টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল নিয়ে বিসিসিআইকে নতুন করে ভাবতে বললেন রবি শাস্ত্রী। তঁার মতে, এমন সময়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হচ্ছে যার ঠিক আগে ভারতে হচ্ছে আইপিএল। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ফলে আইপিএল খেলতে এসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার পড়ে তার ব্যাঘাত হয়। এই ব্যাপারে ভারতীয় বোর্ডকে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ করলেন শাস্ত্রী।
দু-বছর আগে ২০২৩ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারত ২০৯ রানে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ভারতের হয়ে যারা খেলেছিলেন তঁাদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্রিকেটার আইপিএল খেলে গিয়েছিলেন। প্রথমত আড়াই মাসের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে আইপিএলে। দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয় ক্রিকেটারদের। তাই টেস্ট ফাইনালে খেলতে নামা অধিকাংশ ক্রিকেটার ফিট ছিলেন না। উল্টো দিকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা বেশ কিছু ক্রিকেটার সরাসরি টেস্ট ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। তঁাদের তুলনামূলক ভাবে অনেক ফিট বলে মনে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতীয় দলের অধিনায়ক সরাসরি আইপিএলকে দোষারোপ করেননি ঠিকই। কিন্তু ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রস্তুতি বিহীন খেলতে নামলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। “টেস্ট ফাইনাল খেলতে হলে কম করে ২০ দিনের প্রস্তুতির দরকার পড়ে। সেই সময় না দেওয়া হলে খেলার উপর প্রভাব পড়তে বাধ্য।” দু-বছর আগে টেস্ট ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পর একথা বলেছিলেন তখনকার ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
রবি শাস্ত্রী সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তঁার মতে, আইপিএল খেলার সময় সূচী পরিবর্তন করা হোক। নাহলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না। “বাস্তবের মাটিতে নেমে এসে একবার ভাববার চেষ্টা করুন। রোহিত যে ২০ দিনের কথা বলেছে তা হওয়া সম্ভব নয়। ২০ দিন সময় পাওয়া যাবে না। যদি ২০ দিনের অনুশীলন করতে হয় তাহলে আইপিএল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে। সুতরাং ক্রিকেটারকে ঠিক করতে হবে কোন প্রতিযোগিতা বেছে নেবে। এমন কী ভারতীয় বোর্ডকে এই নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার।” শাস্ত্রী বিসিসিআইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তঁার মতে, বিসিসিআই বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যদি এই দিকটা না ভাবে তাহলে ভবিষ্যতে টেস্ট ফাইনালে ভারত উঠলেও আবার ব্যর্থ হবে। “ভারতীয় বোর্ড এই নিয়ে আলাদা করে ভাবুক। যদি সবকিছু পর্যালোচনা না করে তাহলে আবার আমরা ঠোক্কর খেতে বাধ্য হব। দেখুন প্রতিবারে জুন মাসে আইপিএলের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হচ্ছে। যদি আমরা দেখি ভারতীয় দল ফাইনালে খেলার সুযোগ ফের পায় তাহলে আইপিএল নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে বিসিসিআইকে। তেমন হলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম জারি করতে হবে। নাহলে টেস্ট ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেও কোনও লাভ হবে না।”
আসলে শাস্ত্রী বলতে গিয়ে যা বলেননি তাহল, আড়াই মাস আইপিএল খেললে তার প্রভাব টেস্ট ম্যাচে পড়তে বাধ্য। ২০২৩ সালে টেস্ট ফাইনালে রোহিত, বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানেরা এমন কিছু শট খেলেছিলেন যা টেস্টে খেলা উচিত নয়। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বিপদ ডেকে আনেন। তাছাড়া ভারতীয় বোলারদের দেখা গিয়েছিল, তঁারা নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। আসলে আইপিএলে চার ওভারের বেশি বল করতে একজন বোলার পারেন না। আড়াই মাস চার ওভার বল করে যাওয়ার পর যদি টেস্ট খেলতে নামেন বোলাররা তাহলে কীভাবে একজন বোলার লম্বা স্পেলে বল করতে পারবেন। শাস্ত্রীর তোলা প্রশ্ন আগামী দিনে ভারতীয় বোর্ডকে চিন্তায় ফেলে দিয়ে গেল।