যেতে পারতঃ মঞ্জরেকর
সঞ্জয় মঞ্জরেকর এমনই। কোন কথায় বিতর্ক দানা বাঁধবে, সবসময় সেটাই তিনি খোঁজেন। এবং তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক বেড়ে ওঠে। এই