চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের লাগোয়া গেস্ট হাউস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থাকলে অনেকেই সেখানে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখেন। সেবার অনেকেই সেই গেস্ট হাউসে ছিলেন। কোনও একটা টেস্ট ম্যাচ কভার করতে বেঙ্গালুরু যাওয়া। টেস্টের মাঝে একদিন সন্ধ্যেবেলা স্টেডিয়ামে দেখা গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের সঙ্গে। আড্ডা মারার জন্য তাঁকে গেস্ট হাউসে আসতে বললাম। ভিশি রাজি। তিনি চলে এলেন। তিনি থাকা মানে চলতি টেস্টে পর্যালোচনার পাশাপাশি ক্রিকেটের গল্পও শুরু। উঠল তাঁর অভিষেক টেস্টের কথাও। তারপর ভিশি যা বললেন, তা শুনলে অবাক হতে হয়।
১৯৬৯ সালের সম্ভবত নভেম্বরের কথা। কানপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট। সেখানেই বিশ্বনাথের অভিষেক। তিনি বলতে শুরু করলেন, একজন টেস্ট অভিষেক হতে চলা ক্রিকেটারের কাছে পরিবেশ ঠিকঠাক ছিল। ভারতের দু উইকেট পড়ল দেড়শো পার করার পর। উইকেটে গেলাম। কত স্বপ্ন চোখে। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙ্গে কয়েক মিনিট লাগল। কনোলির বোলিংয়ে ঠকে গিয়ে আউট। কোন রান করে ফিরে আসতে হল। হতাশা তখন ঘিরে ধরেছে। নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। শূন্যতে আউট মানে ভবিষ্যত অনিশ্চিত। ড্রেসিংরুমে সবাই এই বলে সান্ত্বনা দিল যে আরে কিছু হয়নি। পরের ইনিংসে ঠিক রান পাবে। কিন্তু নিজের মনকে মানাতে পারছিলাম না। তবে সব কিছু ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল কদিন পর। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গেলাম একটু চাপের মধ্যে থেকে। একশো রান ওঠার আগে আমাদের দুই উইকেট পড়ে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে খেলা ধরে একটা লম্বা ইনিংস খেললাম। আউট হলাম ১৩৭ রানে। প্রথম ইনিংস শূন্যর পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি। এর থেকে ভল পুরস্কার আর কি হতে পারে।
সত্যি আর কিছু হতে পারে না। বিশ্বনাথের কথা হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল। হেডিংলেতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমদিনের লাঞ্চের ঠিক আগে টেস্ট অভিষেক হওয়া সাই সুদর্শন আউট হলেন কোনও রান না করে। তাঁর হতাশ চলার দিকে তাকিয়ে বিশ্বনাথের সেদিনের কথা কেন জানি না মনে পড়ে গেল। ভিশি ভাই তারপর ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। সুদর্শনও নিশ্চয় পারবেন। কিন্তু তার জন্য অপো করতে হবে।
অনেকে বলছেন, যশ্বসীর দোষে আউট হয়ে গেলেন সুদর্শন। কেন বলছেন! তার ব্যাখ্যাও আছে। রাহুল (৪২) আউট হওয়ার পর সুদর্শন এলেন। ভারতের স্কোর বেশ ভাল জায়গায়। চাপের কোনও ছবি ভারতীয় ড্রেসিংরুমে নেই। সুদর্শন এলেন ভারতীয় ইনিংসের ২৬ নম্বর ওভারে। সেই প্রথম বলে যশ্বসী এক রান নিলেন। বোলার স্টোকসের সামনে এগিয়ে দিলেন সুদর্শন.। এখানেই অনেকের আপত্তি। যশ্বসী জানতেন সেটাই লাঞ্চের ঠিক আগের ওভার। একজন নতুন ব্যাটসম্যানকে আড়াল করে রাখার দায়িত্ব সিনিয়রের। ওপেন করতে যশ্বসী তখন সেট হয়ে গিয়েছেন। তিনি সুদর্শনকে আড়াল না করে খেলার জন্য এগিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে কিছু হল না। কিন্তু চার নম্বর বলে ভুল করে ফেললেন সুদর্শন। স্টোকসের তিন নম্বর বল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সুদর্শন সেই বল ফ্লিক করতে যান। বল প্যাডে লাগে। যশ্বসী এগিয়ে এসে সাবধান করলেন না। তাঁর বলা উচিত ছিল, এখনই এই শট খেল না। লাঞ্চের পর এসে খেলার চেষ্টা করব। পরের বল একইরকম। আবার ফ্লিক করতে গেলেন সুদর্শন। বল ব্যাটের কানায় লেগে অনের দিকে যায়। উইকেটরক্ষক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুহাতে ক্যাচটি ধরেন। ব্যস এখানেই দাড়ি পড়ে গেল অভিষেক লগ্নের ইনিংস। সুদর্শন ভুল করেছেন। তাঁর খেলা উচিত হয়নি। পাশাপাশি সিনিয়র ক্রিকেটার যশ্বসী দোষ এড়াতে পারেননা। তিনি স্টোকসের ওভারটি নিজে খেলে সুদর্শনকে আড়াল করতে পারতেন। না হলে আউটের আগের বল ফ্লিক মারতে গিয়ে সুদর্শনের প্যাডে লাগার পর যশ্বসী এসে কথা বলতে পারতেন। তাঁর কাছ থেকে এমন কিছু দেখা গেল না।
যাই হোক, হেডিংলেতে দ্বিতীয় ইনিংস খেলার সুযোগ পাবেন সুদর্শন। আশা রাখি, প্রাক্তন ক্রিকেটার বিশ্বনাথের মতো একটি দারুন ইনিংস সবাইকে উপহার দিতে পারবেন। সেদিকে আপাতত তাকিয়ে ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।