ছবিটি দুবছরের আগের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ বছরের খরা কাটিয়ে ভারত টি২০ বিশ্বকাপ জিতল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাঠে আনন্দে ভেসে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। কোনও কিছু করতে বাকি রাখেননি তাঁরা। আবার সেদিনই টি২০ ক্রিকেট ফরম্যাট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। প্রায় কুড়ি বছরের টি২০ ক্রিকেট কেরিয়রে দাড়ি টানেন তাঁরা।
অনেকদিন পর আবার সেদিনে ফিরে গেলেন রোহিত। এক সাক্ষাৎকারে রোহিত ফিরে গেলেন বিশ্বকাপ জয়ের কথায়। বিরাট কোহলির ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংসকে কে ভুলবেন। তবে অ্যাঙ্কাারম্যান বিরাটের থেকেও তিনি এগিয়ে রাখলেন দলের অন্য এক ক্রিকেটারকে। বললেন, সেই ক্রিকেটার আসলে গেম চেঞ্জার। ওর জন্য আমাদের কাজ সহজ হয়ে গিয়েছিল।
কে সেই ক্রিকেটার! বিরাট নয় তা বলে দিয়েছেন রোহিত। তা হলে কি সূর্যকুমার যাদব! নাকি হার্দিক পান্ডিয়া, জসপ্রীত বুমরা বা অর্শদীপ সিং! না, এঁরা কেউ নন। রোহিতের ডায়েরি থেকে উঠে এল বাপুর নাম। তিনি ছিলেন বলে দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেদিনের ফাইনালে ভারতের কাপ জয় কিছুটা হলেও সহজ হয়েছিল। তাঁর ঝোড়ো ইনিংস না এলে ভারত প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান করতে পারত না। আর সেই রান তাড়া করতে নেমে দক্ষিন আফ্রিকার ইনিংস ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে থেমে যায়।
এবার সেই ক্রিকেটারের নাম জেনে নেওয়া যেতে পারে। তিনি হলেন অক্ষর প্যাটেল ওরফে বাপু। হ্যাঁ, এটাই ঘটনা। বিরাটদের পারফরম্যান্সের থেকেও রোহিতের কাছে অক্ষর বেশি ভোট পেয়ে গেলেন। রোহিত বলছিলেন, শুরুতে উইকেট হারিয়ে আমরা চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। একদিকে বিরাট ছিল বলে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকলেও মনে হয়েছিল, কাদের নিয়ে বিরাট লড়াই করবে। সেই সময় মাঠে নামে অক্ষর। উইকেটে গিয়ে কী খেলাটাই না খেলল অক্ষর। দক্ষিন আফ্রিকার বোলারদের উপর রোলার চালিয়ে দিল। ৩১ বলে ৪৭ রান করল চারটি ওভার বাউন্ডারি ও একটি বাউন্ডারির সাহায্যে। আর এতেই আমরা লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে গেলাম। টি২০ ক্রিকেটে ১৭৬ রান যে বিরাট কিছু তা বলা যাবে না। কিন্তু বোলারদের সামনে একটা লড়াই করার মতো রান তুলে দেওয়া দরকার ছিল। আমরা সেটা করতে পেরেছিলাম। বিরাট নিজের খেলা খেলে দিল। তবে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যা দরকার ছিল তা অক্ষর করল। ওর সামনে বেসামাল হয়ে পড়ল দক্ষিন আফ্রিকার বোলিং। মনে হয়েছিল, এই জায়গা থেকে আমরা ম্যাচ জিততে পারব।
আসলে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর ভারতীয় দল কোনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি। তাই দলের উপর চাপ ছিল। সেই চাপেই কিনা জানা নেই, ফাইনালে শুরু থেকে ভারতীয় দলকে কেমন যেন অগোছালো লেগেছিল। রোহিত মেনে নিয়েছেন, হ্যাঁ, সেদিন দলের উপর একটা চাপ তো ছিল। কারন এর আগেও আমরা আইসিসি টুর্নামেন্টে ফাইনালে উছে হেরে গিয়েছি। তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বাড়তি খিদে দলকে চাপে রাখে। তারপরের কথা তো সকলের জানা।
অক্ষরের কথা বললেও বিরাট নিয়ে কিছু বলবেন না রোহিত। বলেছেন। ফাইনালের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ বিরাট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রোহিত বলেন, ফাইনালের আগে বিরাট সেভাবে নিজকে মেলে ধরতে পারছিল না। তবে যখন দরকার পড়ল, তখন নিজেকে উজার করে দিল। যদি তুমি প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মার, তা হলে তুমি দারুন শুরু করেছ। সবই এটাই চায়। তবে এই সব ম্যাচে অভিজ্ঞতা কাজ করে। আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। চিন্তাভাবনায় লাগাম দিতে হয়। সেই ম্যাচের মধ্যে শুধু থাকতে হয়। আমি বিশ্বাস করি, সেদিন বিরাট এটাই করেছিল। ভেবেছিল আজ আণার মনোযোগী হওয়ার দিন। আগে কী হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। তাই ও একটা অসাধারন ইনিংস খেলতে পেরেছে। শুধু নিজের ইনিংসই নয়, অক্ষরের সঙ্গে অসধারান একটা জুটি গড়তে পেরেছে।