আইপিএল অনেক ক্রিকেটারের কেরিয়র তৈরি করে দিয়েছে। সবাই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তা নয়। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরার পাশাপাশি আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হয়েছে। ১৪০ কোটি দেশের মানুষের মধ্যে থেকে ১৫ জন ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। সেই ১৫ জনের দলে ঢুকতে কতটা লড়াই করতে হয় তা সকলেই জানেন। আর যাঁরা জাতীয় দলে জায়গা করে নেন, তাঁদের আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। এমনই একজন কলকাতা নাইট রাইর্ডাসের বরুন চক্রবর্তী। একটু বেশি বয়সে ক্রিকেটে আসেন। এলেও জাতীয় দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলে ফেললেন তিনি। এখন ওয়ান ডে বা টি২০ ক্রিকেটে জাতীয় দল বাছাই করতে হলে প্রথমেই চলে আসবেন বরুন চক্রবর্তী। কীভাবে সম্ভব হল। সেকথাই তিনি বলেছেন রবিচন্দ্র অশ্বিনের ইউটিউব চ্যানেলে। অ্যাশ কি বাত অনুষ্ঠানে খোলামেলা কথা বললেন বরুন।
অশ্বিনের সঙ্গে আড্ডায় বরুন ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে সিএসকের নেট বোলার হলেন। যদিও তিনি সিএসকের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। তবু আইপিএলে প্রবেশের পথ তাঁর সামনে খুলে গিয়েছিল। চেন্নাই থেকে কলকাতায় এসে মাঠে দাপালেন। সেখান থেকে একেবারে জাতীয় দলে। এই লম্বা পথ মসৃন ছিল না। অনেক লড়াই করে তিনি নিজের জায়গা করতে পেরেছেন।
বরুন বলছিলেন, আমি দীনেশ কার্তিককে বল করেছিলম। যিনি আমার বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন পরে আমাক ফোন করবেন। দুবছর ব্যান থাকার সেবারই চেন্নাই আইপিএলের মূলস্রোতে ফিরে আসে। সেবার একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমি জানতে পারি টি এস মোহন সিএসকের নেট বোলারদের দেখাশোনা করছেন। একদিন আমি সিএসকে দলের বাসের পিছনে স্কুটার নিয়ে ছোটা শুরু করি। টিম মাঠে এসে ভিতরে চলে গেল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর মোহনকে ফোন করি। তাঁকে বলি, আমি একজন রহস্যময় স্পিনার। আমি সিএসকে দলের নেট বোলার হতে পারি। তিনি আমার কাছে জানতে চান কোন ডিভিসনে খেলি। পঞ্চম ডিভিসনে খেলি শুনে তিনি বলেন, আমরা প্রথম ডিভিসনের বোলারদের নেটে ডাকছি। তাই তোমার তো সুযোগ নেই। ঠিক আছে, তুমি কাল আমাকে ফোন কর।
পরেরদিন বরুন স্টেডিয়ামে যান। মোহনের সঙ্গে কথা বলে নেট বোলার হওয়ার সুযোগও হয়ে যায়। প্রচন্ড খুশি হয়ে পরেরদিন স্টেডিয়ামে যান। বরুন বললেন, নেটে গিয়ে দেখি সব বোলারই প্রথম ডিভিসনের। একজন শুধু নিচের ডিভিসনের বোলার ছিল। তার সঙ্গে কি হল জানি না, হঠাৎ করে তার কাছ থেকে বল নিয়ে আমার হাতে দেওয়া হল। আসলে মোহন দেখতে চাইছিলেন আমি কি করতে পারি। তখন আমার পিছনে প্রথম ডিভিসনের বোলার। নেটে তখন ব্যাট করছে ব্র্যাভো। সত্যি কথা বলতে কি বল হাতে নিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ি। তাই হয়তো প্রথম দুটি বল বিমার হয়ে গেল। কিন্তু তারপুর নিজেকে ফিরে পাই। সেদিন নেটে ব্র্যাভো, রায়না, ধোনিদের বল করি। ওরা মুগ্ধ হয়ে জানতে চেয়েছিল আমি আইপিএলে নাম লিখিয়েছি কিনা। কিন্তু সে সব তো কিছুই হয়নি। শুরুতে চমক দিয়েও আমাকে হতাশ হতে হয়েছিল। কিছু রাজনৈতিক কারনের জন্য সিএসকের বেস ক্যাম্প পুনেতে চলে যায়। সেখানেই প্র্যাকটিস চলে সিএসকের। নেট বোলার হিসেবে আমার যাওয়া হয় না।
তবে বেশিদিন মাঠের বাইরে বসে থাকতে হয়নি। দীনেশ কার্তিক আমাকে কেকেআরে নেট বোলার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। চেন্নাই থেকে কলকাতায় চলে এলাম। তখনও ভবিষ্যত নিয়ে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভাল লাগছে ক্রিকেট খেলতে। তাই নেট বোলার হয়ে লেগে থাকলাম।
২০১৯ সালে বরুন পাঞ্জাব কিংসে সই করলেন। যদিও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন না। একবছর সেখানে কাটিয়ে ২০২০ সালে কেকেআরে চলে এলেন বরুন। সেই থেকে দলের প্রধান চরিত্র। পরেরটা তো ইতিহাস। কেকেআরে খেলে নিজেকে প্রমান করলেন। সেখান থেকে জাতীয় দলে খেলার টিকি়টও হাতে চলে এল। এখন শুধু সামনের দিক চলা।