সিএসকে ইনিংসের একাদশতম ওভার। পাঁচ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়ে চোয়াল চেপে লড়াই চালাচ্ছেন ব্রেভিস ও শিবম দুবে। ক্রমশ চাপ চাপ বাড়াচ্ছেন বরুণ চক্রবর্তী। সেই সময়ই এক ওভারে ৩০ রান দিয়ে ম্যাচ সেখানেই শেষ করে দিলেন বৈভব অরোরা। ম্যাচের শেষে নাইট অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে যতই বলুন, এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে,ব্রেভিস-শিবমরা আসলে ভাল ব্যাট করেছে, তবু প্রশ্ন তো কিছু ওঠেই! টি টোয়েন্টিতে ওভারে একটা-দুটো চার ছয় যে কোনও সময়, যে কোনও বোলারই খেয়ে যেতে পারেন, কিন্তু গোটা ওভার জুড়ে যদি শুধু চার-ছয়ের বন্যা বয়ে যায়, তাহলে কি সেই বোলারের মানসিকতা, টেম্পারমেন্ট, স্কিল নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না?
ইডেনের উইকেট খুব সহজ ছিল না। তবু ৬ উইকেট ১৭৯ রান করেছিল কেকেআর। মূলত রাসেলের ২১ বলে ৩৮ রানের ক্যামিও ইনিংসের সৌজন্যে। নুর আহমেদ ৩১ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বোঝালেন এই উইকেটকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়।
এরপর ফিল্ডিং করতে গিয়ে পাওয়ার প্লেতেই ৬০ রানে চেন্নাইয়ের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে কেকেআর। তা রান রেট তখনও যতই ভাল থাকুক না কেন! তারপরই ওই ঘটনা। ব্রেভিস-দুবের লড়াই এবং একটা ওভারে ৩০ রান! শুধু ম্যাচটাই বেরিয়ে গেল না, কেকেআরের প্লে অফের স্বপ্নও প্রায় শেষ। প্রায় কথাটা বলতে হচ্ছে নিছক অঙ্কের কথাটা মাথায় রেখে। ব্রেভিস আউট হয়ে গেলেও ধোনি-দুবে ঠান্ডা মাথায় ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিংয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন চেন্নাইকে। জয় নিশ্চত করার পরই ৪৫ রান করে আউট হন দুবে। বরুণ এদিনও অসাধারণ। ১৮ রানে নিলেন ২ উইকেট। কিন্তু উল্টোদিক দিয়ে ম্যাচ বেরিয়ে গেলে তিনি আর কী করবেন!
কতকগুলো প্রশ্ন এদিন বড় হয়ে উঠল। এক, নারিনের অ্যাপ্রোচ। শুধু ক্যাজুয়েল মানসিকতার জন্য নিজের উইকেটটা দিয়ে এলেন। বলটা মিস করার পর তাঁর পায়ে আটকে গড়িয়ে গড়িয়ে ধোনির দিকে যাচ্ছিল। তিন শুধু দেখছেন। শরীরী ভাষায় একটা জড়তা। য়খন ধোনি বলটা ধরে উইকেট ভাঙতে চলেছেন, তখন যেন সম্বিত ফিরল। তড়িঘড়ি ফেরার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
দুই ফিল্ডিংয়ে নাইটদের এত ক্যাজুয়েল মানসিকতা কেন? রিঙ্কু আর রাহানে ছাড়া সেই কামড়টাই কারও নেই। মানসিকতা, লড়াই, তাগিদ – এগুলো রিঙ্কুর কাছ থেকে বাকিরা শিখতে পারেন।
তিন, আড়াইটে বোলার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ জেতা যায় না, এটা কি আবার বুঝল কেকেআর? একটা বরুণ, একটা নারিন আর অর্ধেকটা রানা, ব্যাস!
আগের ম্যাচ থেকেই নিজের ছন্দটা খুঁজে পেয়েছেন দ্রে রাস। এদিন ম্যাচ জিতলে হয়ত তাঁকে নিয়েই আলোচনা হত। কিন্তু ডি কককে বসিয়ে রেখে গুরবাজকে খেলিয়ে যাওয়া কেন, এটা নিয়ে আলোচনা হবে না?
সবচেয়ে বড় কথা গৌতম গম্ভীর নাইট শিবির থেকে সেই খুনে মানসিকতাটাও বোধহয় সঙ্গে করে নিয়ে চলে গিয়েছেন। নাহলে ওখান থেকে এই ম্যাচ কেউ হারে! দিনের শেষে তাই মনে হচ্ছে, তফাৎ গড়ে দিচ্ছে গম্ভীরের থাকা আর না থাকাটাই!