আর নয়। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন রোহিত শর্মা।
বিশ্ব ক্রিকেটে খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইডেনে বসে শুনলেন জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত।’
আর হেড কোচ গৌতম গম্ভীর! রোহিতের অবসর ঘোষণার পর তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘এ মাস্টার, এ লিডার, এ জেম।’
এক লাইনে লেখাটি শেষ করা যেত। কিন্তু সেটা হচ্ছে কোথায়! আইপিএলের মাঝে যে বিস্ফোরন ঘটালেন হিটম্যান। বুধবার রাতে নিজের ইনস্ট্যাগ্রামে চার লাইনের বক্তব্যটি কত যে কঠিন তা মেনে নিতে সত্যিই কষ্ট হয়। বিশেষ করে রোহিতকে যাঁরা ভালবাসেন, যাঁরা ভরসা করেন, তাঁদের কাছে এটা বিস্ফোরেনর থেকে কোনও অংশে কম নয়।
তো দেখে নেওয়া যেতে পারে ইনস্ট্যাগ্রামে রোহিতের চর লাইনের বক্তব্যটি কি। তিনি লিখেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আপনাদের বলতে চাই যে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবর নিচ্ছি। দেসের হয়ে খেলা সত্যিই গর্বের ব্যাপার। বছরের পর বছর ধরে আমার পাশে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। টেস্ট থেকে সরে গেলেও আমি ওয়ান ডে ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাব।
এখানেই শেষ। কিন্তু এই লাইনগুলি লিখতে গিয়ে রোহিতের বুক কি একবারও কাঁপেনি! চোখ ভিজে যায়নি! হয়তো গিয়েছে। লম্বা সফরের সংগ্রাম তো চার লাইনে প্রকাশ করা যায় না। রাগ, অভিমান বা ক্ষোভ, কোনওটাই লেকার মধ্যে ছিল না। নিজেকে অনেক ধরে রেখে কথাগুলি জানিয়ে দিয়েছেন। মাঠের আক্রমনাত্মক মেজাজ লেখায় নেই। একটা শব্দ এ নিয়ে ব্যবহার করেননি। এখানেও টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজে খেলে গেলেন। হিটম্যান কথাটি তিনি কি ভুলে গিয়েছিলেন!
হবে হয়তো। এই মুহূর্তে সিডনিতে রোহিতের সাক্ষাৎকারটি মনে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে চূড়ান্ত ব্যর্থ রোহিতকে নিয়ে তখন কাঁটছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বলাবলি শুরু হয়েছে এবার রোহিতের টেস্ট ক্রিকেট তেকে সরে দাঁড়নো উচিত। সিডনি টেস্টে দল থেকে নিজেকে সরিয়ে তিনি বলেছিলেন, কারোর কলমের খোঁচায় আমর ক্রিকেট জীবন শেষ হতে পারে না। টিভি চ্যানেলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে নিয়ে নানা কথা বলে টেস্ট ক্রিকেটের কেরিয়র শেষ করা যায় না। আর ব্রডকাস্টারদের কথাতেও আমি নিজেকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমি অনেক অভিজ্ঞ। দুই বাচ্চার বাবা। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারি। যেদিন চলে যাব, সেদিন কাউকে কিছু বলতে হবে না। শেষের লাইন আমি নিজে লিখতে পারব।
সেটাই করলেন। কাউকে কোনও সুযোগ দিলেন না। আইপিএলের মাঝে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা নিজেই জানিয়ে দিলেন। সিডনি থেকে দেসে ফিরে আসার পর ভারতীয় দল টেস্ট ক্রিকেটে খেলতে নামেনি। সাদা বলের ক্রিকেটে খেলতে নেমে নিজের সেরাটা দিয়েছেন রোহিত। টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছেন। জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। এত সাফল্য। তবু সরে যেতে হল। কেন! এ তো ধোনির মতো একটার পর একটা ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর নয়। তারপর ওয়ান ডে ক্রিকেটে খেলতে নেমে রংবাজি দেখিয়েছেন। কিন্তু টেস্ট থেকে সরে দাঁড়াবার নেপথ্যের কারন কি! কেন সরলেন রোহিত। চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট সিরিজ খেলতে। তার আগে হঠাৎ কেন অবসরের সিদ্ধান্ত! তা হলে কি টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে কোনও ইঙ্গিত পেয়েছিলেন রোহিত! এমন সিদ্ধান্ত তো একদিনে নেওয়া সম্ভব নয়। অনেক ভাবনা চিন্তা করে তারপর শেষ লাইনের শেষ শব্দ লেখা। সেটা করতে গেলে বেশি কিছুদিন ভাবতে হয়।
রোহিত নিশ্চয় ভেবেছেন। ইদানীং টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা তাঁর সামনে এসেছিল। তাঁরা কি চাইছেন তা জানতে পেরেছিলেন রোহিত। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান অজিত আগারকর মুম্বইয়ের ছেলে। তাঁর সঙ্গে রোহিতের সম্পর্ক ভাল। নিশ্চয় রোহিতকে এই ভাবনা ভাবতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। তিনি ইংল্যান্ডে দলের অধিনায়ক হচ্ছেন না। এই খবর রোহিতের কাছে আগেই চলে এসেছিল। অধিনায়ক না হলে তাঁকে কি দলে রাখা হবে। এই নিয়ে রোহিতের মনে প্রশ্ন ছিল। তাঁকে বাদ দেওয়া হতে পারে, এই ভাবনার মাঝে চলে এল অবসরের সিদ্ধান্ত। নিজে অপমানিত হওয়ার থেকে সরে যাওয়া ভাল। তাই হয়তো রোহিত টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেন।
আরও আছে। গত বছর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড সিরিজে রান পাননি। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও ব্যর্থ। টানা তিন সিরিজে রান কোথায়! দলে কেন রাখা হবে না. এই প্রশ্ন উঠলে শেষ তিন টেস্টের পরিসংখ্যান সামনে চলে আসবে। সেখানে সবাই মেনে নেবেন আগে কি করেছ সে সব না ভেবে বর্তমান নিয়ে চল। দেখবে তুমি দলে থাকার মতো কিছু করতে পারনি। নির্বাচকরা এটাই সামনে টেনে আনছেন। সঙ্গে কোচ গৌতম গম্ভীর তো আছেনই। তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না কে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে রান করেছেন। পারথ টেস্টে বিরাট সেঞ্চুরি করার পর রান কোথায়! রাহুল দারুন শুরু করে হারিয়ে গেলেন। নীতশ রেড্ডির ব্যাটে রান এসে থমকে গেল। দলের ব্যর্থতা তো শুধু রোহিতের কারনে আসেনি। কিন্তু তাঁদে নিয়ে এখনই কথা উঠবে না। কদিন পর উঠবে। রোহিত গেলেন। কদিন পর হয়তো বিরাটও সরে যাবেন। আসলে এই টি ম্যানেজমেন্ট দলে সিনিয়রদের জায়গা দিতে নারাজ। তা হলে তো তাঁদের রংবাজি চলবে না। রোহিত রান পাননি। এটাই এখন মুখ্য বিষয়। টানা তিন সিরিজে রান না পাওয়া বড় হয়ে উঠল।
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রোহিত নিশ্চয় অজিতের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলের অন্দরমহলের ছবি সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এটাই সেরা সময়। এবার চল বন্ধু, আর নয়।