সঞ্জয় মঞ্জরেকর এমনই। কোন কথায় বিতর্ক দানা বাঁধবে, সবসময় সেটাই তিনি খোঁজেন। এবং তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক বেড়ে ওঠে। এই তো কদিন আগে ( হেডিংলে টেস্টের মধ্যে) ইংল্যান্ডের একটি উইকেট পড়ার পর ভারত অধিনায়ক শুভমান গিলের ছুটে আসা দেখে সতীর্থরা প্রশ্ন করেন, সঞ্জয় এভাবে ছুটে আসা দেখে কার কথা তোমার মনে পড়ছে। অন্য সময় হলে তিনি হয়তো নিশ্চিত করে বিরাটের নাম বলে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। প্রথমে বললেন, রোহিতের কথা মনে পড়ছে। তারপর টেনে আনলেন অজিত ওয়াদেকরকে। তাঁর কথা শুনে সতীর্থরা হাসছেন। তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন সঞ্জয় পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে নভজ্যোত সিং সিধুর কাছে প্রশ্ন গেল। সিধু শুরুতেই বিরাটের নাম বললেন। শুনে সঞ্জয় তখন হাসছেন। কারন কিছুদিন আগে বিরাটকে নিয়ে কথা বলে তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তাই হয়তো তিনি এড়িয়ে গেলেন।
এমন মানুষ সঞ্জয়। এবার ভারত অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে উল্টোপথে হাঁটলেন। হেডিংলে টেস্টের শেষদিনে তিনি হঠাৎ বলে বসলেন, সিরিজে গিলের বদলে কে এলে রাহুলকে অধিনায়ক করা যেতে পারত। ৩৩ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে বলে কেন রাহুলকে সরিয়ে রাখা হবে। নির্বাচকরা লম্বা দৌড়ে যেতে চাইছেন বলে শুভমানের নাম নিয়ে এলেন। কিন্তু রাহুলের মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে অধিনায়ক করা হলে কী এমন দোষের হত। না, এ ব্যাপারে সঞ্জয়কে নিয়ে কোনও ঝড় ওঠেনি। তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কথা অনেকে মেনে নিয়েছেন। হতে পারে। কারন অধিনায়ক শুভমানকে অনেক না পসন্দ। তাই সঞ্জয় এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন।
কিন্তু সঞ্জয়ের কথায় যুক্তি ছিল। কেন হঠাৎ করে রাহুলের নাম তিনি করলেন। একটা ছবি আমাদের সকলের চোখের সামনে আসে। কোনও সেশন শুরু হওয়ার আগে ক্রিকেটাররা বাউন্ডারি লাইনের ধারে গোল হয়ে দাঁড়ান। তখন অধিনায়ক দলের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কথা বলেন। কি করতে হবে, কি করা দরকার, এসব নিয়ে কথা বলে উইকেটের দিকে সবাই ছুটে যান। প্রথম সেশন শুরুর আগে দেখা গেল, শুভমান ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বললেন। খেলা শুরু হল। কিন্তু প্রথম সেশনে ভারতীয় বোলাররা কোনও সাফল্য আনতে পারলেন না। লাঞ্চে কোনও উইকেট পড়ল না ইংল্যান্ডের।
দ্বিতীয় সেশন শুরুর আগে আবার ক্রিকেটাররা বাউন্ডারি লাইনের ধারে গোল হয়ে দাঁড়ালেন। এবার গিল নন, রাহুলকে দেখা গেল সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলছেন। কী কথা তিনি বলেছেন তা জানা নেই। তবে মাঠে বোলার বদল, কে কোন প্রান্ত থেকে বল করবেন, এসব রাহুল করলেন। বুমরা যে প্রান্ত থেকে বোলিং করেছিলেন, সেদিকে নিয়ে এলেন প্রসিদ্ধকে। অবাক করার মতো ব্যাপার এটাই যে প্রসিদ্ধ বল করতে এসে উইকেট পেলেন। একটা নয় দুওভারে দুটি উইকেট। তারপর শার্দুল এসে পরপর দুওভারে দুটি উইকেট নিলেন। খেলা হঠাৎ করে জমে উঠল। ইংল্যান্ডের চার উইকেট পড়ার পর অনেকে মনে করেছিলেন, এবার হয়তো ভারতীয় দল ম্যাচ ধরে ফেলবে। না, তা আর হয়নি। রুট ও স্টোকস দলকে টানলেন। স্টোকস আউট হওয়ার পর স্মিথ এসে রুটের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন। এবং দলকে ম্যাচ জেতালেন।
রাহুল যে শেষদিন লাঞ্চের পর বাকি সময় দল চালিয়েছিলেন তা নয়। বোলার বদল, কোন প্রান্ত থেকে কাকে আনলে ভাল হয়, এসব কথা গিলকে বলছিলেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফিল্ডিংও সাজিয়ে দিচ্ছিলেন। এই সব দেখে সঞ্জয় বলছিলেন রাহুলকে অধিনায়ক করা যেতেই পারত। কেন ওর কথা ভাবা হল না জানি না। নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন গিলের উপর। তাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ভাল কথা। আগামির কথা ভেবে এগোবার চেষ্টা আর কি। সেটা ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই না করলেই বোধহয় ভাল হত।