বৈভব সূর্যবংশী। এখন আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। নামেই পরিচিতি। বিশ্ব ক্রিকেট জেনে গিয়েছে ১৪ বছরের কিশোর আগামিদিনে ক্রিকেট মাঠের বাইশ গজকে শাসন করতে তৈরি হচ্ছে। আইপিএলে নিজের তিন নম্বর ম্যাচে কী খেলাই না খেললেন। প্রতিপক্ষে জাতীয় দলের সব বোলাররা রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সামনে ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলে কত রেকর্ড গড়ে ফেললেন। ৩৫ বলে সেঞ্চুরি। ৩৮ বলে ১০১ রান। তাঁর ব্যাটের দাপটে ২৫ বল বাকি থাকতে ঘরের মাঠে রাজস্থানের দুর্দান্ত জয়।
কথাগুলি কত সহজে লিখে ফেলা গেল। কিন্তু গলি থকে রাজপথ উঠে আসার কাহিনি তত সহজ নয়। একটা করে ধাপ পার করে আসা বৈভবের যাত্রা পথ বেশ কঠিন ছিল। তবে বৈভব ভাগ্যবান। চলার পথে পাশে পেয়ে যান ভিভিএস লক্ষণ, রাহুল দ্রাবিড়, বিক্রম রাঠোরদের। যাঁরা জাতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। তাঁরা পাশে ছিলেন বলেই বৈভব এত তাড়াতাড়ি আলো ছড়াতে পেরেছেন।
বৈভবের শুরুর যাত্রা এতদিনে অনেকে জেনে গিয়েছেন। অজানা থেকেছে তাঁর পরের পথ চলার গল্প। কীভাবে তিনি চলে এলেন একেবারে রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে। আইপিএলে সব দলেরই স্কাউটিং টিম আছে। রাজস্থান এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। তবে বৈভবকে খুঁজে বের করার কাজটি স্কাউটিং টিম করেনি। তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর কথার উপর ভরসা করে রাজস্থান এগিয়ে চলে। দলের ম্যানেজার রোমি ভিনডার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল, বিহারে বৈভবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে। যত তাড়তাড়ি সম্ভব ওকে যেন নাগপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও কথা বলি। ওকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার সব ব্যবস্থা যেন ওরা করে দেয়। সেভাবেই সব কিছু চলে। আমাদের হাই পারফরম্যান্স সেন্টার নাগপুরে। তাই ক্রিকেটারদের সেখানে আসতে বলা হয়।
বৈভব আসে। এটা নভেম্বরের ঘটনা। ট্রায়ালের দিন হাজির ছিলেন হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়, ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর এবং হাই পারফরম্যান্স সেন্টারের ডিরেক্টর জুবিন বারুচা। একে একে সব ক্রিকেটার নেটে ব্যাট করতে ঢোকে। ডাক পড়ে বৈভবেরও। এক ওভার ব্যাটিং করানো হয়। তারপর নেট থেকে বেরিয়ে আসতে বলা হয়। বৈভবের শুধু ব্যাটিং নয়, ওর স্কিল ও ট্যালেন্ট দেখে সবাই খুশি। সেখানেই পাশ বৈভব। আমাকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। বলা হয়,ওর বাড়ির সঙ্গে কথা বলতে। ওদের যেন জানানে হয় আমরা বৈভবের পারফরম্যান্সে খুশি। চেষ্টা করব অকশন থেকে তুলে নিতে। না পেলেও বৈভব আমাদের নজর থাকবে।
অকশন নিয়ে রাজস্থান সংশয়ে ছিল। কারন দিল্লিও বৈভবকে দলে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। শোনা যায়, দিল্লির ট্রায়ালেও নেমেছিলেন বৈভব। তারপর কি হয়েছে জানা যায়নি। তবে অকশনে কঠিন লড়াই হবে, সেটা আন্দাজ করেছিল রাজস্থান। লড়াইও হয়েছিল। শেষপর্যন্ত দিল্লির সঙ্গে লড়ে ম্যাচ জেতে রাজস্থান। অকশন থেকে কোটি টাকায় পেয়ে যায় বৈভবকে।
অকশনের পর আসল লড়াই শুরু বৈভবের। রোমি বলেন, অকশন শেষ হওয়ার পর নতুন ক্রিকেটারদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাদের নাগপুরে হাই পরাফরম্যান্স সেন্টারে প্র্যাকটিসে নামত হবে। ঠিক সময় সব ক্রিকেটার চলে আসে। এখানেই অন্যদের সঙ্গে তিন মাস কাটায় বৈভব। প্র্যাকটিসে রুটিং সহজ ছিল না। কঠিন প্র্যাকটিস সেরে নিজেদের তৈরি করার সুযোগ পায় বৈভব। তারর আইপিএল শুরু। বাকিটা তো ইতিহাস। তিন ম্যাচ খেলে বৈভব বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচনায় চলে এল। বৈভবই প্রথম নয়, আমরা অনেক ক্রিকেটারকে এভাবে জায়গাকরে দিয়েছি। যারা আগমিদিনে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমে নজড় কেড়েছে। আশা করি একদিন বৈভবের সামনেও সুযোগ আসবে। এটটাই আমাদের বড় পুরস্কার। আমাদের ভাবনা ও পরিশ্রম যে সার্থক, সেটা প্রমান হবে।