দুদিন আগে আমেদাবাদে ২০৩ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে কলকাতায় এসেছে আশিস নেহরার দল গুজরাট টাইটান্স (জিটি)। লিগ টেবিলে তারা সবার উপরে। ভারতীয় ক্রিকেট মহলে একটা কথা ঘুরে বেরায়, গুজরাট আইপিএলে নিজেদের জায়গা সিমেন্ট করে নিতে পেরেছে নেহরার জন্যই। দলের কর্তারাও একমত। ক্রিকেট স্ট্র্যাটেজিতে তাঁকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। পেস ও স্পিনের সমন্বয়ে গড়া দল নিয়ে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে তিনি তৈরি।
এমন একটা দলের বিরুদ্ধে সোমবার খেলতে নামছে কেকেআর। গুজরাট যেমন মানসিক দিক থেকে ভাল জায়গায়, তেমনই কেকেআর কিছুটা হলেও চাপে। শেষ ম্যাচে ১১২ রান তাড়া করতে নেমে তারা ৯৫ রানে অলআউট হয়। জেতা ম্যাচ মাঠে ছেড়ে দিয়ে আসায় রাহানেরা এখন চাপে। মুল্লানপুরে জিতে শহরে এলে অনেকটাই চাঙ্গা থাকতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু কী আর করা যাবে। ইডেনে হেরে গেলে আরও চাপে পড়বে কেকেআর। তাই যেভাবেই হোক, নতুন লড়াইয়ে তাদের জিততে হবে।
ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর অভিষেক নায়ার সহকারি কোচ হিসেবে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। কাজে নেমে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আলাদা করে বসে পড়েছেন। গম্ভীরের সঙ্গে কেকেআরের হয়ে কাজ করেছেন। দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের পালস তাঁর চেনা। কে কীভাবে ব্যাট করেন, তা নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে না। তিনি জানেন, রিঙ্কু সিং, বেঙ্কটেশ আইয়ার ও রামনদীপ বড় স্ট্রোক করে খেলতে ভালবাসেন। কিন্তু তাঁরা এখনও পর্যন্ত এই মঞ্চে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছেন না। নায়ার শুরুতে তাঁদের নিয়ে বসলেন। আলাদা ক্লাস করলেন। কোথায় অসুবিধা, কী করলে বড় রান আসবে, তা নিয়ে কথা বললেন। সবাই জানেন, ওঁরা রান পেলে কেকেআরের চিন্তা কমবে। কারন মিডল ওভারে রান না ওঠায় দলের চাপ বাড়ছে। শুরুতে নারাইন, রাহানেরা মোটামুটি ছন্দে আছেন। ডিকক একটি ম্যাচে রান করার পর হারিয়ে গিয়েছেন। সম্ভবত তিনি এই ম্যাচে বাইরে। তাঁর বদলে দলে আসতে পারেন রহমতুল্লা গুরবাজ। আগে কেকেআরের হয়ে ওপেন করেছেন। কিন্তু এবার তিনে ব্যাটে করছেন। তা হলে কি গুরবাজ তিনেই খেলবেন। তাই যদি হয়, তা হলে রাহানে ওপেনে। এই জায়গাটা পরিস্কার হল না। রবিবার দলের প্র্যাকটিসে রাহানে ছিলেন না। থাকলে আন্দাজ পাওয়া যেত। এই একটি জায়গায় বদল ছাড়া অ্ন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। রাসেল নিয়ে কথা উঠলেও এখনই তাঁকে বাইরে রাখা হচ্ছে না।
তবে এর বাইরেও কেকেআরের চিন্তা বাড়িয়েছে বৈভব অরোরার চোট। শনিবার প্র্যাকটিসে রাসেলের একটি শট ধরতে গিয়ে হাত চোট পান অরোরা। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছাড়লেও বলে গিয়েছিলেন, ম্যাচ খেলতে অসুবিধা হবে না। রবিবার তিনি মাঠে এলেন না। টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে জানা গেল যে অরোরার আপডেট কি। অরোরা ইডেনে হায়দরাবদের বিরুদ্ধে ২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। সেই পিচেই গুজরাটের বিরুদ্ধে খেলবে কেকেআর। পিচে এখনও সামান্য ঘাস আছে। এই পিচে শুরুতে পেসাররা ধাক্কা দিতে পারেন। সেটা কি রানা, জনসন, নোখিয়াদের দিয়ে করাতে হবে। কেকেআর পাওয়ার প্লে-তে স্পিনারদের নিয়ে আসে। সাধারনত বরুন এসে হাত ঘোরান। তিন স্পিনারে খেললে হয়তো মঈন আলি দলে ঢুকবেন। আর নারাইন তো আছেনই। কিন্তু নারাইকে আগের ফর্মে দেখা যাচ্ছে না। ব্যাটসম্যানরা পড়ে ফেলেছেন। তাই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে বরুনকে। আর মঈন খেললে তাঁকে শুরুতে কাজে লাগিয়ে ফায়দা নিতে চাইছেন রাহানে। ইডেন বলেই মন হয় মঈনকে দলে রাখা হতে পারেএ। তিন পেসারে না গিয়ে রাসেলকে কাজে লাগনো যাবে। সিত স্পিনারের সঙ্গে দুই পেসার। সঙ্গে রাসেল। এটাই স্ট্র্যাটজি হত পারে কেকেআরের। আর যাই হোক, কেকেআরকে বোর্ডে রান তুলতে হবে। আগে ব্যাট করলে বড় রান তুলে নিতে না পারলে বোলাররা কী নিয়ে লড়াই করবেন।
গুজরাট দলে রশিদ আছেন। কিন্তু তিনিও নারাইনের মতো অনেকাটই ম্লান। তারা ব্যাটিংয়ে জোর দিয়ে বড় রান তুলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলছে। গিল, সাই সুদর্শনরা শুরুতে রন তুলে মিডল অর্ডারের কাজ সহজ করে দিচ্ছে। যেমন আমেদাবাদে ব্যাটসম্যানরা বড় রান তাড়া করে ম্যাচ করে করে আনলেন। ইডেনে কেকেআর আগে ব্যাট করে বড় রানতুলে নিতে পারলে বাকিটা সামাল দিতে পারবেন বোলাররা। পরে ব্যাট করলে শুরুতেই বোলারদের কাজ করতে হবে। এটাই হল সোমবারের ম্যাচের রেসিপি।