একসময় মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলিদের সঙ্গে ভারতীয় দলে কাটিয়েছেন। তারপর এক্সটেনশেন না পাওয়ায় দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তাঁর জমানায় ভারতীয় দলের ফিল্ডিংয়ের মান অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, এই দল বিদেশিদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে। মাঠে নেমে ক্রিকেটাররা তা প্রমানও করেছিলেন। সেই আর শ্রীধর অনেকদিন পর মুখ খুললেন। ঘুরিয়ে বলা যায় যে মুখ না খুলে থাকতে পারলেন না।
লিডস টেস্টে ভারত হেরেছে মঙ্গলবার। তারপর ৪৮ ঘন্টা কেটে গিয়েছে। তবু হারের ময়না তদন্ত চলছে। নানা জনে নানারকম কথা বলছেন। বিশেষ করে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা চুপ করে বসে নেই। তাঁরা বলছেন, এত ক্যাচ ফেললে ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। শুধু ক্যাচ ফেলা নয়, ভারত তার মাশুল দিতে গিয়ে ইংল্যান্ডকে বাড়তি দুশো রান দিয়েছে। তাই ইংল্যান্ডের পক্ষে ম্যাচ জেতা সহজ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে একমত নন শ্রীধর। বলছেন, এট ঘটনা যে ভারতীয় দল সাতটি ক্যাচ ফেলে ম্যাচ হাতছাড়া করেছে। এই সাতটির মধ্যে যশ্বসীর হাত থেকে পড়েছে চারটি ক্যাচ। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পর যশ্বসীকে নিয়ে যা প্রশংসা শোনা গিয়েছিল, তা নিমেষে হারিয়ে যায়। ভারতীয় দলের ব্যর্থতায় যশ্বসী হয়ে গেল ভিলেন। তাই নিয়ে কথা চলছে। কিন্তু কেন যশ্বসীর হাত থেকে এত ক্যাচ পড়ল তা নিয়ে কাউকে কি কথা বলতে শুনেছেন! কেউ সেকথা বলেননি। টেকনিকাল ব্যাপারটি সরিয়ে যশ্বসীকে আক্রমন করা হল। এটাই আমাকে হতাশ করেছে। তাই বলছিলাম, কমেন্ট্রি বক্সে বলে কথা বলা অনেক সহজ। কিন্তু মাঠে নেমে কাজ করা তার থেকেও কঠিন। যারা যশ্বসীকে নিয়ে এত কথা বলছেন, তারা কারনটি সামনে আনছেন না কেন! কেন র হাত থেকে এত ক্যাচ পড়ল। সামনে আনলে সবাই বুঝতে পারতেন কেন যশ্বসী ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থ।
সেদিকেই আলোকপাত করেছেন শ্রীধর। জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ হয়ে তিনি হিল্লি-দিল্লি ঘুরেছেন। জানেন মাঠে নেমে ফিল্ডারদের কোন মাঠে সমস্যা হতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা তিনি বলা য়ায় শেয়ার করেছেন। বলছেন, যশ্বসী ভাল ফিল্ডার। তার প্রমান এর আগে অনেক ম্যাচেই দিয়েছে। কিন্তু মেলবোর্ন ও লিডসে ফিল্ডারদের সমস্যা হয়। কেন হয়, সেদিকে তাকানো উচিত। মেলবোর্নকে সরিয়ে রাখছি। লিডসের কথা বলে নিই। যারা লিডসে খেলেছে, তারা জানে মাঠের ঢাল ফিল্ডারদের ঝামেলায় ফেলে দেয়। তার সঙ্গে আবহাওয়া তো আছে। যারা প্রথমবার ইংল্যান্ডে খেলতে যায়, তাদের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। ঠান্ডায় হাত জমে যায়। আঙ্গুলগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। ডিউক বল বলে উপরে উঠলে ভীষণ নড়তে থাকে। অন্য বলের মতো সোজা নেমে আসে না। স্লিপ বা গালিতে ফিল্ডিং করার সময় বল হাতে জমাতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে যায় অনেক ফিল্ডার। আর আউটফিল্ডে ফিল্ডিং করতে গেলে প্রধান সমস্যা আকাশে বল উঠতে সোজা নেমে আসার বদলে বল নড়তে থাকে। এক্ষেত্রে লাইন ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। ডাকেটের ৯৭ রানে তোলা ক্যাচের ভিডিও আর একবার দেখলে বোঝা যাবে বল নড়েছে বলে যশ্বসী সোজা ছুটে এসে কিছুটা ডানদিকে সরতে হয়েছে। তার উপর বল ভারি বলে হাতে জমাতে অসুবিধা হয়। লিডসের মাঠে এগুলিই ভারতীয় ফিল্ডারদের কাছে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার অবাক লাগে এটা ভেবে যে কেউ এ নিয়ে কোনও কথা বললেন না। ফিল্ডারদের সমস্যার কথা বললে সবাই বুঝতে পারতেন কেন বল হাতে রাখতে পারছে না। উল্টে তারা ক্রিকেটারদের কড়া ভাষায় সমালোচনা করলেন। কেন! এর উত্তর আমার কাছে নেই। আশা করি এজবাস্টনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের এই সমস্যা হবে না। তারা এর মধ্যে মানিয়ে নিতে পারবে। তাই ফিল্ডিং নিয়ে এই ভুল দেখা যাবে না।
শ্রীধরের কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এটাও ঘটনা যে ভারতীয় দল ইংল্যান্ড পৌঁছে দশদিনের ক্যাম্প করেছে। একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে। সেখানে এগুলি দেখে নিতে পারত। আর সব থেকে বড় এটাই যে লিডস ঝামেলায় ফেলতে পারে এটা আগে থেকে কেন ধরা হয়নি। তা হলে ভারতীয় দল আগে সেখানে যেতে পারত। কদিন আগে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, লিডসের মাঠের ঢাল ক্রিকেটারদের ঝামেলায় ফেলে দেয়। এটা আগে থেকে বুঝে নিতে না পারলে ক্যাচ ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। কুক বুঝলেন। গম্ভীররা কেন আগে থেকে ক্রিকেটারদের সতর্ক করলেন না। এখানেই অবাক লাগে। আউটফিল্ডে বল নড়ায় ক্যাচ ধরা কঠিন। কিন্তু স্লিপ বা গালিতে বল তো নড়ছে না। সেখানে সোজা আসছে। ডিউক ব ভারি বলে হাতে জমানো যাচ্ছে না, এটা কেউ মানতে চাইবেন না। তা হলে কী দাঁড়াল। এজবাস্টনে নেট করার থেকেও বেশি সময় দিতে হবে ফিল্ডিংয়ে। আর যেন ক্যাচ হাত গল মাটিতে না পড়ে।