দারুন এক গল্প শোনালেন ওয়াংখেড়েতে ম্যাচের সেরা সূর্যকুমার যাদব ওরফে স্কাই। বুধবার মু্ম্বই ইন্ডিয়ান্স আইপিএলের ১৩ নম্বর ম্যাচ খেলে প্লে অফে পৌঁছেছে। ২০১১-১২তে রনজি অভিষেক হওয়ার পর সূর্যের বাড়ির সেলফে অনেক পুরস্কার জায়গা পেয়েছে। কিন্তু এবারের আইপিএলে ম্যাচ সেরা পুরস্কার নেই। ব্যাটিং ভালই করছিলেন। বলা যায়, তাঁর ব্যাটের উপর ভর করে মুম্বই বোর্ডে বড় রান তুলছিল। যেমন দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৭৩ রান করলেন ৪৩ বল খেলে। সঙ্গে দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে গেলেন। স্ত্রী দেবিশার দাবি ছিল, মাঠে দারুন কিছু করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার বাড়িতে আনুক সূর্য। সেটা শেষপর্যন্ত হাতে নিতে পেরে খুশি সূর্য। বলছিলেন, এই পুরস্কার আমার স্ত্রীকে উৎসর্গ করছি। এটা ওর হাতে তুলে দেব। ও আমকে বলেছিল এমন কিছু কর যার পর পুরস্কার তোমার হাতে না দিয়ে ওরা পারবেন না। তবে দলের কথাও মাথায় ছিল। সব শেষে দলকে জিতিয়ে পুরস্কার পেয়ে ভাল লাগছে।
এখানেই থেমে যাননি স্কাই। স্ত্রীর গল্প দিয়ে শুরু করলেও দলের কথায় যেতে দেরি করলেন না। বলছিলেন, এই ম্যাচ থেকে একটা ব্যাপার শিখলাম। এই ফরম্যাটে একজন ব্যাটসম্যান শেষপর্যন্ত উইকেটে থাকলে বড় রান বোর্ডে তোলা যায়। আমরা করতে পেরেছি। সঙ্গে দলের সাফল্য তো আছেই। লিগের এক ম্যাচ বাকি থাকতে প্লে অফে গেলাম। তবে শেষ ম্যাচ হাল্কাভাবে নিলে চলবে না। এই ছন্দ ধরে রাখতে হবে। এখন লড়াই কিন্তু আরও কঠিন হয়ে গেল।
এবারের আইপিএলে সূর্যকুমার দারুন ছন্দে। ব্যাট হাতে বড় একটা ব্যর্থ হতে দেখা যায়নি। ১৩ ম্যাচে করেছেন ৫৮৩ রান। দুবছর আগে করা ৬০৩ রানের নিজের রেকর্ড তিনি হয়তো ভেঙ্গে দেবেন। কারন হাতে এখনও বেশ কিছু ম্যাচ তিনি পাবেন। লিগের শেষ ম্যাচ তিনি খেলবেন পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে। তারপর প্লে অফ। তাই আইপিএলে তাঁর করা রান টপকে যাওয়ার সুযোগ আছে।
তবে সূর্য ও নমনের ( ৮ বলে ২৪ রান) পাশাপশি বোলারদের কথাও বলতে হবে। বুমরা তো আছেনই। তাঁর সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারও চমক দিলেন। খেলার শেষে বলছিলেন, ওয়াংখেড়ের লাল মাটির উইকেটে বল স্পিন করছিল। আমি বাড়তি স্পিন করানোর চেষ্টা করিনি। উইকেট টু উইকেট বল করেছি। সেটাই সাফল্য এনে দিয়েছে। সত্যিই তাই। ৪ ওভারে ১১ রান দিয়ে ৩ উইকেট। একসময় মন হয়েছিল, ম্যাচের সেরা হতে পারেন স্যান্টনার। এমন পারফরম্যান্সের পর অন্য কারোর কথা কি ভাবা যেতে পারে! কিন্তু পরে মনে হয়েছিল ভুল হয়ে গিয়েছে। সূর্যের দাপটে পুড়ে ছাই দিল্লি। তার জন্য মু্ম্বই ৫৯ রানে ম্যাচ জিতেছে। শেষ দুওভারে যে জায়গা থেকে ম্যাচ টেনে নিয়ে ১৮০ তে মুম্বই পৌঁছেছে, তার জন্য সূর্য তো কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন। তাঁর হাতেই তো সেরার পুরস্কার তুলে দেওয়া উচিত। সেটাই হয়েছে। মু্ম্বই ঘরের মাঠে জিতে প্লে অফে চলে গেল।
দিল্লি টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নামে। শুরুতেই তারা ধাক্কা দেয়। মুম্বইয়ের কোনও ব্যাটসম্যান নিজেদের সুনাম অনুযায়ী ব্যাট করতে পারেননি। রোহিত নয়, পান্ডিয়াও নন। ১৮ ওভারে মু্ম্বইয়ের রান ছিল ৫ উইকেটে ১৩২। সেটা কোথায় যেতে পারে। বড় জোর ১৫০। কিন্তু সূর্য ও নমন দুওভারে যোগ করলেন ৪৮ রান। ইনিংসের শেষে সূর্য অপরাজিত থাকলেন ৪৩ বলে ৭৩ রান করে। নমন ৮ বলে ২৪।
আর এটা হওয়াতে মুম্বইকে ম্যাচ জিততে কষ্ট করতে হয়নি। শুরুতে বোল্ট ও চাহার উইকেটে পেয়ে যেতে দিল্লি চাপে পড়ে যায়। রাহুল, পোড়েল, ডুপ্লেসিরা রান পেলেন না। লম্বা রানের পিছনে ছোটার মতো ব্যাটসম্যানও দলে ছিল না। অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল চোটের কারনে খেলতে পারেননি। তিনি থাকলে হয়তো মুম্বইয়ের ১৮০ রান তোলা কঠিন হয়ে পড়ত। যে কাজ কুলদীপ ও ভিপরাজ নিগমরা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে হাত ঘুরিয়ে অক্ষরও সফল হতে পারতেন। ভিপরাজ নিগম উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়েছেন। আর কুলদীপ ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ওঁরা পারলে অক্ষরও উইকেট নিয়ে পান্ডিয়াদের চাপে ফেলতে পারতেন। যা হয়নি তা নিয়ে এখন কথা বলে লাভ কি! সব শেষে দিল্লি ১২১ রানে ইনিংস শেষ করে ৫৯ রানে ম্যাচ হারল। অবাক লাগে যারা শুরুটা দারুন করে প্লে অফ খেলার আশা জাগিয়েছিলেন, তারা কি করে হঠাৎ করে ব্যাক বেঞ্চে চলে গেলেন। আসেল এটাই ক্রিকেট।